গল্পঃ অচেনা ভালোবাসা | Story :: Ochena Valobasha (Part-01)

 

যে মেয়ের জন্য ধর্ষকের তকমা গায়ে লেগেছিল সেই মেয়ে কে আমার বিয়ে করতে হলো। কি দোষ ছিলো আমার? কেনো আমার সাথেই সব সময় এমন হয়? আমি তিশা কে ভালোবাসতাম এটাই কি আমার অপরাধ! অনেক বার তিশা কে বলেছিও কিন্তু সে আমাকে বার বার অপামান করতো। তাহলে এখন আমার সাথে এমন করছে কেন? বাসর ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে এসব ভাবছি। বাসর ঘরে ঢুকতে ও অনেক খারাপ লাগছে। কি ভাবে এই মেয়ের সাথে একি রুমের ভিতরে থাকব। সব চিন্তা বাদ দিয়ে আমি বাসর ঘরে প্রবেশ করলাম। রুমে ঢুকে দেখি খাটের উপরে বসে আছে তিশা। আমি ধিরে ধিরে খাটের দিকে এগিয়ে গেলাম। আমি খাটের পাশে গিয়ে দাড়াতেই তিশা আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকল।
 
তিশা -- কিরে তোর এতো অহংকার এখন কই গেল?
আমি কিছুনা বলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। কোনো কথা মুখ দিয়ে বের হচ্ছে-না।
তিশা -- এখন দেখি মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না দেখছি!
আমি -- আমি আপনার কি এমন ক্ষতি করছি কেন আমার জীবন টা নষ্ট করছেন? আমাকে ধর্ষক বানিয়ে সবার চোখে খারাপ বানিয়ে দিলেন। আবার আমাকে বিয়ে করলেন কেন?
তিশা -- তোকে কেন বিয়ে করছি সেই কথা কি তোকে বলতে হবে নাকি? তুই আজ থেকে আমার হুকুমের দাস, আমি যা বলব তোকে তাই করতে হবে। 
 
আমি -- আপনি আমার সাথে এমন টা কেন করলেন? আমার হাসি খুশি জীবনটাকে আপনি বরবাদ করে দিলেন। আমার অপরাধ আমি আপনাকে ভালোবেসে ছিলাম সেটাই কি আমার সব থেকে বড় অপরাধ?
তিশা -- মনে কর সেটাই। এখন যা শুয়ে পড়।
-- আমি কোথায় ঘুমাব?
-- নিচে ঘুমা তুই। আর আজকের পর থেকে তুই নিচে ঘুমাবি।
তারপর আমি আর কিছু না বলে একটা কাথা আর বালিশ নিয়ে নিচে বিছানা করে শুয়ে পড়লাম। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। বিয়ে নিয়ে সবার অনেক স্বপ্ন থাকে আমারও ছিল। সারারাত বউ এর সাথে গল্প করবো। কিন্তু আমার সাথে কি হলো! আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেলো
 
আমাদের পরিচয় টা দিয়ে দেই। আমি জাহিদ, এইবার অনার্স ২য় বর্ষে পড়ছি। আমি মা-বাবার একমাত্র ছেলে। মা-বাবা আমাকে খুব ভালো বাসতো। আর এলাকার সবাই আমাকে খুব ভালো জানতো। কিন্তু তিশার জন্য এখন আমাকে সবাই খারাপ ভাবে৷ তিশার পরিচয় দিয়ে দেই। তিশা নাম তো সবাই জানেন। তিশা আমার চাচাতো বোন। আমরা একি বাসায় থাকি। আমরা উপর তোলায় আর তিশা নিচতলায় থাকে। তিশা আর আমি একি ক্লাসে পড়াশোনা করি। তিশা আমার একবছরে ছোট। 
 
তিশা দেখতে খুব সুন্দরী। টানা টানা চোখ। গোলাপি ঠোঁট। দেখতে মনে হয় একটা পরি। যে ছেলে দেখবে সেই তিশার প্রেমে পড়ে যাবে। তেমন আমিও তিশার প্রেমে পড়ে গেছি অনেক আগেই। তিশা কে আমার ভালোবাসার কথা অনেক বার বলছি কিন্তু প্রতিবার ও আমাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিত।
গল্পে ফিরে আসি।
 
শুয়ে শুয়ে তিশার কথা মনে করে চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসলো। খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। আমার জীবন টা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন মানুষ আমাকে অন্য চোখে দেখে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছিনা তিশা এই কাজ টা আমার সাথে কি ভাবে করতে পারলো। এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি তিশা নেই। আমি ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলাম তিশা কে দেখার জন্য। সেখানেও নেই। তাই আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করার জন্য চলে গেলাম। নাস্তার টেবিলের সামনে গিয়ে দেখি সবাই নাস্তা করছে। এমনটা এর আগে কখনো হয়নি আমাকে রেখে মা-বাবা কখনো নাস্তা করে নাই। 
 
কিন্তু আজ আমাকে না ডেকে সবাই খেতে বসে গেছে। মন খারাপ করে একটা চেয়ার টেনে বসে গেলাম। আম্মুর দিকে তাকিয়ে দেখি আম্মু নিজের মতো খাবার কাচ্ছে আমার দিকে তাকাচ্ছে না। আব্বুও নিজের মতো করে খাচ্ছে। আব্বু এর আগে কখনোই আমাকে ছাড়া খেতো না আর আজ! এসব ভাবতেও অনেক কষ্ট হচ্ছে। নিজের খাবার নিজে ই নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম।
একটু পরে তিশা খাওয়া দাওয়া শেষ করে উঠে রুমে চলে গেলো। আমি তখনও খাচ্ছি। তিশা ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আসলো। 
 
তিশা -- আম্মু, আব্বু, আমি ভার্সিটিতে যাচ্ছি।
আব্বু -- দাড়া মা এই টাকা গুলো তোর কাছে রেখে দে তোর কাজে লাগবে৷ আর সাবধানে যেও।
তিশা -- ধন্যবাদ আব্বু।
এই বলে তিশা বের হয়ে চলে গেলো। আমিও নিজের রুমে গিয়ে রেডি হয়ে বের হয়ে আসলাম।
আমি -- আম্মু আমি ভার্সিটি যাচ্ছি। 
 
কিন্তু আম্মু আমার দিকে একটা বার তাকিয়ে ও দেখল না। আব্বুকেও বললাম। আব্বু ও সেম কাজ টাই করল আমার সাথে। মন খারাপ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। পকেটে হাত দিয়ে দেখি মাত্র ১০ টাকা আছে। তাই হাটা শুরু করে দিলাম। হাটতে হাটতে ভাবছি তিশা আবার ভার্সিটিতে গিয়ে সবাইকে আমার নামে এসব কথা বলে দেয় কিনা। ও যেই মেয়ে সব কিছুই বলে দিতে পারে। এসব ভাবতে ভাবতে ভার্সিটির গেটের সামনে চলে গেলাম। ভিতরে ঢুকে দেখি সবাই আমার দিকে কেমন করে তাকাচ্ছে। তাহলে আমার ধারণা সত্যি হলো। তিশা সবাইকে সব কিছুই বলে দিয়েছে। আমি আমার ক্লাসের দিকে যাচ্ছি এমন সময় একটা কথা আমার কানে ভেসে আসতে আমি থমকে গেলাম।
-- এই ছেলের থেকে ধুরে থাকিস সবাই।
-- কেন কি হইছে? 
 
-- আরে এটা একটা ধর্ষক, ও তিশার সাথে খারাপ কাজ করতে চাইছে।
-- কি বলিস! এই ছেলেকে তো আমি অনেক ভালো মনে করতাম। কোনো মেয়ের সাথে তো কথা বলতেও দেখতাম না এই ছেলে এমন কাজ করলো ছি। দেখে তো মনে হয় বাজা মাছ টাও উল্টে খেতে জানেনা। 
 
এসব কথা শুনে চোখে পানি চলে আসলো। তারপর আমি ক্লাসে চলে গেলাম। আমার কোনো ফ্রেন্ড আমার সাথে কথা বলছেনা। নিজেকে আজ খুব একা মনে হচ্ছে। ক্লাসে সবাই কথা বলছে আর আমার দিকে কেমন ভাবে তাকিয়ে আছে সবাই।
আমি মাথা নিচু করে একাই বসে আছি। তারপর স্যার এসে ক্লাস শুরু করে দিলো। সব ক্লাস শেষ করে আমি ক্লাস থেকে বের হতে যাবো তখনই কেউ আমার পিছনে থেকে ধাক্কা দিল। আর আমি গিয়ে একটা মেয়ের উপরে পড়লাম। মেয়েটার নাম নিলা।
 
আমি -- সরি আমি ইচ্ছে করে কিছু করি নাই আমাকে কেউ ধাক্কা দিয়েছে।
নিলা -- তুই তো আসলেই একটা খারাপ ছেলে, মেয়ে দেখলেই তোর মাথা ঠিক থাকেনা তাইনা?
এই কথা বলে আমার গালে ঠাস ঠাস করে দুইটা থাপ্পড় বসিয়ে দিল। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে শুরু করে দিল।
নিলা -- তোদের মতো কিছু খারাপ ছেলের জন্যই মেয়েরা নিরাপদ নই। তোদের মতো ছেলেদের অনেক বড় শাস্তি দেওয়া উচিৎ। 
 
আমি -- বিশ্বাস করুন আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনাই।
আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি তিশা দাঁড়িয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। বুঝতে পারলাম তিশা আমাকে ধাক্কা দিয়েছে। আজি তিশার দিকে তাকাতেই তিশা ওখান থেকে চলে গেলো।
আমি -- আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ। আমি ইচ্ছে করে কিছু করি নাই।
নিলা -- এই বারের জন্য তোকে ছেড়ে দিলাম। 
 
তারপর আর কিছু না বলে আমি চোখ মুছে বাসার দিকে চলে গেলাম। বাসায় ডুকে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতে আব্বু এসে দরজা খুলল। আর দরজা খুলেই আমার গালে একটা থাপ্পড় মেরে দিলো।
আমি গালে হাত দিয়ে আব্বুর দিকে তাকিয়ে রইলাম। বুঝতে পারছি না আব্বু আমাকে মারল কেম? আমি মাথা নিচু করে আব্বুর সামনে দাঁড়িয়ে রইলাম। 
 
চলবে ------------------------
#অচেনা ভালোবাসা
[সূচনা পর্ব ]
#লেখক - আবির চৌধুরী।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url