একজন মনের মত মানুষ চাই। মোবাইল নাম্বার ভিডিওতে দেওয়া আছে। Moner Moto Akjon Manush Cai | Episode#01
একজন মনের মত মানুষ চাই। মোবাইল নাম্বার ভিডিওতে দেওয়া আছে।
একজন মনের মত মানুষ চাই। মোবাইল নাম্বার ভিডিওতে দেওয়া আছে।
একজন মনের মত মানুষ চাই। মোবাইল নাম্বার ভিডিওতে দেওয়া আছে।
একজন মনের মত মানুষ চাই। মোবাইল নাম্বার ভিডিওতে দেওয়া আছে।
শাশুড়ি মায়ের সাথে রান্নাঘরে ইফতার বানাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার বাবা এসে বাড়ির দরজায় এসে ধপ করে বসে পড়লেন। শাশুড়ি মা সেটা খেয়াল করে আমাকে বলতেই আমি বাবার কাছে দৌঁড়ে এসে পাশে বসে শরীরে হাত বুলিয়ে দিতে থাকলাম। বাবার এই বিকেলের রোদে ঘেমে একাকার অবস্থা। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছিলো, দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো বাবা অনেক ক্লান্ত। শাশুড়ি রান্না থামিয়ে তিনিও বাহিরে এসে দাঁড়ালেন। বাবাকে তুলে ভেতরে বসিয়ে দিলাম। বাবার হাতে ব্যাগভর্তি রোজার বাজার। আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে, আমার বাবা কখনো এত বাজার একসাথে করে নি। আজ হঠাৎ এত বাজার দেখে অবাক না হয়ে পারছি না।
বাবা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে এক টুকরো হাসি মুখে ফুটিয়েই শাশুড়ি মাকে বলল-
" বেয়াইন এই বাজারগুলো আপনাদের জন্য, মেয়েকে তো কিছু দিতে পারি না রমজানেও যদি এতটুকু না দিতে পারি তাহলে কেমন দেখায় বলেন? আমার তো অনেক কিছু দেওয়ার সামর্থ নেই, এতটুকুই সামর্থ হয়েছে। মেয়েকে তো অনেক কিছুই দিতে ইচ্ছে করে কিন্তু কুলিয়ে উঠতে পারি না। বাড়িওয়ালী অসুস্থ তারও ওষুধ কিনতে হয় আমার জন্য ও কিনতে হয়। বড় মেয়ে গত সপ্তাহে কল দিয়ে বলল ইফতার পাঠানোর কথা, আমারই উচিৎ ছিল আগে আগে পাঠানো আর মেয়ে যেহেতু বলল তাই আর দেরি না করে মেয়ের বাড়ি পৌঁছে দিলাম। আমার দেওয়ার সামর্থ্য তো অনেক কম, বড় বেয়াইনকে বলেছি রোজা শেষ হতে হতে আবার কিছু পাঠাবো, উনার বাড়িতে নিয়ম ছেলের শ্বশুরবাড়ি থেকে প্রতি রোজায় ইফতার পাঠাবে।"
বাবা কথাগুলো বলে থামলেন। শাশুড়ি আমার দিকে ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে আছে। বাবার কথায় হয়তো উনি বিরক্ত হয়েছেন। বিরক্ত হবারই কথা ভুলটা আসলে আমারই। শাশুড়ি আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই আমি বুঝে গেলাম আমাকে কি করতে হবে। আমি রুমে গিয়ে আলমারি থেকে শাশুড়ির দেওয়া যত্নে রাখা টাকা আর বাবা-মায়ের জন্য কেনা শাড়ি পাঞ্জাবির প্যাকেট নিয়ে বেরিয়ে এলাম। আমি শাশুড়ি পাশে দাঁড়াতেই উনি আমার হাতে থেকে ওগুলো নিয়ে নিলেন। বাবার দিকে মুচকি হেসে বললেন,
" বেয়াই, মেয়ে তো দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু মেয়ে একদম গর্দভ। এই মেয়ের মাথায় কোন বুদ্ধি নেই। রোজার আগে আমি আর আপনার বেয়াই মার্কেট গিয়েছিলাম যেন রোজার মধ্যে এসবে সময় নষ্ট না হয়। দুজন মিলে বাড়ির সবার জামা-কাপড় আর দুই ছেলের শ্বশুরবাড়ির জন্য কিছু কেনাকাটা করেছি, এই নিন দেখুন তো পছন্দ হয় কি না? আর শুনুন আমাদের বাসায় ইফতার দেওয়ার কোন নিয়ম নেই, সামনে বছর থেকে এরকম ভুল আর করবেন না। এবার যেহেতু উপহার নিয়েই এসেছেন তাই আর ফেরত দিচ্ছি না এগুলো আমরা রেখে দিচ্ছি।"
আমার শাশুড়ি প্যাকেট দুইটা বাবার দিকে বারিয়ে দিলেন। বাবার মুখে কোন কথা নেই, বাবা বেশ অবাক হয়েছেন আমার শাশুড়ির ব্যবহারে। আমি জানি বাবা আর মা এবার ঈদে কিছু নিতো না কারণ আমার বাবার হাতে যে আর কিছুই নেই। বড় আপুর বিয়ে হয়েছে চার বছর, বিয়ের পর প্রতিবছর রোজায় ইফতার আর ঈদে ওদের জামাকাপড় দিতে হয়। ওদের জন্য আমিও ঈদে ভালো কিছু নিতে পারতাম না। আমার বিয়ে হয়েছে পাঁচ মাস, এ বাড়ির পরিবেশ একদম ভিন্ন। আমি এমন একটা পরিবার পেয়েছি যেই পরিবার নিয়ে বাহিরে কারো কাছে কিছু বলতে খুব ভয় লাগে যদি নজর লেগে যায়! আমি এরকম পরিবার কিছুতেই হারাতে চাই না। বুদ্ধির পর থেকে জেনে এসেছি শাশুড়ি আর ছেলের বউয়ের সম্পর্ক একদম দা কুমড়ার মতো। আপুর শাশুড়িকে দেখে আমার বিয়ে করতেও ভয় লাগতো কিন্তু এখানে এসে জানলাম শাশুড়িও নিজের মায়ের মত হয়।
বাবা প্যাকেট দুটো নিয়ে শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,
" এসবের কি দরকার ছিল বেয়াইন? আমারই উচিৎ আপনাদের কিছু দেওয়া, আমার মেয়ের প্রথম ঈদ বিয়ের পর কিন্তু দেখুন........."
" শুনুন বেয়াই, আপনার মেয়েকে কেমন রাখতে পেরেছি জানি না। তবে আপনার ওপর এই দায়িত্ব বর্তায় না যে আপনি আপনার মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর ও তার দায়িত্ব বয়ে নিয়ে বেড়াবেন। আপনার মেয়ের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে আমাদের, বলতে গেলে এত সুন্দর একটা মেয়ে দেওয়ার জন্য আপনাদের ওপর ও আমাদের কিছু দায়িত্ব থেকে যায়। আপনার কষ্টে লালন পালন করা মেয়েটা কত সহজেই আমাকে দিয়ে দিয়েছেন এর প্রতিদান তো প্রাপ্য। আমি চাই সম্পর্কটা অটুট থাকুক তবে একটাই অনুরোধ আপনি দয়া করে এই বাড়ির জন্য কিছু করবেন না হাসিমুখে দুটো কথা বলবেন আমার ছেলেকে ভালোবাসবেন বাকি সব আমি দেখব। আর আপনি এসব কেন নিয়ে আসবেন আপনার মেয়ের সংসারে কি কম আছে বলেন? আপনার জামাই মাসে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করে, তার দায়িত্ব আপনাদের দেখা।"
" না না বেয়াইন এসব কি বলছেন? আমার মেয়ে সুখে থাকলেই আর কিছু চাই না আমি। একটা বাবা আর কিইবা চায় মেয়ের ভালো থাকা ছাড়া?"
বাবার কথায় আমার শাশুড়ি তেমন কিছু বললেন না আমার হাতে টাকাগুলো ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
" তোমার পক্ষ থেকে তোমার বাবার উপহার তুমিই দাও, তোমার বাবা খুশি হবেন।"
শাশুড়ি মায়ের চেষ্টায় আমি একটা ভালো চাকরি পেয়েছি মাসে পয়ষট্টি হাজার টাকা বেতন। আমি ভেবেছিলাম মা -বাবা, শ্বশুর-শাশুড়িকে কিছু উপহার দিব কিন্তু আমার শাশুড়ি বললেন পুরো টাকা বাবার হাতে তুলে দিতে কারণ বাবা এত কষ্ট করে পড়াশোনা করিয়েছেন এই টাকার দাবিদার শুধুমাত্র আমার বাবা। আমি সেদিন খুব অবাক হয়েছিলাম, উনি তো বলেছিলেন তবুও বাবাকে টাকাগুলো দিতে দ্বিধা করছিলাম কারণ পরে যদি এটা নিয়ে কোন কথা ওঠে!
আমার ভাবনার সমাপ্তি ঘটিয়ে তিনি কথাটা আবার বললেন। আমি বাবার পায়ের নিকট বসে গেলাম। বাবা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন, একবার আমার দিকে তাকাচ্ছেন আরেকবার আমার শাশুড়িরদিকে। আমার শাশুড়ি মিটমিটিয়ে হাসছেন। আমি বাবার হাতে টাকা তুলে দিয়ে বললাম," বাবা এটা তোমার মেয়ের প্রথম উপার্জন। এটায় আর কারো অধিকার থাকুক আর না থাকুক এখানে তোমার আর আমার শাশুড়ির অধিকার সবথেকে বেশি। তবে আমার শাশুড়ির মতে এখানে শুধু তোমার অধিকার। বাবা বিশ্বাস করো আপুর শাশুড়িকে দেখে আমি যতটা ভয় পেতাম এখন তার থেকে বেশি ভয় পাই আমার ভাগ্যকে, এটা ভেবে ভয় পাই যে এই ভাগ্যটা কোনদিন বদলে যাবে না তো! এই বাড়ির মানুষগুলো আমার হৃদয়ে মিশে গিয়েছে।
এই যে মহিলাকে দেখছো উনি আমাকে প্রতিদিন মায়ের মতো বকে মাঝেমাঝে তো মায়ের মতোই পিঠের ওপর দ্রুম করে মে*রেও দেয় আবার জানো বাবা উনিই আমাকে তার মেয়ের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। উনার জন্যই হয়তো আমার বেঁচে থাকার খুব লোভ হয়। মনে হয় শুধু মাত্র এই বাড়িতেই আমার হাজার বছর পেরিয়ে যাক। বাবা এই বাড়ির মানুষের কোন তুলনা হয় না, সময় সময় মনে হয় আমার ভালোবাসাই হয়তো যথেষ্ট নয়, এত ভালোবাসা আমি পাই যে এই অনুভূতি সৃষ্টি হয়। বাবা তুমি দোয়া করো আমি যেন আমার শাশুড়ির মেয়ে হয়েই থাকতে পারি।"
আমি আর কথা বলতে পারছিলাম না, কান্নায় কথা জড়িয়ে আসছিল। আমার কান্নায় বাবার মুখে খুশির ঝলক দেখা যাচ্ছে। তিনি হয়তো আমার মাধ্যমে খুশি অনুভব করছেন।
হঠাৎ আমি আমার কাধে শাশুড়ির হাত অনুভব করলাম, পিছনে তাকিয়ে দেখি শাশুড়ির চোখেও পানি। আমি দাঁড়িয়ে উনার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললাম, " মা আপনাকে একটু জড়িয়ে ধরি?"
কোন উত্তর না দিয়ে তিনিই আমাকে আলগোছে জড়িয়ে নিলেন। এ যেন এক অন্যরকম প্রশান্তি। এ প্রশান্তি সকল দুঃখকে ছুড়ে ফেলতে সক্ষম।
#সমাপ্ত
#অণুগল্প_শাশুড়িমা
#তানিয়া_মাহি(নীরু)
গল্পটি কাল্পনিক, জানি বাস্তবে এমন শাশুড়ি হয়তো কেউ পায় না, সম্ভব ও হয় না। এত এত নেগেটিভিটির মাঝে একটু পজেটিভ চিন্তাভাবনার রেশ থেকে যাক।