একজন মনের মত মানুষ চাই। মোবাইল নাম্বার ভিডিওতে দেওয়া আছে। Moner Moto Akjon Manush Cai | Episode#06
একজন মনের মত মানুষ চাই। মোবাইল নাম্বার ভিডিওতে দেওয়া আছে। Moner Moto Akjon Manush Cai | Episode#06
একজন মনের মত মানুষ চাই। মোবাইল নাম্বার ভিডিওতে দেওয়া আছে। Moner Moto Akjon Manush Cai | Episode#06
আজ পরিবারের সাথে প্রথম রোজার সাহরি খেয়ে একটা আরামের ঘুম দিয়ে সকাল নয়টায় উঠলাম। রুম থেকে বের হয়ে যা দেখলাম তা আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা। খাবার টেবিলে বসে বাবা ও ছোটবোন সকালের নাস্তা করছে। আমি অবাক হয়ে বললাম "তোমরা এখোন খাচ্ছো কেন?" রান্নাঘর থেকে মা বললো "খাবেনা তাহলে কি তোর জন্য না খেয়ে অপেক্ষা করবে? এতো বেলা করে কেউ ঘুম থেকে উঠে?" আমি বললাম "তোমরা রোজা রাখোনি?" আমার কথা শুনে সবাই হাসাহাসি শুরু করলো। বাবা বললো "তোর এখোনো ঘুম ভাঙ্গেনি। চোখেমুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ হয়ে তারাতারি খেতে আয়।" আমার মনে হচ্ছেনা তারা আমার সাথে মজা করছে। বরং আমি যা বলছি তাতেই তারা হাসাহাসি করছে। আমি কিছুটা হতাশ হয়ে বললাম "আমার ক্ষুদা নেই, এখোন খাবোনা।"
তারপর নিজের রুমে ফিরে এসে বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করছি। আমার ভালো করেই মনে আছে সবাই মিলে একসাথে সাহরি করলাম। তাহলে কি আমি অন্য কোনো সময়ে চলে এসেছি? ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলাম তারিখ, বার, সাল সব ঠিক আছে। কিছুক্ষন চুপ করে বসে রইলাম। হঠাৎ মা এসে বললো,"কীরে এখোনো বসে আছিস? তারাতারি তৈরী হয়ে নে। তোর বাবা আজ অফিস ছুটি নিয়েছে। আজকেই তোর বিয়ের সব কেনাকাটা করে ফেলবো।"
এবার আমি পুরো থমকে গেলাম আর বললাম "আমার বিয়ের কেনাকাটা করবে মানে!" মা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো "আর মাত্র এক মাস আছে তোর বিয়ের। এখোন কেনাকাটা না করলে পরে তোর বাবার সময় হবে? তারাতারি তৈরী হয়ে নে।" মা এমনভাবে বললো যেন বিয়ের বিষয়টা আমি আগে থেকেই জানি আর অনেকদিন আলোচনা করেই আমার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। অথচ আমি কিছুই জানিনা। আমার বিয়ে কার সাথে হচ্ছে সেটাও পর্যন্ত আমি জানিনা।
আমার সাথে অদ্ভুত কিছু একটা ঘটছে সেটা বুঝতে পারছি। আবার তা বিশ্বাস করতেও পারছিনা। একসময় বাধ্য হয়ে সবার সাথে চলে গেলাম বিয়ের কেনাকাটা করতে। কেনাকাটা শেষ করতে করতে বিকেল হয়ে গেলো। শপিংমল থেকে বের হয়ে সবাই গাড়িতে বসলাম।
বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো "যাক, অবশেষে তোমাদের কেনাকাটার অধ্যায় সম্পুর্ন হলো।" মা কিছুটা বাকা শুরে বাবাকে বললো,"শুধু কি আমরাই কিনেছি? নিজের জন্যে মনে হয় কিছুই কেনেনি!" এভাবে তাদের মাঝে চলতে থাকা খুনসুটি মিষ্টি ঝগড়াগুলো ছোট থেকেই দেখে আসছি। তবে আমি অবাক হয়ে গেলাম তখন, যখন মা আমাকে বললো,"কীরে, তোকে তো মেরে বকেও কখোনো শাড়ি পরানো যায়না। আর আজ তুই শাড়ি কিনলি যে? তবে শাড়িটা অনেক সুন্দর হয়েছে।" আমি সাথে সাথেই বললাম, "আমি নিজে কিনতে চাইলাম কই? তোমরাইতো আমার বিয়ের জন্য শাড়ি কিনতে আসলে।" সবাই আমার দিকে এমনভাবে তাকালো যেন কথাটা বলে আমি অন্যায় করে ফেলেছি। ছোটবোন মুখে হাত দিয়ে হাসছে, মা বললো "তোর বিয়ে করার ইচ্ছে হয়েছে সেটা বুঝানোর জন্য এই ঈদে শাড়ি কিনলি নাকি!" বাবা কিছুটা ঠাট্টা করে বললো "আমাদেরকে ছেড়ে চলে যাওয়ার এতো ইচ্ছে তোর? এখোনি বিয়ের চিন্তা একদম মাথায় আনবিনা কিন্তু।" আমি কিছুই বলতে পারছিনা। মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছেনা।
হঠাৎ বাহিরে খেয়াল করলাম। রাস্তার পাশে বাজারে রমজান মাসের বিকেলের ইফতার বাজারের মতোই সাজানো আছে বিভিন্ন খাবার। আলুর চপ, বেগুনি, পিঁয়াজু আরো কত কিছু। তাহলে তো আজকে রোজা আর মা বললো আমরা নাকি ঈদের কেনাকাটা করেছি। তারমানে তো সব ঠিকই আছে। আমি স্বাভাবিক পরিবেশেই আছি। সকালে যা হয়েছে সেটাও ভুলতে পারছিনা। তবে সবশেষে আমি স্বাভাবিক সময়েই আছি সেটা ভেবে কিছুটা শান্তি লাগছে। আর সবচেয়ে বড় আনন্দের বিষয় হলো হঠাৎ বিয়ে নামক শব্দের যেই ধাক্কাটা খেয়েছিলাম সেটা থেকে আমি বেঁচে গেছি।
বাসায় পৌছে ফ্রেস হয়ে ফেসবুকে একটা পোস্ট করলাম। "সবাইকে পবিত্র মাহে রমজান এর শুভেচ্ছা। রমজানুল মোবারক।" এক মিনিটে সেখানে দশটা হাহা রিয়েক্ট। এমন পোস্ট এ কেউ কীভাবে হাহা রিয়েক্ট দিতে পারে আমি তা ভাবতেও পারছিনা। একজন কমেন্ট করলো,"অনেকদিন হয়তো না খেয়ে আছে আপুটা তাই রোজা রোজা লাগছে। কেউ তাকে একটা বিস্কুট দিয়ে সাহায্য করুন।" হঠাৎ এক বন্ধুর কমেন্ট দেখে আমি যেন পাথর হয়ে গেলাম। সে লিখেছে, "বুঝছি, সবাইকে না খাওয়ানোর ধান্দা করতাছোস। কিন্তু এসব ধান্দায় লাভ হবেনা। তোর বিয়ে তুই রোজা রাখ। আমরা এখোন থেকেই খাওয়ার জন্য পেটকে প্রস্তুত করতাছি।" আবার সেই বিয়ে! ফোনটা রেখে চলে গেলাম পাশের রুমে। বাবা মা কে দেখে কিছুটা ব্যাস্ত মনে হচ্ছে। মা আমাকে দেখেই বললো, "তোর পরিচিত কাউকে দাওয়াত করা বাকি আছে কীনা একটু দেখিস তো।"
তারমানে অল্প সময়ের জন্য সব ঠিক হয়ে গিয়েছিলো আর এখোন আবার সব অদ্ভুতভাবে ঘটছে! সবকিছু এতোটাই স্বাভাবিকভাবে ঘটছে যে আমি বারবার বলতে চেয়েও কাউকে কিছু বুঝাতেই পারছিনা। শুধু আমার কাছেই সবকিছু অস্বাভাবিক। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। অনেকটা অমনোযোগী হয়েই ফোনটা রিসিভ করে সালাম দিলাম।
ওপাশ থেকে বললো,"আজ সারাদিন একটুও খোঁজ নিলেনা যে?" আমার এমনিতেই অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করেনা। তারপর এই পরিস্থিতিতে মাথাও ঠিক নেই। কিছুটা বিরক্ত হয়েই বললাম, "আমি কি আপনার বেতনভুক্ত কর্মচারী নাকি যে প্রতিদিন সময় করে আপনার খোঁজ নিতে হবে?" সে বললো,"এতো রেগে আছো কেন? শুনলাম আজ বিয়ের কেনাকাটা করেছো। শাড়ি পছন্দ হয়নি?" আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম সে কীভাবে জানলো। সে বললো,"তোমার বোন বলেছে। তাছাড়া হবু বউয়ের একটু খোঁজ খবর তো রাখতেই হয়।" আমি বললাম,"কে আপনি?" সে বললো,"আমাকে চিনতে পারছোনা? আমি অভি। নাম্বারটা কি ডিলিট হয়ে গেছে নাকি?"
ফোন স্ক্রীন এ তাকিয়ে খেয়াল করলাম নাম্বারটা "অভি" নামে সেভ করা আছে। কিন্তু আমিতো কখোনো এই নামে কোনো নাম্বার সেভ করিনি। উফফ্! সবকিছু ভেবে হয়তো পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমাকে জানতেই হবে কী ঘটছে আর কেন ঘটছে। কে এই অভি? তার সাথে আমার কীভাবে পরিচয় হলো? আমার তার সাথে এই বিষয়ে কথা বলা প্রয়োজন। হয়তো সে আমাকে বিষয়টা বুঝতে সাহায্য করতে পারবে। আমি তাকে বললাম তার সাথে আমি দেখা করতে চাই। এবং কালকেই দেখা করতে চাই। সে খুব সহজভাবেই রাজি হয়ে গেল। কোথায় দেখা করবে সেটাও জানিয়ে দিলো।
পরের দিন সকালে তারাতারি ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে অভিকে কল দিয়ে জানালাম যে আমি বের হচ্ছি। অভির দেওয়া ঠিকানায় পৌছে আমি তার জন্য অপেক্ষা করছি। চুপ করে বসে ভাবছি আমার সাথে কী ঘটছে। শপিং করতে গিয়ে তখন সবকিছু আবার কেন স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিলো! কখোনো ভাবিনি এমন রহস্যময় কিছু বাস্তবে ঘটতে পারে এবং এখন আমার সাথেই ঘটছে। তবে আমাকে এই রহস্য খুঁজে বের করতেই হবে। একদিকে আমি অভিকে একদমই চিনিনা আর অন্যদিকে অভি আমাকে খুব ভালো ভাবেই চিনে। মাঝখানে ঘটে যাওয়া রহস্যে লুকিয়ে থাকা সময়ের ঘটনা গুলোই অভির কাছ থেকে আজ জেনে নেওয়ার অপেক্ষায় আছি........
রহস্যের_খোঁজে
#১মপর্ব
লেখা_জেসমিন_দিয়া
রহস্য খুঁজে বের করতে সাথেই থাকুন...