অতৃপ্ত অশরীর আত্মা | P-3 (Full & Final) Insatiable incorporeal soul
#অতৃপ্ত অশরীর আত্মা
#পর্ব_০৩
#শেষ_পর্ব
কী ভয়ঙ্কর কন্ঠ!! জোরে জোরে হাসছে আর বলছে কী ভেবে ছিলি?? এখান থেকে চলে যাবি?? তোর কি মনে হয় তুই এখানে আজ তোর নিজের ইচ্ছেতে থেকেছিস?? আরে আমি তকে এখানে আটকে রেখেছি!!!!তুই যেই খানেই যাস না কেন আমি তোর পিছন ছাড়বো না!! নীলার পুরো রুম কারো অট্টহাসিতে ফেটে যাচ্ছে!! নীলা একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো!!
একটু পর একটা অদৃশ্য ছায়া নীলার বাবার গলা চেপে ধরলো। নীলার মা ও নীলা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কেউ একজন বলছে বিয়ে তো দূরের কথা কেউ যদি নীলার বিয়ার কথাও চিন্তা করে আমি থাকে মেরে ফেলবো।
যে নীলার বিয়ের কথা ভাববে আমি তাকে মেরে ফেলবো!! এই কথাটা শুনে নীলার বাবা খুব ভয় পেয়ে গেলো!! ওনি মনে মনে বলছে হায়রে কপাল!! নীলাকে বাঁচানোর একটা মাত্র উপায় ই ছিলো!! আর আজ সেটাও শেষ হয়ে গেলো!! আমি এখন কী করে নীলাকে বাঁচাবো!! কার কাছে যাবো!! আমি এখন কী করবো!! নীলার বাবা কান্না করতে শুরু করে দিয়েছে!!!
নীলা ওর বাবার কাছে গেলো আর ওর বাবাকে বললো বাবা তুমি কেদোঁ না দেখো উপর ওয়ালা একটা না একটা ভাল উপায় বের করে দেবেই!! তুমি একটু শান্ত হউ! নীলার মা ও খুব ভয় পেয়ে আছে!! নিজের মেয়ের সাথে এতটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটলে সব বাবা মারই ভয় পাওয়ারি কথা!!! নীলার মা নীলার বাবার পাশে বসে কাদঁতে থাকলো!!
নীলার ওদের কান্না দেখে খুবই খারাপ লাগছিলো! নীলা ভাবছে আজ শুধু আমার জন্য আমার মা বাবাকে কাঁদতে হচ্ছে! আমাকে কিছু একটা করতেই হবে!! পরের দিন সকালে নীলা ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে ভার্সিটিতে গেলো!! ভার্সিটিতে যাওয়ার পথে একটা ছেলে হাত দিয়ে নীলাকে বাজে ইঙ্গিতে ইশারা করছিলো!! নীলার মনটা এমনিতেই খুব খারাপ ছিলো!! তাই নীলা একটু বিরক্ত বোধ করছিলো!!
নীলা ছেলেটার কাছে গেলো! জিজ্ঞেস করলো তোমার সমস্যা টা কী?? এভাবে ইশারা করার মানে কী?? ছেলেটা নীলার সাথে বাজে ভাষায় কথা বলছিলো!!! নীলা ছেলেটাকে চড় মারার জন্য হাত উঠালো!! আর ছেলেটা নীলার হাতটা ধরে ফেললো!! নীলা খুবই রাগ হলো আর বললো আমি আজই পুলিশের কাছে যাবো!!
ছেলেটা বললো আরে যা যা!! তুই জানিস না তুই কার সাথে ঝামেলা করছিস!! নীলা ওর বান্ধবীর সাথে ছেলেটার বিষয় নিয়ে আলোচনা করলো!! ওর বান্ধবী নীলাকে বললো এই সব ছেলেদের সাথে ঝামেলা না করাই ভালো নীলা! ওরা বড় লোকের বাজে ছেলে!! ওরা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে!! ছেড়ে দে নীলা!! আর কোন ঝামেলার দরকার নেই!! এমনিতেই তুই একটা ঝামেলাই ফেসে আছিস!!
নীলা ওর বাবাকে এই বিষয় টা সম্পর্কে জানালো না!! কারন ওনি এমনিতেই অনেক চিন্তায় আছে!! তার উপর ওনাকে এই সব জানালে আরো বেশি টেনশনে থাকবেন!! নীলা ভার্সিটি থেকে বাড়ি চলে আসে!!! এসে খাওয়া দাওয়া শেষ করে শুয়ে পরে!!!আজ রাতে আর কিছু ঘটেনি!! খুব ভোরে মোবাইল এর রিংটনের শব্দে নীলার ঘুম ভাঙ্গলো!!
নীলা ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে তার বান্ধুবি ফোন করেছে!! নীলা ফোনটা ধরলো!! নীলার বান্ধবী ভয় এ ভরা কন্ঠে বললো দোস্ত একটা ঘটনা ঘটে গেছে!! নীলা জিজ্ঞেস করলো কী হয়েছে?? নীলার বান্ধবী বললো!! তোকে যে ছেলেটা রাস্তায় বিরক্ত করে ছিলো না!! যাকে তুই থাপ্পড় মারতে গিয়েছিলি!! যে তোর হাতটা ধরে ফেললো!! নীলা বললে কি হয়েছে ওর?? ওর বান্ধবী বললো ওর একটা হাত কে যেন কেটে ফেলেছে"!!!
নীলা এই কথাটা শুনা মাএই ভয়ে চমকে উঠলো!!! নীলার সমস্ত শরীর ভয়ে কাপতে থাকলো!!! নীলা ওর বান্ধবীকে জিজ্ঞেস করলো কী করে হলো এই সব!!! ওর বান্ধবী বললো তা জানি না!! কিন্তু ছেলেটা নাকি হাসপাতালে আছে!! নীলা বুঝতে পারে এটা ওরি কাজ!! ওই ছেলেটা আমার হাত ধরেছে বলে ও ওর হাতটা কেটে দিয়েছে!!
নীলা খেয়াল করলো তার রুমে আবার সেই অট্টহাসি!!! কেউ একজন জোরো জোরে হাসঁছে!! নীলা আজ আর ভয় পেল না!!! নীলা জিজ্ঞেস করলো কে তুমি??? কি চাও আমার কাছে!!? আমাকে এই সব থেকে মুক্তি দাও প্লিজ!!কেউ একজন কান্নার সুরে বলতে লাগলো কে আমি জানতে চাও! আমি কেন তোমার পিছনে পরে আছি? তাহলে শুনো!!! আমি সেই ছেলে যে তোমাকে পাগলের মতো ভালবাসতো!! জানো আমার নাম কী??? নীলা বললো কী নাম তোমার??? আমার নাম জুনায়েত! নীলা চমকে উঠলো জুনায়েত!? সেই জুনায়েত যে আমাদের ভার্সিটির ফাস্ট বয় ছিলো!! হ্যা আমি সেই জুনায়েত!!!!
কিন্তু তুমি তো হারিয়ে গিয়েছিলে!!! তাহলে তুমি এখানে কী করে এলে?জুনায়েত এর আত্মা বললো আমি হারিয়ে যায়নি আমাকে মেরে ফেলা হয়েছে!? নীলা বললো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না!! তুমি আমকে সব খুলে বলতো!!!নীলা আমি তোমাকে খুব ভালবাসতাম,!! নীলা বললো কিন্তু এই কথাটা তুমি তো আমাকে কখনো বলোনি!!!ও বললো হুম বলিনি!! কিন্তু বলতে গিয়েছিলাম!! তোমাকে যে বড় লোকের ছেলেটা মানে রানা পছন্দ করতো সে বলতে দেয়নি!!!
নীলা বললো কিন্তু রানা তো মারা গিয়েছে!!! ও বললো ও মরেনি আমি ওকে মেরে ফেলেছি!!!আমি যে তোমাকে ভালবাসতাম এই কথাটা তুমি জানার আগেই!!! রানা ওই গুন্ডা ছেলেটা জেনে যাই!!!! দিনটা ছিলো শনিবার!! হালকা বৃষ্টি হচ্ছিলো!!! আমি এক গুচ্ছ ফুল হাতে তোমার কাছেই আসছিলাম!! কিন্তু রানা আমাকে তোমার কাছ পর্যন্ত আসতে দেয়নি!!!ও আমাকে রাস্তায় গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলে!!!
ও এবং ওর বন্ধুরা মিলে ভার্সিটির পাশের জঙ্গলে আমার লাশটাকে মাটি চাপা দিয়ে রেখেছে!!!!কথা গুলো শেষ করে জুনায়েত এর আত্মা চিৎকার করে কাদঁতে থাকলো আর বললো কি দোষ করে ছিলাম আমি নীলা??? শুধু তোমাকে ভালবেসে ছিলাম!! তার জন্য আমাকে জীবন দিতে হলো!!! নীলাও কথা গুলো শুনে কাদঁতে থাকলো!!!
নীলা বললো কিন্তু এই সব কিছুতে আমার দোষ কোথায় জুনায়েত?? তুমি কেন আমার সাথে এসব করছো!!তোমার সাথে খুব খারাপ হয়েছে কিন্তু এতে আমার তো কোন হাত নেই!!!জুনায়েত এর আত্মা চিৎকার করে বললো আমি তোমাকে ভালবাসি নীলা!!! ওর চিৎকারের আওয়াজে বাড়ির সমস্ত জিনিস গুলো কাপতে থাকে,!!! নীলার বাবা মা খুব ভয় পেয়ে যায়!!
জুনায়েত এর আত্বা আরো বললো তোমাকে পাওয়ার বাসনা আমার এই অতৃপ্ত আত্বাকে এখনো উৎপীড়ন দেয়!!! আমি তোমাকে ঠিক আগের মতই ভালবাসি নীলা!! নীলা বললো কাউকে জোর করে ভোগ কারাকে কী ভালবাসা বলে জুনায়েত??? তুমি আমার সাথে যেটা করছো এটা ভালবাসা নয়!!! তুমি আমার সাথে জোর করছো!!! জুনায়েত এর আত্বা বললো আমি তোমার সাথে যা করেছি তার সবই তোমাকে পাওয়ার জন্য করেছি!!
জুনায়েত এর আত্মা আরো বললো আজ আমি এই পৃথিবীতে আছি শুধু আমার মা আর তোমার জন্য!! আমি এই পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার পর আমার মা খুবই কষ্টে আছে!!! এই দুটি কারনই আমাকে এই পৃথিবী মুক্তি দিচ্ছে না!!নীলা বললো তুমি আমাকে এসব থেকে মুক্তি দাও!!! জুনায়েত এর আত্বা চিৎকার করে বলছে না আমি কোথাও যাবো না!! আমি সব সময় তোমার পাশে অদৃশ্য ছায়া হয়ে থাকবো!! আর তোমাকে সকল বিপদ থেকে রক্ষা করবো!! নীলা বুঝতে পরলো একে কোন ভাবেই বুঝাবো সম্ভব নয়!!! একে বুঝানো খুব কঠিন একটা কাজ!!! নীলা মনে মনে বললো একে বুঝাতে হলে অন্য পথ অবলম্বন করতে হবে!!! নয়তো ও উল্টা পাল্টা কিছু করে ফেলবে!!
নীলার হঠাৎ মনে পারলো জুনায়েত এর মা এর কথা!! একমাত্র ওর মা ই পারে ওকে এখান থেকে মুক্ত করতে!!! নীলা তারা তারি ভার্সিটিতে চলে গেলো!!! ও খান থেকে জুনায়েত এর বাসার ঠিকানা বের করলো!!! নীলা সরাসরি চলে গেলো জুনায়েত এর বাসায়!!! গিয়ে দেখলো জুনায়েত এর মা খুবই কষ্ট আছে!!! নীলা জুনায়েত এর মাকে ওর সাথে ওদের বাড়িতে নিয়ে এলো!!!
নীলা জুনায়েত এর মাকে বললো আপনার আর কোন ভয় নেই!!! আর কোন কষ্ট নেই আপনি আজ থেকে এই বাড়িতেই থাকবেন!!! নীলা জুনায়েত এর মাকে সব খুলে বললো আর বললো আপনার ছেলে আপনার জন্যই এই পৃথিবীতে পরে আছে!!!! আপনি ওকে এখান থেকে চলে যেতে বলুন!!! জুনায়েত এর মা সব কথা শুনে কাঁদতে থাকলো!!!
আর বললো কোথায় আমার ছেলে!!!! নীলা ওর রুমে আসলো!! আর ডাকলো জুনায়েত জুনায়েত!!!! সঙ্গে সঙ্গে জুনায়েত এর অদৃশ্য আত্মা এসে হাজির!!! নীলা বললো দেখো কাকে নিয়ে এসেছি?? নীলা জুনায়েত এর মাকে ভিতরে ডাকলো!! জুনায়েত এর আত্বা ওর মাকে দেখে চিৎকার করে বলছে মা ওরা আমাকে তোমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে!! জুনায়েত এর মা বললো বাবা আমি তোকে দেখতে পাচ্ছি না কেন??? জুনায়েত এর আত্বা বললো মা আমি আর বেঁচে নেই!
তুমি আমাকে দেখতে পাবে না!! তুমি কেমন আছো মা??? জুনায়েত এর মা বললো আমি খুব ভাল আছি বাবা!! এই নীলা আমাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে এসেছে!! ও খুব ভাল একটা মেয়ে!! তুই ওর জীবন থেকে চলে যা বাবা!! তুই আর ওর সাথে খারাপ কিছু করিস না!! এটা তোর মায়ের আদেশ!! জুনায়েত কখনো ওর মায়ের আদেশ অমান্য করেনি!!!
আজও করলো না!!! জুনায়েত এর অদৃশ্য আত্মা ওর মাকে কথা দিলো ও আর কখনোই নীলাকে বিরক্ত করবে না!! যখন নীলা কোন বিপদে পরবে আর ও আমাকে ডাকবে আমি তখনই আসবো ওকে সাহায্য করতে!!! জুনায়েত এর অদৃশ্য আত্বা নীলার কাছে গেলো আর বললো আমার মায়ের খেয়াল রেখো!!! আর নীলা একবার বললো না আমাকে তুমি ভালবাস!!! নীলা বললো আমি তোমাকে ভালবাসি!!! এই কথাটা শেষ করে নীলা জুনায়েত এর অদৃশ্য আত্বাকে ডাকলো! কিন্তু এবার আর কোন আওয়াজ আসলো না!! তার মানে জুনায়েত চলে গেছে! জুনায়েত এর অদৃশ্য আত্বা ওর কথা রেখেছে! ওর আর কখনো নীলাকে বিরক্ত করেনি!!!
কিছুদিন পরের কথা নীলা রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো!! কয়েকজন ছেলে নীলাকে খুব বিরক্ত করছিলো!! নীলার খুব খারাপ লাগছিলো!! নীলা ওর চোখ বন্ধ করলো আর মনে মনে জুনায়েত কে ডাকলো!! নীলা চোখ খুলে দেখতে পেল একটা উড়ন্ত লাঠি ছেলে গুলোকে মারছে!! নীলা বুঝতে পারলো জুনায়েত ওকে সাহায্য করতে এসে গেছে!!! এর পর থেকে নীলা যখনি কোন বিপদে পরতো জুনায়েত এর অদৃশ্য আত্বা ওকে সাহায্য করতে চলে আসতো!!!! এভাবেই আমি আরো একটা অসমাপ্ত ভালবাসার গল্পের সমাপ্তি ঘটালাম।
........... সমাপ্ত..........
#অতৃপ্ত_অশরীয়া_ছায়া আরেকটা গল্প আছে আপনারা জদি পড়তে চান তাহলে কালকে দিবো আর কমেন্ট করে জানাবেন।