গল্পঃ কিছু ভুলের মাশুল হয় না | Some mistakes are not charged : Story
গল্পঃ কিছু ভুলের মাশুল হয় না | Story: Some mistakes are not charged
ব্লাউজের হুক আস্তে আস্তে লাগিয়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায় মিম। খেয়াল করে ঠোঁটের লিপস্টিক মুখের বেশ খানিকটা অংশ জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে লেপ্টে আছে। ঠোঁটে লেপ্টে যাওয়া লিপস্টিক ঠিক টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে বিছানার দিকে তাকায় মিম । উলট পালট বিছানায় এখনো অসভ্যতার চিহ্ন বিদ্যমান। মারুফ তখনো বিছানায় শুয়ে শুয়ে মিমের দিকে তাকিয়ে হাসে, আজ কি একটু বেশি হয়ে গেলো ?
মিম কিঞ্চিত লজ্জ্বায় লাল হয়, আজকাল একটু বেশি অসভ্য হয়ে গেছো তুমি। এত পাগল হয়ে যাও বিছানায়। রোজ বউয়ের সাথে থেকেও আমার কাছে আসো । তারপর ও এত এনার্জি আসে কই থেকে ?
মারুফ কিছু বলার আগে মিমের ফোন বেজে উঠে।
বেজে যাওয়া মোবাইল ফোন রিসিভ করেই বেশ শান্ত গলায় বলে, মামুন আমি রেহানা ভাবীর বাসায় ড্রেসটা সেলাই করতে দিতে এসেছিলাম। তারপর বাচ্চাটাকে স্কুল থেকে নিয়েই ফিরছি।
ফোন রাখতেই মারুফ হেসে উঠে। কী সুন্দর মিথ্যা বলতে পারো তুমি।
তোমার জন্যই তো বলতে হয়। আচ্ছা আমি যাই।
বউ থাকার পর ও কেন তোমাকে বার বার ডাকি, সে উত্তরটা শুনে যাবে না মিম।
এখন না, পরে ফোনে শোনবো। এখন গেলাম ।
আচ্ছা।
মিম লিপস্টিক মুছে কপালের টিপ ঠিক করতে করতে বাইরে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, যাক বাবা মিথ্যা কথা বলে মামুনের কাছে থেকে এবারের মত বেঁচে গেলাম। মারুফ যখন তখন ডাকে, কি যে পাগলামি করে। ইদানিং তার পাগলামিটা বেড়ে গেছে। এই অনৈতিক সম্পর্কে থেকে কতবার বেরিয়ে যেতে চেয়েও পারেনি, কী একটা নিষিদ্ধ নেশায় পেয়ে বসছে। হাজার বার যাব না বলে সিদ্ধান্ত নেয়ার পর মারুফের ফাইনাল কল সে আর আগ্রাহ্য করতে পারে না। নিজের সমস্ত অস্তিত্ব তাকে বিলিয়ে দিলেই মনে হয় সুখ। আদৌ কি সেটা সুখ মিম তা জানে না। স্বামী হিসেবে মামুন যতই তাকে অসম্মান করুক, যতোটা তাকে একাকিত্বে রাখুক তবু মামুনকে ঠকানো কি তার উচিৎ হচ্ছে।
তাও সে জানে না। সাময়িক সুখের পরশের জন্য তার সামনের ভবিষ্যৎ আস্তে আস্তে ক্রমশ ধসূর বর্ণ হচ্ছে, হবে এটা নিয়ে সে আর সন্ধিহান না। আজ হোক কাল হোক মামুন তা জানবে। তখন হয়ত জীবনের শেষ ঝড় আসবে। তা থেকে নিজের ঘর বাঁচানো কি কঠিন হবে ?
কিছুই আর ভাবতে পারে না। মারুফের ভাড়া করা ফ্ল্যাট থেকে নেমে বড় রাস্তায় এসে দাঁড়ায়। ঝুম ঝুম বৃষ্টি নামে। এক জীবনে মামুনের সমস্ত অবহেলার জবাব দিতে গিয়ে সে জড়িয়ে পড়েছিল তার ছেলের স্কুলের অন্য এক বাচ্চার বাবার সাথে। লোকটার নাম মারুফ। তাদের সম্পর্কের বয়স তিন বছর। তারা দুজনই নিজেদের সংসারে একাকিত্ব ফিল করত, অনেক না পাওয়া তাদের ছিল। সেই থেকে দুজন বন্ধু তারপর গল্পে গল্পে কাছে আসা।
কিন্তু এই সম্পর্কের ভবিষ্যৎ পরিণাম ভেবে মিম বেশ অশান্ত হয়, বার বার চিন্তিত হয়। তবে কিসের নেশায় যেনো বেরিয়ে আসতে চাইলেও পারছে না।
রিক্সা ডাকে যতক্ষণে ততক্ষণে বৃষ্টিতে ভিজে যায়। মনে হয় এ এক অন্যরকম প্রশান্তি। রিক্সায় উঠতে যাবে তখনি একটা প্রাইভেট কার থামে তার সামনে। গাড়ির গ্লাস খুলে মামুন বলে, গাড়ীতে উঠো ..
ভয়ে, লজ্জ্বায় কেমন যেন কুকড়ে যায় মিম। তবুও দরজা খোলে মামুনের পাশে বসে। আমি রেহানা ভাবীর বাসা থেকে ফেরার পথে সিনএনজি নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। তাই রিক্সা খুঁজছিলাম।
আমি তোমাকে কোন প্রশ্ন করিনি মিম। তাছাড়া এই জায়গায় কিংবা আশে পাশে রেহানা ভাবীর বাসা না। স্কুল আজ জলদি ছুটি হয়ে গিয়েছিলো, তোমাকে স্কুল থেকে ফোন দিয়েছিল, কিন্তু তোমার ফোন অফ থাকায় স্কুল থেকে আমাকে ফোন দিয়েছিলো।
মিম কি বলবে বুঝতে পারছে না। মারুফের সাথে চুড়ান্ত মুহুর্তে ফোন আসছে দেখে মারুফ অফ করে দিয়েছিলো। পরে অন করেছিলো, কিন্তু আর নোটিফিকেশন দেখা হয়নি।
না মানে...
মিম স্কুল থেকে ফোন দেয়ার পাঁচ মিনিট পরে রেহানা ভাবী আমাকে ফোন দিয়েছিলেন, তোমাকে না পেয়ে। বাচ্চাটা অনেকক্ষণ উনার কাছে ছিলো। আমি ছেলেকে স্কুল থেকে নিয়ে কবেই বাসায় ফিরেছি, দেখলাম তুমি বাসায় নেই। আমি জানি তুমি কই থাকবে তাই এখানে আসা। কাছাকাছি এসেই তোমাকে ফোন দিয়েছিলাম, তুমি বললে রেহানা ভাবীর বাসায়। অথচ তুমি এইখানে অন্য আরেকজনের ফ্ল্যাটে। মারুফ সাহেব যে ফ্ল্যাট ভাড়া করেছেন সেটা আমার বন্ধু রাকিবের। তাই এখান থেকে তত্ত্ব পাওয়াটা আমার জন্য কষ্টসাধ্য না।
মিম কেবল শুনে যাচ্ছে। ভয়ে সে কেঁপে উঠছে বার বার। যা আশংকা করেছিল তাই হতে যাচ্ছে।
মামুন বলেই যাচ্ছে, গত ছয় মাস থেকে আমি তোমাকে প্রতি মুহুর্ত ফলো করে যাচ্ছি। হুট করে তো সিদ্ধান্তে যেতে পারি না। হ্যা আমি তোমাকে অনেক ভালবাসতাম কিন্তু ব্যবসায়িক কারণে কয়েকটা বছর আমি বিপর্যস্ত ছিলাম সেখানে তোমার সাপোর্ট দরকার ছিল। তোমাকে আমি সব বলেছিলাম। অনেক সময় তোমার উপর অন্যায় করেছিলাম। ঝগড়া মারামারি অল্প স্বল্প হয়েছে। কিন্তু লাইফের সাত বছরে যদি এক বছর দুই বছর অন্যায় করি আর বাকী পাঁচ বছর ভালবাসি তোমাকে তবে কি তার হিসেব তোমার কাছে ছিল না। একটু অপেক্ষা করতে তো পারতে। করো নি। জড়িয়ে গেছো পরকীয়ায়। হয়ত আমাকে আর ভাল লাগেনি। এটা স্বাভাবিক। আমার কাছে যথেষ্ট তত্ত্ব প্রমান আছে। তোমার উপর আমার ক্ষোভ , রাগ নেই। যা ভাল মনে করেছো তাই করেছো।
মিমের চোখ বেয়ে ঝর ঝর করে পানি পড়ছে। হাউ মাউ করে কাঁদছে। তুমি প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আর এমন হবে না।
আমি এই তিন বছরে অনেকবার তোমাকে সুযোগ দিয়েছি। নানা রকম ভাবে ইনডাইরেক্ট তোমাকে বুঝিয়েছি। তুমি বুঝনি। ভেবেছো, আমি বোকা, সহজ সরল।
এর মধ্যে কথা বলতে বলতে গাড়ী থামায় মামুন। মিম অবাক হয়, এতো তার বাবার বাসার সামনে এসে গাড়ী থেমেছে। এখানে কেন মামুন ?
এটা নিজের বাবার বাসা, তাও চিনতে পারছো না। কি করে চিনবে, তোমার চোখে এখন রঙিন চশমা।
আমি সেটা বলিনি মামুন। এখানে কেন আসছো হঠাৎ।
মিম শোনো, আর যাই হোক, কোন বিশ্বাস ঘাতকের সাথে সংসার করা যায় না। আমি আমার সন্দিহান মন নিয়ে তোমাকে আর ভালবাসতে পারব না। আর ভালবাসাহীন একজন নিয়ে সংসার করা যায় না।
তুমি কি আমাদের বাচ্চার কথা ভাববে না।
তার জন্য আমি আছি। আমাদের দুজনের কাছেই থাকবে। আর আমি নিজে আর বিয়ে করছি না। তবে তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে সুখী হও। মারুফরা জাস্ট ইউজ করবে, বিয়ে করবে না। তালাকনামা রেডি হয়ে গেলে পৌছে যাবে। যাও এবার নেমে পড়ো। তোমার বাবা মাকে কিছুই বলিনি। তোমাকে তাদের কাছে ছোট করব না। তুমি দরকার হলে আমার নামে কিছু মিথ্যা বলে দিও। যাও নামো।
প্লিজ আমার কথা শোনো। একটা সুযোগ দাও।
সরি মিম। টাইম শেষ হয়ে গেছে। এই সিদ্ধান্ত একদিনে নেইনি। অতএব পৃথিবীর কোন শক্তি আমাকে আর ফেরাতে পারবে না। তুমি নেমে যাও। তোমার সমস্ত কাপড় চোপড় আমি কাল পাঠিয়ে দিব। আর যখন ইচ্ছে আমাদের বাচ্চাকে দেখতে খবর পাঠিও , নিয়ে আসিও। আমার কোন সমস্যা নেই। ভাল থেকো। বিদায় মিম। সাত বছরে অনেক কষ্ট দিয়েছি ক্ষমা করে দিও।
মিম গাড়ী থেকে নেমে যায়। ততক্ষণে মামুন গাড়ী নিয়ে হাওয়া হয়ে যায়। বাসার দরজায় কলিং বেল দিয়ে নীচে বসে পড়ে। আজ তার সব শেষ হয়ে গেলো। মানুষটাকে বুঝতে পারলো না। এত বড় অন্যায় সে করে ফেললো।
দরজা খুলে মায়ের ডাকে সম্বিৎ ফিরে পায় মিম। কি হয়েছে তুই কাঁদছিস ক্যান ?
মা আমার সব শেষ হয়ে গেছে। আমি নিজের হাতে সব শেষ করে ফেললাম। আমি আর বাঁচতে চাই না বলেই মায়ের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যায় মিম। মায়ের চিৎকারে এগিয়ে আসে বাবাসহ অনেকে।
মিমকে ধরাধরি করে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।
গল্পঃকিছু ভুলের মাশুল হয় না
১ম পার্ট
চলবে .....