Cap | ক্যাপ | Full Natok | Niloy Alamgir | Samira Mahi | Mehedi Hasan Hridoy | Bangla New Natok 2022

 
#স্রোত
লেখিকা: #রুবাইদা_হৃদি

আমার স্ত্রী মারা যাবার দু'দিনের মাথায় আমি তার ছোটো বোন নীপাকে বাসায় নিয়ে এলাম। যেমন তেমন ভাবে নয় একদম বধুবেশে সজিয়ে। পাড়াপড়শি আমার ফ্ল্যাটের সামনে খুব আগ্রহ সহকারে গল্প খুজছে। আমি মনে মনে হাসলাম। পৈশাচিক হাসি!
কারণ সবার আড়ালে সব গল্প যে ঢাকা পড়েছে। 
 
এইদিকে আমার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী আমার ছোটো মেয়ে অরুনিমাকে দু'গাল ভর্তি চুমু খেয়ে কান্নামাখা গলায় শোধালো,
 
'বোনের সংসার বোনের মেয়েকে নিজের কাছে রাখতেই এই সিদ্ধান্ত নিলাম।'
তার আবেগপূর্ণ কথা যেন ঘূর্ণিঝড়ের বার্তার ন্যায় পুরো মহল্লা ছড়িয়ে গেলো। যারা কানাঘুষো করছিলো তারা সেধে এসে ভরসা দিয়ে বলল,
 
'অয়ন তোমার সিদ্ধান্তে আমরা খুশি হয়েছি। এই বাচ্চা মেয়েটা খালা নামক মা পেলো। আহারে...।'
শত কথার ভীড়ে আমি মাথা নীচু করে আবেগে ভাসলাম। আমার প্রথম স্ত্রী নীরুর স্মৃতি চারণ করলাম। চোখের কোণের অশ্রু বারবার মুছলাম। আমার শোকের আহাজারি মনুষ্য মন গলিয়ে দিলো। সবাই নীরুকে ভুলে নীপাকে সাদরে গ্রহণ করে নিলো।
 
নীপার খুশি উঁপচে পড়ছে। বারবার আমার হাত ধরে খুশিতে আত্মহারা হচ্ছে।
কে বলবে এই মেয়ের আপন বড় বোন দু'দিন আগে মারা গেছে?
 
উঁহু!মারা যায় নি তাকে আমি আর সেই মিলে মেরে ফেলেছি। সেই গল্পটা নীরুর মতোই ক্ষুদ্র। তবে
নীরুর আর আমার গল্পটা খুব সাদামাটা। উনিশ দশকের ঘরোয়া বউদের মতো ছিলো নীরু। মা-বাবার বাধ্য মেয়ের তকমাটা ছিলো বলেই তার বাবার এক আদেশে আমার মতো এতিম ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায় ঠিক আজ থেকে বছর চারেক আগে। 
 
ওহহ হ্যাঁ! বলতে ভুলে গিয়েছি আজ আমার আর নীরুর চার বছরের বিবাহ বার্ষিকী। এখন থেকে নীপার ও। 
 
নীরু আমায় ভালোবাসায় কাতর ছিলো তবে আমি কাতর ছিলাম নীপার রুপের মোহে। যদিও নীরু আর নীপা যমজ এবং অদ্ভুত সত্য হলেও তাদের মাঝে চেহারার গড়ন ও মিল ছিলো। তবে নীরুর গায়ের রঙ তামাটে আর নীপার দুধে আলতা। 
 
এমন সুন্দরি চোখের সামনে রেখে কে ওই উনিশ দশকের বউয়ের কাছে পড়ে থাকবে? যে থাকবে তার নির্ঘাত দৃষ্টিতে সমস্যা। 
 
সে যাই হোক আমার আর নীরুর গল্পে ফেরত আসা যাক। বিয়ের দিন থেকেই তার প্রতি আমার অনাগ্রহ। অবহেলা করি নি তবে ভালোও বাসি নি। তবে নীরু ছিলো স্বামী ভক্ত। আমি যদি তাকে ছাদ থেকে লাফিয়ে পরতে বলতাম সে সেটাই বিনাবাক্যে বেদবাক্যের মতো মেনে নিতো। তার প্রাচীন যুগের রুপের জন্য আমার বন্ধুমহল কিংবা অফিস মহলে সদা হাসি তামাশা নিত্যদিনের ব্যাপার ছিলো।
তার বেশভূষা কতোবার পরিবর্তন করতে চেয়েছি তবে সে ঘোমটা টেনে আমার হাত ধরে কম্পিত গলায় বলতো,
 
'শুধু আপনার চোখেই সুন্দর থাকতে চাই।'
তার মায়াময় কথার রেশে আমার পুরুষ হৃদয় ক্ষীণ সময়ের জন্য গলে যেতো। তবে নীপাকে কাছে থেকে দেখে নীরুর প্রতি অগ্রাহ্য বাড়াটা স্বাভাবিক। 
 
নীপা স্মার্ট, সুদর্শনী,কথায় কিংবা কাজে বা চাল চলনে 'পার্ফেক্ট ম্যাচ'।
আমি বুক ভরে লম্বা শ্বাস টেনে নীপার কাছে গেলাম। ঘরে সুন্দরি বউ থাকলে যে কোনো পুরুষের মন আমেজে উপচে থাকে আমারো ব্যতিক্রম নয়। রুমে ঢুকে দেখলাম নীপা অরুনিমা কে ঘুম পাড়াচ্ছে। তার এই আহ্লাদ দেখে চট করে মেজাজ বিগড়ে গেলো আমার। 
 
আজকে আমাদের বাসর রাত। গত তিন বছর যাবৎ দুজনে যতোবার কাছাকাছি এসেছি ততোবার অনুতপ্ত হয়ে দুজন হতাশার সাগরে ডুবে ভেবেছি কবে সামাজিক ভাবে এক হবো?
আজকে সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ তবে নীপার কোনো ভাবান্তর নেই। সে তার বোনের মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত। আমি জোরে দরজা লাগিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে শাওয়ারের নীচে দাঁড়ালাম। নিজ মনকে আশ্বস্ত করে বারবার বললাম,'অরু তোমার মেয়ে অয়ন। তোমার রক্ত।'
 
গোসলে শেষে বেরিয়ে দেখলাম নীপা ঘুমে ঢুলছে। তার ঘুম দেখে আবারো কিছুটা বিরক্তি খেলে গেলো আমার মন মস্তিষ্কে। আমি তোয়ালে রেখে হন হন করে বেরিয়ে গেলাম ড্রয়িংরুমে।
কিছুক্ষণ টিভি তে খবর দেখে কিচেনের দিকে ছুটলাম। পেটের খুদা টা এবার মস্তিষ্কে সাড়া ফেলেছে।
ফ্রিজ খোলার পূর্বেই পেছন থেকে ভেসে এলো,
'ওখানে নীপাকে রাখা অয়ন। ভুলে গেলে?'
 
আমি আঁতকে উঠে পেছনে ঘুরে দেখলাম নীপা দাড়িয়ে হাসি মুখে। আমি ভ্রু কুচকে বললাম,'নিজের নাম বলছো কেন! আর নীরুর লাশ ফ্রিজে থাকবে কেন?'
'দেখলাম তুমি চমকাও কি'না।'
 
নীপা বলেই হাসলো। আমি ফ্রিজের নিকট থেকে ছিটকে সরে দাঁড়ালাম। নীপা আমার কান্ড দেখে হাসলো। আমি লজ্জায় কাঁচুমাচু করে মাথা নীচু করলাম। পুরুষ মানুষ ভয় পেলে তাকে কাপুরুষ বলে।
আমি মোটেও সেরকম নই। 
 
নীপা খানেক বাদে নুডুলস রান্না করে এনে দিলো। অদ্ভুত ভঙ্গিতে বলল,
'নীরুকে ভুলে যাওয়া এতো সহজ?'
 
'আমার কাছে নীপা থাকলে দিন দুনিয়া সব ভুলে যাই আমি।'
আমি নীপার কথার পৃষ্ঠে রোম্যান্টিক ভাবে বললাম। তবে নীপার মুখভঙ্গি পরিবর্তন হলো না। সে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে বলল,
'তোমার কাছে নীপা যদি না থাকে?'
 
'ফাজলামো বাদ দাও। খেতে বসো। রাতে কাজ আছে তোমার সাথে।'
'উত্তর টা দাও অয়ন।'
 
'নীপা তুমি আমার সামনেই আছো। আমার বউ হয়ে। হাত বাড়ালেই এখন ছুঁতে পারি।'
আমার কথা শুনে নীপা হাসলো। আমি তার হাসির শব্দে মাথা উঠিয়ে তাকালাম। এ যেন নীরু হাসছে। আমি আমার চোখের ভ্রম পাত্তা না দিয়ে নীপার দিকে তাকিয়ে রইলাম। নীপা হ্ঠাৎ হাসি থামিয়ে ঠান্ডা স্বরে বলল,
 
'নীপার শরীর তো পঁচে যাচ্ছে অয়ন। পঁচা শরীর ছোবে কি করে?'
আমি ঢোক গিললাম। মুখে থাকা অবশিষ্ট নুডুলস গেলার আপ্রাণ চেষ্টা করেও পারলাম না। মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতে চাইলাম,'মানে?' 
 
তবে সেটা করার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছি। আমার করুন দশা দেখে নীপা নিজেই বলল,
'মানেটা হচ্ছে,নীরুকে মারো নি তুমি মেরেছো নীপাকে।'
আমি অবাক হয়ে নীরুর পানে চাইলাম। নীরু হাসছে তবে চোখের কোনা বেয়ে অশ্রুবিন্দু চিকচিক করছে। ধরে আসা গলায় নীরু আবার বলল,
 
'অবহেলা নিয়েও তো ভালোবাসা আঁকড়ে ধরে ছিলাম। কি করে পারলে? তোমার সুখের জন্য আমার মেয়ের সুখ কেড়ে নিতে? তাও আমার বোনের সাথে মিলে। কেন মারতে চেয়েছিলে আমায়? বলতে দআমি চলে যেতাম তোমাদের ছেড়ে। তবে আজ আর ফিরে যাবো না। তোমাকে মে/রে নীপার কবরে দিয়েই রেহাই নিবো।'
 
নীরুর কথা শেষ হবার পূর্বেই পাশের কাঁচের মগ দিয়ে সে আমার মাথায় বাড়ি মে*রে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এইদিকে আমার
রক্তা*ক্ত দেহটা ছটফট করছে।ও আমার ছটফটানি দেখে প্রাণ খুলে কেঁদে উঠে। ওর চোখে ছিলো স্বামী হারানোর যন্ত্রণার রেশ। 
 
আমি যখন মরণ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছি সে আমার মাথা কোলে তুলে নিয়ে চুমু খেলো। মোহাবিষ্ট কন্ঠে বলল,
'ভালো থেকো অয়ন। তোমার মতো স্বামী কিংবা নীপার মতো বোন নামক বিশ্বাস ঘাতকের প্রয়োজন নেই। পরকীয়া না তোমাকে শান্তি দিলো না আমাকে! তোমার মৃ*ত্যু যন্ত্রণার মতোই আমি এতোকাল যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলাম। আজ তুমিও মুক্ত আমিও মুক্ত।'
 
নীরুর দিকে তাকিয়ে আজ আমার হুট করে বেঁচে থাকার ইচ্ছে হচ্ছে। ওর হাত দুটো ধরে স্বপ্ন বুনতে ইচ্ছে হচ্ছে। 
 
তবে সব যে অতীত! সময়ের স্রোতে ভুল গুলো বাড়তে থাকে। কিছু কিছু ভুল শুধরানো তে আমরা বড্ড দেরি করে ফেলি। সেই দেরিটা মৃত্যু অবধি ঠেকে। সময় থাকতে ক'জন ফিরে আসে নীড়ে?
 
সমাপ্ত

[ব্যাপার টা হলো লেখালেখি তে মন নেই। অগোছালো লেখা নিজের কাছেই খাপছাড়া। ভুল গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন।❤️]

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url