একজন মনের মত মানুষ চাই। মোবাইল নাম্বার ভিডিওতে দেওয়া আছে। Moner Moto Akjon Manush Cai | Episode#03

একজন মনের মত মানুষ চাই। মোবাইল নাম্বার ভিডিওতে দেওয়া আছে। Moner Moto Akjon Manush Cai | Episode#03


 একজন মনের মত মানুষ চাই। মোবাইল নাম্বার ভিডিওতে দেওয়া আছে। Moner Moto Akjon Manush Cai | Episode#03


ছোট বোনকে সাথে নিয়ে মার্কেটে গিয়েছি ঈদের কেনাকাটার জন্য।
এক দোকানে জামা দেখার জন্য বসতেই ছোট বোন একটা জামা হাতে নিয়ে চট করে বলে উঠলো,
"আগে দাম বলেন।"
 
দোকানের লোকগুলো নতুন নতুন ডিজাইনের জামা বের করতে করতে বললো,
"আগে পছন্দ করেন আপু। তারপর দাম বলছি।"
মেরুন রংয়ের একটা গারারা পছন্দ হলো আমার। দাম জিজ্ঞেস করতেই দোকানে থাকা একজন বললো,
"মাত্র ৪২০০ টাকা।"
 
আমার আদরের ছোট বোন জামাটা ভালো করে দেখে বললো,
"এক দাম বলি?"
"হ্যা আপু বলেন।"
"১৫০০ টাকা দিবো।"
"এত কম দামে এই জামা কোথাও পাবেন না।"
"আচ্ছা তাহলে রেখে দেন।"
কথাটা বলে আমরা উঠবো, তার আগেই দোকানদার ডেকে বললো,
"আচ্ছা যান ৩৫০০ দিয়েন।"
"যে দাম বলেছি ওটাই।"
 
"আর কিছু বাড়ান। ৩০০০ টাকা দেন।"
"আর এক টাকা ও বেশি দিবো না।"
আমি বোনের কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম,
"২২০০ টাকা বল। এই জামা কেউ ১৫০০ দিয়ে দিবে না।"
বোন কিছু একটা ভেবে কিছুটা দাম বাড়িয়ে বললো,
"ঠিক আছে ২০০০ টাকা দিবো।"
"আর একটু বাড়িয়ে ২৫০০ টাকা দেন।"
"আর এক টাকা ও বেশি দিবো না।"
কথাটা বলে বোন আমাকে নিয়ে উঠে চলে যেতে লাগলো। পেছন থেকে ডাক শুনে আমি বললাম,
"এই ২০০০ টাকাতেই দিবে মনে হয়। চল নিয়ে আসি।"
"আচ্ছা চলো।"
 
"আর ১০০ টাকা দিয়েন। এই প্যাকেট করে দে।"
"না না। আমি ২০০০ ই দিবো।"
জামা নিয়ে চলে আসার সময় পেছন থেকে শুনতে পেলাম,
"এই মেয়ে যে বাড়িতে বউ হয়ে যাবে সে বাড়িতে বাড়তি কোনো খরচ হবে না।"
বোন হয়তো এটা শুনতে পায়নি। নয়তো এতক্ষণে লঙ্কা কান্ড বাঁধিয়ে ফেলতো।
"এই আপু ১৮০০ টাকা বললেই হতো তাইনা? বেশি বলে ফেললাম মনে হয়।"
আমি ওর কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বললাম,
"একদম চুপ থাক। চল এখন বাকি কেনাকাটা সেরে ফেলি।"
সবকিছু কেনাকাটা করে গাড়িতে উঠে মাথায় হাত দিয়ে বসলাম আমি। কারণ গত দুই ঘন্টা যাবত আমার বোন এই কথাটা প্রায় ৫০ বার বলেছে,
"দামটা মনে হয় বেশিই বলে ফেললাম। আর একটু কমানো উচিত ছিল!"
★সমাপ্ত★
#রম্যগল্প
#দামদর
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা
=========================

কে বধির ?
স্বামী স্ত্রী দুজনেরই বয়স হয়েছে। স্বামীর সন্দেহ হলো বউ হয়তো ঠিকমত কানে শুনতে পান না। ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার বললেন :
-আপনি কি শিউর, যে আপনার স্ত্রী শুনতে পান না ?
-না, একদম যে শিউর, তা বলতে পারিনা।
-তাহলে একটি টেষ্ট করুননা !
আপনি চল্লিশ ফিট দূরে দাঁড়িয়ে আপনার স্ত্রীকে কিছু বলুন। উনি যদি শুনতে না পান, আরও দশফিট এগিয়ে আসুন। তারপরেও যদি শুনতে না পান, আরও দশফিট। কেমন !
যে কথা সেই কাজ।
পরেরদিন সন্ধ্যেবেলায় স্ত্রী যখন রান্নাঘরে রান্না করছেন, স্বামী চল্লিশ ফিট দূরে দাঁড়িয়ে বললেন “আজকে রাতে কী রান্না করছো ?
কোন উত্তর নেই ।
 
এবার স্বামী আর দশফিট এগিয়ে এলেন। বললেন :
“শুনছ, আজকে রাতে কী রান্না করবে ?”
আবারও কোন উত্তর নেই।
আরও কাছে এগিয়ে এলেন স্বামী। একই প্রশ্ন আবারও।
স্ত্রীর পক্ষ থেকে কোন সাড়া শব্দ নেই।
এবার দূরত্ব মাত্র দশফিট। স্বামী যেভাবে চেঁচিয়ে বললেন তাতে পাড়ার সব মানুষ শুনতে পাবে। আবারও কোন উত্তর নেই ।
এবার রেগে গিয়ে স্বামী বউয়ের ঘাড়ের কাছে এসে বললেন :
-তুমি কি কিছুই শোননা? আজকে রাতে কী রান্না হবে ?
এবার স্ত্রী বললেন :
-তোমাকে পাঁচ পাঁচবার বললাম
“মুরগী”।
Tarique Huq
=======================
প্লেনে উঠেই গার্লফ্রেন্ড বলল, "তুমি নাকি আমার জন্য সব করতে পারবা। আমি বললাম "অবশ্যই"। গার্লফ্রেন্ড বলল, " তাহলে এই প্লেনের মধ্যে হকারি করো দেখি।"
 
গার্লফ্রেন্ডের কথা শুনে বেলুনের মতন গর্বে যেমন বুক ফুলে উঠেছিলাম,প্লেনে হকারির কথা শুনে ঠিক সেইভাবেই চুপসে গেলাম। জীবনে কেউ শুনেছে প্লেনে হকারি করা যায়?
গার্লফ্রেন্ডকে বললাম " ইয়ে মানে এর থেকে কঠিন কিছু থাকলে বলো( ভাব নিয়ে)। এটা তো খুব সহজ কাজ"। গার্লফ্রেন্ড বলল " আগে এটাই করে দেখাও। যতো সুন্দর করে করবা ততোই বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময় এগিয়ে আসবে। নাহলে কিন্তু অন্য কাউকে নিয়ে গিয়ে বাবার সাথে পরিচিত করিয়ে দিবো"। 
 
সম্রাট শাহজাহান যদি প্রেমের জন্য তাজমহল বানাইতে পারে। আমি প্রেমের জন্য হকারি করলে কি দোষ? এছাড়া গার্লফ্রেন্ড সরাসরি কলিজাতে হাত দিয়েছে। নিজের সম্মান বাঁচাতে সীট থেকে উঠে হকারি করতে যাবো এমন সময় মনে হইলো ঢাকার বাসে যারা হকারি করে তারা নানা রকম জিনিস বিক্রি করে। কিন্তু এই প্লেনে আমি কি বিক্রি করবো। গার্লফ্রেন্ড কে বললাম " ইয়ে মানে হকারি করতে তো জিনিসপাতি লাগে। আমার কাছে তো কিছুই নেই"। গার্লফ্রেন্ড আমার কথা শুনে ওর হাতের ব্যাগটা থেকে একটা ব্রাশের পাতা বের করে দিলো। গুণে দেখলাম সেখানে ১২ টা ব্রাশ। ব্রাশ গুলো হাতে নিয়ে উঠে যেই দাঁড়াতে যাবো ঠিক তখনি গার্লফ্রেন্ড বলল " যদি ঠিকমতন হকারি না করতে পারো কি হবে বলেছি তো,মনে আছে"? আমি হকারদের মতন হাতে ব্রাশের পাতা পেঁচিয়ে বললাম "হ্যাঁ হ্যাঁ মনে আছে"।
 
কিছুটা সময় নিয়ে ভাবতে লাগলাম কিভাবে লোকাল বাসে হকাররা হকারি শুরু করে। তারপর ব্রাশ গুলো হাতে নিয়ে হকারি শুরু করে দিলাম।
 
" ডিয়ার ভাই ও বোনেরা, আপনাদের কি দাঁতের সমস্যা? ঠিকমতন দাঁত ব্রাশ করেন না বলে দাঁতে ময়লা জমে গেছে? দাঁতের গোড়ায় পোকা হয়ে দিন দিন দাঁত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে? মুখের দুর্গন্ধে চারপাশের মানুষের সাঠে ঠিকমতন কথা বলতে পারছেন না? তাহলে এক্ষুনী সংগ্রহ করুন বাংলাদেশের নাভানা কোম্পানির এই মূল্যবান ব্রাশ। সকালবিকাল দুবার এই ব্রাশ করে দাঁগ মাজলে আপনার দাঁত হবে চকচকে ফকফকে"। তারপর ব্রাশের পাতা থেকে একটা ব্রাশ বের করে হাত উঁচু করে সবাইকে দেখিয়ে বললাম "দাম মাত্র দশ টাকা দশ টাকা"। প্লেনের মানুষজন আমার দিকে এলিয়েন দেখার মতন করে তাকিয়ে আছে।
গার্লফ্রেন্ডের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। গার্লফ্রেন্ডের ভয়ে আবার বলা শুরু করলাম। "আমার দাদা ছিলেন বিখ্যাত হকার কালু শেখ, তিনি সারাজীবন ট্রেনে হকারি করেছেন। তারপর তার ছেলে লাল শেখ ছিল আমার বাবা।উনি সারাজীবন বাসে হকারি করছে। আমি লাল শেখের ছেলে ধলা শেখ তাই প্লেনে হকারি করি।"
দেখি পিছন থেকে একটা বয়স্ক মহিলা আমাকে ডাকছে। কাছে যাবার সাথে সাথে উনি আমাকে দশ টাকা দিয়ে হাতের ব্রাশ টা নিয়ে নিলো। 
 
তারপর এক বয়স্ক সাদা লোক আমাকে ডাকলো। উনার কাছে এগিয়ে যেতেই উনি বলল " হ্যালো মিঃ ধলা শেইখ ( ইংরেজরা বাংলা উচ্চারণ করলে যেমন হয়)। আমি বললাম " ইয়েস স্যার"। উনি বললেন " টোমার আইডিয়া আমার খুব পছন্দ হইয়াছে। টুমি একমাত্র হকার যে প্লেন হকারি সূচনা করিয়াছ। যদি নোবেল কমিটি এইরকম মানব সেবায় নোবেল দিতো। টাহলে আমি টোমার নামে ওদের কাচে সুপারিশ করতাম "। আমি খুশিতে বললাম " থ্যাংকইউ স্যার"। 
 
তারপর উনি বললেন " আমাখে দুইটা নাভানা কোম্পানির ব্রাশ দেও"। সাথে সাথে ব্রাশের পাতা থেকে দুইটা ব্রাশ খুলে উনার হাতে দিয়ে দিলাম।
এরমধ্যে দেখি দুইজন এয়ার হোস্টেজ আমার দিকে দৌড়ে আসছে। ভয়ে কলিজা শুকিয়ে গেলো। 
আল্লাহ! আজ নিশ্চিত ওরা আমাকে প্লেন থেকে নিচে ফেলে দিবে। ঠিক তখনি হঠাৎ করে আমার গার্লফ্রেন্ড এগিয়ে এসে ছোট বাচ্চার মতন করে আমাকে বলল " লক্ষী সোনা এমন করে না, চলো চলো সীটে বসো। মানুষ খারাপ বলবে বাবু"। গার্লফ্রেন্ডের এতো সুন্দর ব্যবহার দেখে অবাক হয়ে গেলাম। কিন্তু সেই অবাক আর বেশিক্ষণ থাকলো না যখন সে প্লেনের সবাইকে উদ্দেশ্য করে ইংরেজিতে বলল " আপনারা সবাই ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার স্বামী একজন মানসিক রোগী। উন্নত চিকিৎসার জন্য ওকে আমেরিকা নিয়ে যাচ্ছি"।
 
এবার দেখি প্লেনের সবাই আমার দিকে মায়ার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এয়ার হোস্টেজ গুলার মুখ ও দেখার মতন ছিল। একজন এয়ার হোস্টেজ এগিয়ে এসে আমার হাতে একটা ললিপপ দিয়ে বলল, "এটা খাও, অনেক মিষ্টি।"
 
তারপর প্লেনে আমার আর কোনো সমস্যা হয়নি। গার্লফ্রেন্ড ও খুশি আমিও খুশি।
কিন্তু বাংলাদেশে ফিরবার পর এয়ারপোর্টে বিশাল ভিড় দেখে ভয় পেয়ে গেলাম। পাশের একজন কে বললাম ভাই এতো ভিড় কিসের? লোকটি বলল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নাকি কোন দেশ থেকে বাংলাদেশে এসেছে তাই এতো ভিড়। আমি নিজের মতন একা একা হেঁটে যেইনা এয়ারপোর্ট থেকে বের হচ্ছি। দেখি সবার হাতে আমার ছবি। কেউ কেউ আমার ছবিতে মালা দিয়েছে। কেউ কেউ আমার ছবির নিচে লেখেছে দেশের গর্ব, জাতীর গর্ব মিঃ ধলা হকার। চোরের মতন এয়ারপোর্ট থেকে পালিয়ে বাসায় এসে শুনি কোন হারামজাদা যেন আমার প্লেনে হকারির ভিডিও নেটে ছেড়ে দিয়েছে। তাই বাংলাদেশের হকাররা আমাকে স্বাগতম জানাতে এয়ারপোর্ট গিয়েছিল।
হকার
#রম্যগল্প
 ============================
#বিন্নি_ধানের_খই
#পর্ব_০৪
#মিদহাদ_আহমদ
মাস দুয়েক যেতে না যেতেই শাশুড়ি সবার সামনে প্রকাশ্যে বলে বেড়াতে লাগলেন, আমার মামাকে চার লাখ আর আমার মাকে তিন লাখ টাকা দিয়ে আমাকে এনেছেন তিনি এই ঘরে। আত্মীয়-স্বজন সবার সামনেই যেনো আমি এক লোভী, অপরাধী হয়ে উঠলাম। আমার আত্মসম্মান বলে কোনকিছুই এই বাড়িতে নেই যেনো। বাড়িতে গিয়ে গতমাসে মামাকে এনে সামনাসামনি আমি জিজ্ঞেস ও করেছিলাম, কেন তিনি আমার সাথে এমন করলেন! কেন তিনি আমাকে জেনেশুনে এই নরক যন্ত্রনার মাঝে ঢাললেন! যে ছেলের রাত কাটে মদের বার আর নারীতে মত্ত হয়ে, যে ছেলে আমাকে বিয়ে করতে অসম্মতি জানিয়েছিলো, যে ছেলের সাথে আরও কত মেয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো, জেনেশুনে কেন সেই ছেলের ঘরে আমাকে পাঠালেন!
মামা সেদিন আমাকে জবাব দিয়েছিলো,
 
'আমার বোনকে তোর বাবার ঘরে বিয়ে দিয়ে আমি কী পেয়েছি? আমার একমাত্র বোন বাসন মাজতে মাজতে, সংসারে বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে, মাটির বেড়া দেওয়া ঘর আর ধান মাড়াতে মাড়াতে জীবন পার করে দিলো। আমি মামা হয়ে এই একই জীবন তোকেও দেখতে দিতে পারতাম?'
মাও এসে মামার সাথে এক হয়ে গেলো যেনো! মা আমাকে বসিয়ে বুঝালো
'দেখ মা, তোর এত বড় বাড়ি আছে, আলিশান আছে৷ শ্বশুর, শাশুড়ি পরিবার আছে। দুবেলা দুই মুঠো খেতে পারছিস। আর কী চাই?'
 
আমার ফ্যালফ্যাল করা চোখে তখন আর আটকাতে পারলো না৷ কান্না আসা চোখ নিয়ে মাকে বললাম,
'আমি কি আমার বাবার ঘরে অভুক্ত থেকেছি মা? তুমি কি একদিনও অভুক্ত থেকেছো? বাবা কি তোমাকে এক দিনের জন্যও মানসিক কষ্টে রেখেছিলো?'
মা বললো,
 
'দেখ মা, মানসিক কষ্টের চেয়েও বড় কষ্ট কী জানিস? না পাওয়া। আমার না পাওয়া আমাকে আজীবন শেষ করে দিয়েছে। আমি চাই না আমার এই না পাওয়া আমার মেয়েকে ভর করুক।'
তারপর মা আমার সামনে তার হাত দুইটা তুলে ধরে দেখিয়ে আমাকে বললো,
 
'এই দেখ! এই দেখ আমার হাত দুটো। কী দেখছিস? রঙ উঠা দুই গাছা সিটি গোল্ডের চুড়ি তাইনা? এই হাতে কখনো স্বর্ণ কী জিনিস আমার চেখে দেখা হয়নি। দেখ তোর হাত দু খানা। দুই দুই করে চারগাছা স্বর্ণের চুড়ি। কে পরেছে এমন? আমাদের আশেপাশের কোন ঘরের মেয়ে এমন স্বর্ণের চুড়ি পরে আছে? হাতের দশ আঙুলের মাঝে পাঁচ পাঁচটা স্বর্ণের আংটি, নাকে হীরার নাকফুল, গলায় ভারি চেইন, এসব কার আছে? কাদের আছে রে মা? এই মা কি কখনো তার মেয়েকে এমন দেখতে চায় না? এমন দেখাও কি পাপের?'
আমার ভেতরতা আরও নিশ্বেষ হয়ে যেতে লাগলো। আমার হাতের স্বর্ণের চুড়ি যে আমাকে চিরতরে বেধে রেখেছে! আমাকে কুন্ঠিত করে রেখেছে নিজের স্বপ্নের কাছে, নিজের ইচ্ছার কাছে, নিজের সবকিছুর কাছে। বাবা এমন সময় ঘরে এসে ঢুকলেন৷ আমি বাবার পাশে গিয়ে বসলাম। বাবা জিজ্ঞেস করেছিলেন কেমন আছি৷ সবাই কেমন শ্বশুরবাড়িতে। আমি অবলীলায় মুখে হাসি এনে মিথ্যা বলেছিলাম বাবাকে,
'আমি খুব ভালো আছি।'
বিকালেই গাড়ি চলে আসে আমার বাবার মাটির বেড়া আর টিনের চালা দেয়া বাড়ির সামনে। টয়োটা প্রভোক্স নাম। কালো রঙের গাড়ি। যেনো চকচক করছে! আমার ছোট ভাই বোনেরা গাড়ির সামনে পিছে থেকে সরছেই না যেন! আমাকে এসে জিজ্ঞেস করছে,
'আপু এই গাড়িটা দুলাভাইয়ের গাড়ি? সত্যিই নাকি?'
সহাস্যমুখ এনে ভাইদের বলেছিলাম,
'হ্যাঁ এইটা তোদের দুলাভাইয়ের গাড়ি।'
ভেতরে ভেতরে আমি আবার নিষ্পেষিত হচ্ছিলাম কাকে আমার ভাইদের পরিচয় দিচ্ছি দুলাভাই হিসাবে! সেই পাষণ্ড অমানুষকে?
আমি বের হওয়ার সময়ে সেদিন মায়ের ঠিক আগের কান্ডই চলতে লাগলো। সবাইকে ডেকে এনে আমাকে বিদায় দেয়া। আমার বুঝতে বাকি রইলো না, এই বিদায়ের মাঝে ছিলো লোক দেখানোর বিদায়। মা আমাকে না, বরং আশেপাশের বাড়ির লোকদের ডেকে এনেছিলো আমার গাড়ি দেখানোর জন্য! মানুষের স্বপ্ন এমনও হতে পারে! অথচ আমার যে কখনো এসবে টানতো না। আমার যে এসবে আকৃষ্ঠ করতো না।
এদিকে শাশুড়ি আর ননদ ননাস মিলে আমার জীবনটাকে নরকে পরিণত করে দিতে লাগলো। রাতে ইয়াশ দেরি করে মাতাল হয়ে বাড়ি ফিরতো রোজ রোজ৷ ননাস কল করে আর নাহলে সকালে বাসায় এসে রান্নাঘরে নিয়ে গিয়ে সে কী কথা শুনাতো আমাকে!
অশালীন ভাষার বহর আর সাথে সাথে বলতো,
 
'নারী হয়ে জন্মেছো, জামাই ধরে রাখতে পারো না? নাকি জামাই ধরে রাখার কোন মতলব নাই? কোনটা?'
আমি শুধু নীরবে সয়ে যেতাম এসব। কোন কথা বলতাম না। কোন প্রতিবাদও না৷ আমার ভেতরের আমিটা যেনো কোথায় মারা গিয়েছিলো, সেইটা হয়তো আমিও জানি না।
 
প্রথম রমজানের ইফতারে আমার শ্বশুরবাড়ির সবার মন ভরেনি। আগামীকাল রমজানের বড় ইফতারি আসবে আমার বাড়ি থেকে। শাশুড়ি শুনলাম সকাল থেকেই একে ওকে দাওয়াত দিচ্ছেন আর বলছেন, 'আগামীকাল আমার ছেলের শ্বশুর বাড়ি থেকে বড় ইফতারী আসবে৷ আপনারা সবাই চলে আসবেন।'
শ্বশুর এদিকে প্যান্ডেল বাধাতে লাগলেন ছাদে। শাশুড়ি এসে বললেন,
 
'শুনো, বেশি কাওকে বলিনাই। একান্ত কাছের লোকজন, আত্নীয়-স্বজন সব মিলিয়ে দাওয়াত দিয়েছি দেড়শো জনের মতো। তোমার বাবাকে আগেই কল করে জানিও দিও যে কমপক্ষে দুইশো লোকের ইফতারি যেনো পাঠায়। আর ঈদের কাপড় এখন দিতে সমস্যা হলে, এখন দেওয়ার প্রয়োজন নেই৷ ঈদের বাকি আছে সপ্তাহ দুয়েক। কয়েকদিন পর ঈদের কাপড় দিলে চলবে।'
শাশুড়ির বলা কথাগুলো আমি নীরবে শুনলাম শুধু। নিরুপায় একদিনে আর অন্যদিকে ক্ষোভে, রাগে মাকে কল করে বললাম,
 
'শুনো মা, তোমার বড়লোক মেয়ের সম্মান তো তোমাকে দেখতে হবে তাইনা? এসব ফকিন্নি ঘরের ইফতারি তো আমার বাড়িতে দিলে চলবে না। আর প্রথম রমজানে যা দিয়েছো, তাতে আমার মান থেকে অপমান বেশি হয়েছে। আগামীদিনের ইফতারিতে কি কি দেয়ার পরিকল্পনা চলছে জানতে পারি কি?'
মা আমাকে বললেন,
 
'আরে আমি বুঝেছি মা। আসলে তোর বাবার হাতে টাকা ছিলো না তো। এখন দেখ, তোর বাবা ধান বিক্রি করেছে গত সপ্তাহে তোর বাসায় ইফতারি দিবে বলে। খুব ঘটা করেই দিবে। তুই কোন চিন্তা করিস না। আমরা সবকিছু দিয়েই দিবো যাতে তোর কোন শরম না হয়। তোর বাবা বলেছে আগামীকাল সব মিলিয়ে চল্লিশ জনের ইফতার আমরা পাঠাতে পারবো। টাকা বারো হাজার লোকটা আলাদা করেই রেখেছে তোর বাড়িতে ইফতারি দিবে বলে। সবকিছু কিনেই পাঠাবো৷ আর হ্যাঁ, খেজুর, দই, ফলফ্রুট সব যাবে মা। কোন চিন্তার কারণ নেই। তুই কিচ্ছু চিন্তা করিস না।'
 
মায়ের মুখে জন চল্লিশের ইফতারি দেয়ার খবর শুনে আমি আকাশ থেকে পড়লাম যেনো! কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলাম আমি সেই মুহূর্তে।
 
[গল্প পড়ার পর লাইক কমেন্ট করে যাবেন৷ রিচ থাকে ২ হাজার+ আর লাইক আসে ২/৩০০? একটা লাইক, কমেন্ট করে গেলে কী হয়? আপনাদের লাইক কমেন্টে আমার গল্পের রিচ বেড়ে যায়। এজন্যই লাইক কমেন্ট করতে বলি। অন্য গ্রুপ গুলায় এই 'বিন্নি ধানের খই' গল্পের প্রতি পর্বেই লাইক থাকে ৫/৬ হাজার, কমেন্ট থাকে ১/২ হাজার। সর্বপ্রথম আপনারাই এই গল্প আমার গ্রুপে পান। সেই গ্রুপে গল্প অনেক পরে দেই৷ অথচ আমার গ্রুপেই আপনারা লাইক করেন না৷ কমেন্ট করেন না। আজকের পর্বে মিনিমাম ৬০০ লাইক আর ১৫০+ কমেন্ট চাই। সবাই পড়ে অবশ্যই লাইক কমেন্ট করে যাবেন।]
(চলবে)

 
 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url