অশরীরী সাইকো | Story- Oshoriri Psycho
মেয়েটি ছেলেটিকে বলল, "আজকে বাসা খালি আছে।চলে আসো"।
আমি রুমে আছি। রুমমেট প্রেমিকার সাথে ভিডিও কলে কথা বলতেছে।
মেয়েটির কথায় ছেলেটিও "হ্যা" বলে।এদিকে ছেলেটি আমার থেকে কনডমের টাকা নিয়ে বের হয়ে পড়ে। তাতে আমার কি,আমি সিঙেল মানুষ, চিত হয়েই শুয়ে থাকা শ্রেয়। তার ঠিক ১ ঘন্টা পর একটা ফোন আসে,যে আমার রুমমেট নাকি মারা যায়। তার লাশ পাওয়া যায় ঢাকায় অবস্থিত একটা পুরনো বাড়ির সামনে। তাড়াহুড়া করে আমি বেরিয়ে পড়ি।গিয়ে দেখি ওর হাত আলাদা,পা আলাদা,মাথাটাও বাদ নেই,সেটাও আলাদা।এতো ভয়ংকর ভাবে কে মারলো?সে এসেছিলো সেক্স করতে। তবে এ অবস্থা কেন?
পুলিশ এসে আমাকেই ধরলো। অপরাধী হিসেবে নয়, আমি কিছু জানি কিনা,তা জানার জন্য। পুলিশকে আমি সব সত্যটাই বললাম। এই কারণেই, যদি আবার আমাকে ফাসিয়ে দেয়।বলা তো যায়না,
আকাশে যত তারা,পুলিশের ততই দ্বারা।
জিজ্ঞাসাবাদের পর আমি চলে আসি বাসায়। আম্মু অনেক্ষন থেকেই কল দিচ্ছিলো। এতক্ষন ব্যস্ত থাকায় রিসিভ করা হয়নি। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আম্মু বলল, " রিয়াজ,তোর চাচাতো ভাইকে তো পাওয়া যাচ্ছেনা গতকাল থেকে "। আমি অবাক হয়ে বললাম," কেনো? কোথায় গিয়েছিলো"। আম্মু বলে" কাল সন্ধ্যা বের হয়েছে,আর আজ সন্ধ্যা হয়ে গেলো,কোনো খবর নেই"। আম্মুর কথাটার পর আমার চোখ যায় সোজা টিভিতে। টিভি দেখে বুকের ভিতর চিন করে উঠে আমার। নরম গলায় আম্মুকে বললাম," ফোন রাখো মা,জলদি টিভি চালু করো"। বলেই আমি ফোন রেখে দিলাম। টিভিতে নিউজ দিচ্ছে,
" ব্রেকিং নিউজ। আজ সকাল হাবু মঞ্জিলের সামনে একটা লাশ পাওয়া যায়। বিষয়টা নিয়ে সবাই মাতামাতি করার ইতিমধ্যে নতুন আরেকটা লাশ পাওয়া গেছে। লাশের কোনো পরিচয়ের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। তাই ওর পরিবারের প্রতি অনুরোধ, লাশটির পরিবার ঢাকা মেডিকেলের মর্গে এসে যেনো যোগাযোগ করেন।"
লাশটি আর কারো নয়,ওটা আমার চাচাতো ভাইয়ের লাশ। অদ্ভুত ব্যাপার, চাচাতো ভাই থাকে গ্রামে, ঢাকা হাবু মঞ্জিলে আসলো কি করে। তখনি একজন রিপোর্টার মাইক হাতে নিয়ে, বলা শুরু করে," আজ যে দুইটা লাশ পাওয়া যায়,দুইজনের পকেট থেকেই পুলিশ উদ্দ্বার করে কনডম।অনেক বড় রহস্যের মাঝে পড়ে যায় সবাই।দুইটা খুনের কারণ একটাই কি? নাকি দুজনের খুনিটাই একজন। আপডেট খবর পেতে আমাদের সাথে থাকুন, সময় টিভি"।
এই রিপোর্টাররা আজকাল কি শুরু করলো কে জানে। বানিয়ে বানিয়ে কতো কাহিনী তৈরি করে।প্রথম বন্ধুর পকেটে কনডম পাওয়া যায়,তা আমিও জানি।কিন্তু চাচাতো ভাই কনডম নিবে কেন।রিপোর্টার লোকদের দোষ দিয়ে কি হবে, তাদের কাজই এইটা। এদিকে আমার গ্রাম থেকে একজনের পর একজন শুধু কল দিয়ে যাচ্ছে। চাচাতো ভাইয়ের মরার সংবাদ শুনতে শুনতে বোরিং হয়ে গেছি। কোথায় সবাই এসে লাশ উদ্ধার করবে তা নয়,উল্টো কান্নাকাটি জুড়ে দিলো। কান্নাকাটি সত্যিই মন খারাপ করে দেওয়ার অন্যতম কারণ।
গ্রাম থেকে শুনলাম পরে অনেকে এসেছে লাশ নিতে। আমাকে যেতে বলেছে,তবে যাইনি।কেনো যেনো মন সায় দিচ্ছিলো না। বারান্দায় বসে নিকোটিনের ভিতর হারিয়ে গেলাম। চিন্তার বিষয় আছে, একদিনে,আমার পরিচিত দুজন লোক,তাও একি বাড়ির সামনে কিভাবে মরতে পারে। তারচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছে এইটা, ওদের পকেটের অন্যকিছু কোথায়,শুধু কনডমটাই কেনো রয়ে গেলো। রহস্য কি?
ফেসবুকে ঢুকতেই অনেকের পোষ্ট দেখলাম, ওমুক মরছে কনডম নিয়ে,নিশ্চয় সে আকাম করতে গিয়েছিলো।তমুক মরে যাওয়ার কারণে আমরা শোকাহত।তবে এর রহস্য হয়তো নষ্টামো থেকে।
আজকাল ফেসবুকের ছেলে মেয়েরা লিজেন্ড হয়ে যাচ্ছে। আদালতের বিচার ওরাই করে ফেলে। পারে কিভাবে এরা..?
অসহ্য লাগলো ফেসবুকের এসব কারণ। গবেষকের অভাব নেই, কাজের সময় কেও নেই।
চিন্তা করলাম সে বাড়িতে যাবো কি? সেখানে জড়িয়ে আছে কি কোনো রহস্য? হয়তো বা। কিন্তু পুলিশ তো বাড়িটি তাদের আয়াত্ত করে রেখেছে। গেলে এখন ভেজাল হতে পারে। প্রথম লাশ পাওয়ার পর সবাই শান্ত হলেও, পরের লাশ পাওয়ার পর বাড়িটি আর সেটা নেই। পুরো বাড়িতে গার্ড লাগানো হয়েছে। তবে যাইহোক, রহস্য তো আমাকে জানতেই হবে। বারান্দায় বসে ভাবছিলাম, তখন দেখলাম, রাস্তা দিয়ে কয়েকটা ছেলে মেয়ে যাচ্ছে। মেয়ের কাধে ছেলের হাত,মেয়ের হাত ছেলের পিঠে। চোখ সেদিকে দিয়ে লাভ নেই, সিঙেল মানুষ ওসব দেখতে নেই। কিন্তু চোখ সরানোর আগেই চোখটা আটকে গেলো তাদের দিকে। লোমহর্ষ এক ঘটনা ঘটে যায় মুহূর্তের মধ্যে। একটা লাল রঙের গাড়ি এসে,সোজা ওদের সামনে দাঁড়ায়। দুজন ছেলে আর দুজন মেয়ে ছিলো ওখানে ।
গাড়ি ওদের সামনে আসতেই তারা দাঁড়িয়ে যায় । ওদের সামনেই গাড়ি থেকে নেমে আসে একজন লোক। কালো শার্ট,কালো গেঞ্জি,কালো প্যান্ট আর কালো চশমা চোখে দেওয়া। রাতের বেলায় কেও সানগ্লাস পড়ে,প্রথম দেখলাম।তবে ঘটনাটা মনোযোগ দিয়ে দেখার ইচ্ছে হলো আমার। ভালো ভাবেই লক্ষ করছিলাম ঘটনাটা।লোকটি ওদের সামনে এসে কি যেনো বলছিলো। ওরাও লোকটির সঙে কথা বলছে। এখান থেকে আমি কিছু না শুনলেও,আন্দাজ করতে পারছি তর্ক করছে তারা। এক সময় লোকটি তার হাতটা পকেট থেকে বের করে। অদ্ভুত কান্ড,লোকটির হাতের সাথে, ওনার পকেটের ভিতর থেকে ইয়া বড় একটা তলোয়ার বের হয়। ঝিকমিক করছে সে তলোয়ার। আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি ওদের দিকে। অবশ্য আমি বেশি দূরেও না, প্লাটের ৩য় তলার বারান্দায় বসে আছি। লোকটি সে তলোয়ার দিয়ে লাল গেঞ্জি পড়া ছেলেটির মাথা কেটে ফেলে দেয়। সঙে সঙে ওর সাথের মেয়েটি চিৎকার দেয়। অবশ্য চিৎকারের শব্দ ২ সেকেন্ড বেরিয়েছে,তার পরের শব্দ বের হওয়ার আগেই,সেই কালো ড্রেস পড়া লোকটি মেয়েটির মুখের ভিতর তলোয়ার ঢুকিয়ে দিয়ে,মাথার পিছন দিয়ে বের করে।
সঙে থাকা আরো দুজন চিৎকার না দিয়ে পিছনের দিকে দৌড় দেয়।বেশিদূর যেতে পারেনি,তার আগেই লোকটি বাম পকেট থেকে ছোট দুইটা ছুরি বের করে ছুড়ে পারে ওদের পিঠে। কয়েক পা দৌড়েই রাস্তায় ঝাপটে পড়ে ছেলে মেয়ে দুজনই।
আমার চোখ যেনো খাড়া হয়ে গেছে। এক প্রকার বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। লোকটি গিয়ে একজন একজন করে তার গাড়িতে তুলছে। একই ভাবে সবাইকে গাড়িতে তুলছে উনি। প্রথমে একটা পা ধরে টেনে টেনে আনে,এরপর গাড়ির পিছনের ঢাকনা খুলে,ভিতরে ছুড়ে মারেন।এক হাতেই অনেক শক্তি উনার।পরে উনি নিজেই গাড়িতে উঠে বসে।আমি এখনো চোখ বড় করে তাকিয়ে আছি। উনি গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে ৫-৬ হাত সামনে গিয়ে আবার দাঁড়ায়। এরপর গাড়ির সেই কালো গ্লাস নামিয়ে, জানালা দিয়ে আমার দিকে তাকায়।প্রানটা যেনো আমার যায় যায় অবস্থা। হাত পা কাপাকাপি শুরু করে দিয়েছে।লোকটি মাত্র ৫ সেকেন্ডের মত আমার দিকে তাকিয়ে আবার হুট করেই যেনো বাতাসের গতিতে চলে যায়। মনে হলো উনার গাড়ি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই হাওয়ায় মিশে যায়।
ধুপ করে ফ্লোরে পড়ে যাই আমি। অনেক ঘাবড়ে আছি। কোনভাবে হাত পা নাড়িয়ে টেবিলের পাশে গেলাম। গরগর করে পুরো মগের পানি গিলে ফেলি। পুরো শরীর দিয়ে ঘাম বের হচ্ছে। চোখ মুখ ভিজে একাকার। ধীরে ধীরে চোখটা ঝাপসাও হতে লাগলো। অতএব আর কিছু মনে নেই।
চোখ মেলে দেখি সূর্যের আলো এসে সোজা চোখে পড়েছে।
ও এম জি,সকাল হয়ে গেলো, অথচ আমি কই। খেয়াল হলো রাতের ঘটনাটা। জলদি এসেই টিভি অন করি। কারণ উনারা বলেছিলো,নতুন আপডেট পেতে আমাদের পাছায় ( পাশে) থাকুন।
টিভি অন করতেই আরম্ভ হলো মাতামাতি, " আজ সকাল ভোরবেলা একজন বৃদ্ধা দেখতে পায় রাস্তার পাশে চারটা লাশ পড়ে আছে। "
এ বলেই ওরা ক্যামেরা লাশের দিকে ঘুরায়। লাশ দেখে আমার গলা শুকিয়ে তলায় নেমে যায়।
এ চারজন তারাই,যাদের মৃত্যু আমার সামনে হয়েছে। অবাক আরো বেশি হলাম তখন, যখন রিপোর্টার বলল," ওদের পকেটেও কনডম পাওয়া যায়"।
বড়ই অদ্ভুত সব মৃত্যু হচ্ছে। কাল মরলো আমার দুজন লোক,আজ মরলো এরা। তাছাড়া লোকটি আমাকে দেখেও পেলেছে,তাকিয়েও ছিলো।আমাকে আবার কিছু করবে নাতো? তবে কি উনি আমাকেও কিছু করতে চায়? নাকি বলতে চায়?। হয়তোবা তেমনি কিছু,আবার এমনো হতে পারে,উনি আমাকে কোনো মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে? আসলেই কি তাই? আবার এমনও হতে পারে,উনি একজন ব্যবসায়ী। কনডম কিনেনি দেখে ওনি মেরে দিয়েছে তাদের।
আচ্ছা! উনি কি কোনো সাইকো? যে কান্ড চালাচ্ছে,তাতে তো তাই মনে হচ্ছে। আবার উনার গাড়িটাও হাওয়ার গতিতে হারিয়ে যায়। এতো স্পিডে এরোপ্লেন পর্যন্ত চলে না। তবে কি উনি অশরীরী? হতে পারে,আবার নাও হতে পারে। কিন্তু উনি আসলেই কে...?
মাথার চুল অল্প কয়দিনেই উঠে যাবে। যে পরিমানে চিন্তা করছি,তাতে কোনো সন্দেহ নেই। যাইহোক, খিদার জ্বালা আমি আমি নিতে পারছিনা। কিছু খাওয়া দরকার। বাসায় তেমন কিছু নেই। কয়েকটা চানাচুর আছে,আর মুড়ি। সকালের নাস্তা হয়ে যাবে।এ সময় বাজার করাটাও হলো না। নাস্তা বানিয়ে খেতে বসলাম টিভির সামনে। ওদের পাছায় (পাশে) থাকতে হবে যে।
কয়েক মিনিট যেতেই আমার গলায় আটকে যায়। না পারছি ভিতরে নিতে,আর না পারছি বাহির করতে (মুড়ি)
দম আটকে যাওয়ার অবস্থা,হামাগুড়ি দিয়ে টেবিলের উপর থেকে পানি নিলাম। মুখে নেওয়ার আগেই দেখলাম মুড়ি নেমে গেছে। তবুও একটু খেয়ে নিলাম পানি। ভাবছেন? কেনো আটকেছে? শুনুন।
টিভিতে মাত্র দেখালো, একটা নদীর পাড়ে পড়ে আছে ৩০-৪০ টা লাশ। সঠিকভাবে গণনা করা যায়নি এজন্যই, সবার মাথা কাটা, সেখানে কিছু পানিতে,কিছু পাড়ে। তবে মাথা আর লাশের মাঝে ব্যবধান। তাই অনুমান করা হলো ৩০ থেকে ৪০ জনের লাশ। সবার পকেটেই পাওয়া গেছে। বলে লাভ কি,জানেনি তো কি পাওয়া গেছে।
এবার আর কেও শান্ত না। আন্দাজ করলাম,আমার প্লাটের মধ্যে ধুপ ধুপ করে সব দরজা বন্ধ হচ্ছে। জানালা দিয়ে এইটাও দেখলাম,পাশের প্লাটের জানালা গুলো বন্ধ হচ্ছে। বলা তো যায়না,পরের বার কাকে পাওয়া যায় কনডম পকেটে নিয়ে মাথা কাটা লাশ হিসেবে।
তোলপাড় শুরু হয়ে যায় এ নিয়ে। চারদিক ছড়িয়ে পড়ে ভয়ের একটা উত্তাপ । স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা সবই বন্ধ। রাস্তায় একটা দোকানও খোলা নেই। শহরটা হয়ে যায় নিস্তেজ। যেনো এ শহরের মানুষগুলো হুট করেই হারিয়ে গেছে। রাস্তায় আমি একা একা বের হলাম। কয়েকজন বলেছে," বাহিরে কি,বাসায় গিয়ে লুকান"। কে বলেছে সঠিক জানিনা।সবার জানালা বন্ধ। কোন দিক থেকে আওয়াজ আসছে বুঝবো কি করে।
তখনি কিছু পুলিশ এসে আমার কলার চেপে ধরেন। গালে দু একটা থাপ্পড় মেরে সোজা বাসার সামনে এনে নামিয়ে দেয়।হুমকিও দিয়ে গেছে,আর যেনো না বের হই। এরাও পারে বটে। আমি বের না হয়ে যাবো কোথায়। এর রহস্য যে আমাকে জানতেই হবে। যদি আমিই না জানি,তবে আমার পাঠকরা কিভাবে জানবে। আবার বেরিয়ে পড়লাম।আমাকে জানতেই হবে,কে সে? অশরীরী? নাকি সাইকো?।
খানিকটা পথ পার করে চলে আসলাম একটা চায়ের দোকানে। সব দোকান বন্ধ।কিন্তু এই বৃদ্ধ লোকটির দোকান খোলা দেখে বেশ অবাক হলাম। ধীর পায়ে হেটে উনার কাছে গিয়ে বললাম,
- কি চাচা, প্রানের ভয় নেই?
- না বাবা, বৃদ্ধকালে কিসের ভয়।
- রঙের দুনিয়া ছাড়ার খুব ইচ্ছে?
- তা তো অনেক আগেই মরে গেছে বাবা।
- কেনো?
- তোমাকে বলে কি হবে।
- আরে বলুন, আপনার ছেলে মনে করে বলতে পারেন।
- তবে বলবো?
- হুম বলুন।
- আমার একটা মেয়ে আছে। ওর নাম প্রিয়া।
- বাহহ,ভালো নাম।তারপর?
- পড়ালেখায় খুব চঞ্চল ছিলো সে।আমাকে খুব ভালোবাসে। আমি বাসায় না ফেরা অব্দি তো খাবেই না সে।ওর মা মারা যায়,তার জন্মের তিন বছর পর। ছোট বেলা থেকে তাকে আমি মানুষ করে তুললেও,ওর জ্ঞান হবার পর থেকে, আমাকেই সে দেখাশুনা করে। ওর একটা অভ্যাস ছিলো, যদি কোনো কারণে আমার মন খারাপ থাকতো,তো আমার গাল টেনে সে বলতো," আমার বুইড়া কলিজার আব্বু "। তখনি আমার রাগ ভেঙে যেতো।
- হাহাহা, খুব ভাল মেয়ে তো আপনার? আপনার কপাল খুব ভাল।
- হুম,কিন্তু তা আর আমার কপালে সইতে পারেনি। গত ৪ মাস আগে সে মারা যায়।
- What..? ( কথাটা শুনে মুখের মুচকি হাসিটা হারিয়ে ফেললাম)
- জ্বী, ও নাকি একটা ছেলেকে পছন্দ করতো।অথচ আমি জানতাম না। ওর মৃত্যুর পর সব কিছু শুনলাম।
- কিন্তু মৃত্যু হলো কিভাবে
- কিছু নরপশু আমার মেয়েটাকে.. ( আর কথা বলতে পারেনি উনি। চোখে হাত দিয়ে কান্না করতে থাকে।)
- জ্বী চাচা বুঝেছি। খুব খারাপ হয়েছে আপনার মেয়ের সাথে। পুলিশ করেনি কিছু?
- হুম করেছে। ১ মাস জেল খেটে আবার সবাই মুক্ত হয়ে যায়। কি আর করবো বলো? বাসায় থাকলে মেয়েটিকে বড্ড অনুভব করি। তাই দোকান খুলে বসে থাকি সারাদিন।
- মন খারাপ করবেন না। নিয়তি হয়তো এইটাই ছিলো। আচ্ছা গেলাম চাচা। পরে কথা হবে।
- ঠিক আছে।
সমাজটা আজ শেষের দিকে। ভালোবাসা নামক শব্দটা তার অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে ধীরে ধীরে ।তবুও শুদ্ধ কিছু ভালোবাসার কারণে হয়তো,টিকে আছে সমাজটা। যাইহোক, আমি চায়ের দোকানটা ত্যাগ করে কিছুদূর চলে এলাম। শন করে চোখের সামনে দিয়ে কিছু একটা গেছে মনে হলো। হুট করেই দাঁড়িয়ে যাই আমি। কিছু বুঝার আগেই কি ঘটলো কে জানে। তবে সন্দেহ হলো সেই সাইকো কে নিয়ে। সে গেলো নাতো? তবে গেলো কোথায়, এতো গতিতে গেলো বা কিভাবে। মাথাটা ঝিম ধরে যাচ্ছে। এদিকে সারাটা দিন বাহিরে হেটে বেড়ালাম। সে শন করে যাওয়া ঘটনা ছাড়া কিছুই দেখিনি। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমে গেলো।খাবারেরও কোনো খোজ পাইনি। পাবার কথাও না,সব তো বন্ধ।মনে হচ্ছে,শহরটায় আমি একাই আছি।
সন্ধ্যা ৭ টায় ফিরে এলাম বাসায়। রহস্য তো বের করতে পারিনি। তবে কি, ক্লান্ত শরীরটা আগে ঠিক করা দরকার। কিচিং রুমে মুড়ি ডিব্বাটাও খালি। না খেয়ে থাকার অভ্যাস অনেক আগ থেকেই আছে, তাই অতটা বোরিং ফীল করার কিছুই নেই।
তখনি কানে একটা শব্দ আসলো। চিৎকার এর শব্দ। কোনো মেয়ে যখন চেঁচিয়ে চিৎকার করে,তখন এভাবেই আওয়াজ হয়।তবে চিৎকার দিচ্ছে কোথা থেকে। বারান্দায় এসে দেখলাম রাস্তা ফাকা।কিন্তু চিৎকার তো শুনছি, বুঝতে পারছিনা আওয়াজটা আসছে কোথা থেকে। বারান্দা থেকে আবার দৌড়ে এসে দরজা খুললাম, মনে পড়লো ক্যামেরার কথা।একটা মিনি ক্যামেরা আছে আমার। যদি কিছু রেকর্ড করতে পারি,তবে তো অনেক কিছু হবে।আবার এসে ক্যামেরাটা নিয়ে, নিজের শার্টের বোতামে লাগালাম,এরপর চলে আসি দরজার বাহিরে। ৩য় তলা থেকে নামতে বেশি লেট হবেনা। দেখা যাক,কি হচ্ছে নিছে। অনেক স্পিডে নেমে এলাম নিছে।ঘড়িতে সময় ৮ টার কাছাকাছি। তবে মনে হচ্ছে রাত ৩ টা বাজতেছে। চারপাশ যেনো শুনশান হয়ে গেলো।
এ নিস্তব্ধতার মাঝেই তেড়ে আসছে সে মেয়ের চিৎকার। নিছে এসে ছুটাছুটি করছি এদিক সেদিক। কয়েকটা গলি পার করেই ব্রেক কসলাম। দুপাশে খাড়া হয়ে আছে বিশাল বড় বড় বিল্ডিং।
একটা ১০০ পাওয়ারি লাইটের আলোয় শুধু গলির পথ দেখা যাচ্ছে। এদিকে আমি দাঁড়িয়ে আছি চার গলির মাঝখানে। আর আমার থেকে ১৫-২০ হাত সামনে দাঁড়িয়ে আছে কালো শার্ট,প্যান্ট,জ্যাকেট, চশমা পড়া সে লোক। এসেছি রহস্য খুঁজতে, কিন্তু মৃত্যুর ভয় পাচ্ছি এখন। লোকটির এক হাতে তলোয়ার, অন্য হাতে একটা মেয়ের মন্ডু( মাথার চুল ধরে আছে)।
আমার দিকে তাকিয়ে উনি একটা হাসি দিলো। খুবই ভয়ংকর সে হাসি। উনার দাতগুলো রক্তে লাল হয়ে আছে।বুকের ধুকধুকানি উঠে যায় আমার। উপরওয়ালা রক্ষা করবে ভেবে মনে সাহস আনলাম।আগে শার্টের বোতামে থাকা ক্যামেরাটা অন করি।এরপর ভয়ের দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম।
- ক....ক..কে আপনি। এ..এ এতো গুলা মা..মানুষ মারছেন কেক.. কেক.. কেনো?
- পবিত্রতা রক্ষা করা যাদের দায়িত্ব, তারা করছে তার অপব্যবহার। এ তাদের শাস্তি। ( প্রচন্ড মোটা উনার গলার স্বর।ভয়ংকর কন্ঠে উত্তরটা দেন উনি)
- কেনো? কিক.. কি করেছে এরা?
- পরকীয়া
- এর জন্য শাস্তি মৃত্যু?
আমার আর কোনো কথার জবাব দেয়নি সে। চোখের সামনেই মিশে যায় হাওয়ায়। এমন ঘটনা কখনো দেখিনি।একটা মানুষ চোখের সামনে অদৃশ্য হলো কিভাবে। ধ্যাত..আমিও বা কি ভাবছি,সে তো মানুষ নয়,হতেই পারে।
ফিরে এলাম বাসায়। ল্যাপটপে ক্যামেরাটা কানেক্ট করে ভিডিওটা অন করলাম।সব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।কিন্তু উনার অদৃশ্য হওয়ার দৃশ্যটা রেকর্ড হয়নি।এর আগেই ভিডিও ঝিরঝির করতে লাগলো। যাইহোক, রহস্যটা এখন বুঝলাম।পরকীয়া করা ছেলে মেয়েদের উপরেই এই সাইকো,না না,সাইকো না,অশরীরী হবে।কিন্তু অশরীরীকে ক্যামেরা বন্ধি করা যায়? সে যাইহোক, তাতে কি,তিনি এইটাই বুঝাচ্ছেন, পরকীয়া করা যাবেনা।মানছি সে কোনো অলৌকিক শক্তির মালিক।কিন্তু উনার কাজটা তো সঠিক। সেইজন্য হয়তো সব লাশের কাছে পাওয়া যায় কনডম।আর তিনি এইটাই সবাইকে বুঝাতে চাইতেন যে, তাদের মৃত্যু, তাদেরি জন্য হয়েছে। অন্যায়কারী ওরা।
তবে ভাবছি অন্য কথা।এভাবে কতোদিন? মানুষ তো সতর্ক হতে হবে।উপায় এখন একটাই,ভিডিওটা আপলোড করা।
যে কথা সেই কাজ।আপলোড দিয়ে দিছি। ২ ঘন্টা পর দেখলাম ১৬৩৮৪৫ ভিউয়ার, ৯৮৯৭৬ টা শেয়ার।রাতের ভিতর ভাইরাল হয়ে গেলো ভিডিও। তখনি দরজায় কারো নক দেওয়ার শব্দ।হার্টবিট বেড়ে যায় আমার।ভিডিও ছাড়ার অপরাধে সে আমার মাথা ফেলবে নাতো....?
নাহহ,দরজা তো খোলা যাবেনা।কিন্তু সে লোক না হয়ে যদি অন্য কেও হয় ভেবে দরজার সামনে যাই। ছিদ্র দিয়ে আগে চেক করে নেওয়া দরকার। যেই আমি দরজার ছিদ্রে চোখ লাগালাম,দেখলাম দরজার ওপাশে অশরীরী, না সাইকো,আরেহ না অশরীরী, হুরর সে যাইহোক, তিনি দাঁড়িয়ে আছে।
ধুপ করে নিজে নিজে পড়ে গেলাম ফ্লোরে।
হামাগুড়ি দিয়ে উল্টো চলে আসি বারান্দায়।চিৎকার দিতে মন চাচ্ছে,তবে দিয়েও বা কি হবে।কেও তো দরজাটা পর্যন্ত খোলবেনা। বারান্দায় এসে নিজে নিজে কান্না করছি,আর ভাবছি,আমি তো পরকীয়া করিনি।আমার কাছে এলো কেন।তখনি পাশ থেকে কেও বলল,
- ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ( কথাটা শুনেই বাম দিকে তাকালাম।একি! লোকটা এখানে আসলো কিভাবে)
- আমি কিছু করিনি ভাই।জাস্ট সবাইকে সতর্ক করার জন্য ভিডিও আপলোড দিছি।সত্যিই আমার কোনো দোষ নেই।
- ধন্যবাদ। তোমার জন্য আজ থেকে সবাই সতর্ক হবে।কেও আর পরকীয়ায় লিপ্ত হবেনা। মিথিলাকে শেষ করেই আমি চলে যাবো। আর পাবেনা আমাকে।
- মিথিলা কি করেছে?( উনি কিছু বলার আগেই আবার বললাম?)
- ওও বুঝেছি বুঝেছি।ওকে, তারমানে ওর পরে আর কেও খুন হবেনা।
- হুম।
- আচ্ছা? একটা প্রশ্ন করি?
- করো?
- আপনি সাইকো? নাকি অশরীরী,?
- কেনো? জেনে কি করবে।
- আমার পাঠিকা আর পাঠকদের ঘুম হারাম হয়ে যাবে তাহলে।বলুন না।
- তুমি যেটা নাম দিবে আমার,সেটাই। তবে এইটাই মনে রাখবা,অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য কেও না কেও এসে যায়। কেও সাইকো,কেও অশরীরী, আবার কেও মানুষ হয়ে।
- হুম বুঝেছি।
- আমিও গেলাম। তবে আমি আবার ফিরে আসবো সেদিন,যেদিন আবার সবাই লিপ্ত হবে পরকীয়ায়।
বলেই উনি চলে যায়। মিথিলার ভিডু পরে দেখা যাবে। এতক্ষণ যেটা নতুন ভিডিও করলাম,সেটা আপলোড করা লাগবে আগে ( ক্যামেরা অন ছিলো)
ক্যাপশনে উনার নাম দুইটাই হবে, অশরীরী সাইকো।
কিন্তু সে কি আর আসবে? এ অশরীরী সাইকো কি আবার একদিন শুরু করবে? তার খুনাখুনি? হয়তোবা। বলে তো গেছেই, আবার পরকীয়া শুরু হলে আসবে। জানিনা,ততদিন বেচে থাকতে পারবো কিনা।যদি নাও থাকি,তবে পরের ভিডিও করবে আমার ছেলে। যদি কপালে বউ জুটে আরকি।
**সমাপ্ত **
======= = == = = = == = = =
বিয়ে করতে যাওয়া এক পুত্রকে তার পিতার উপদেশ মালা....
বাবা বললেন, তোমার দাদা বলেছিলেন,
১. নতুন বউকে পালকি করে কেন আনা হয় জানিস? তাকে তো গরুর গাড়িতেও আনা যেত।
তা না করে পালকিতে আনা হয়, কারণ সে কত সম্মানিত তা বোঝানোর জন্য।
২. নতুন বউ পালকিতে উঠে কী করে জানিস?
কাঁদে। কেন কাঁদে?
শুধু ফেলে আসা স্বজনদের জন্য না।
নতুন জীবন কেমন হবে সে ভয়েও কাঁদে।
তোর চেষ্টা হবে পালকির কান্নাই যাতে তার শেষ কান্না হয়।
এরপর আর মাত্র দুটো উপলক্ষ্যে সে কাঁদবে।
একটি হলো মা হওয়ার আনন্দে, আরেকবার কাঁদবে তুই চলে যাওয়ার পর।
মাঝখানে যত শোক আসবে তুই তার চোখের পানি মুছে দিবি।
৩. স্ত্রী সবচেয়ে কষ্ট পায় স্বামীর বদব্যবহারে,
দেখ আমি খুবই বদমেজাজি,
কিন্তু কেউ বলতে পারবে না আমি তোর মায়ের সাথে কোনোদিন উঁচু গলায় কথা বলেছি।
৪. বিয়ে মানে আরেকটি মেয়ের দায়িত্ব নেওয়া।
এটা ঠিকভাবে পালন না করলে আল্লাহর কাছে দায়ী থাকতে হয়।
৫. আরেকটি কথা, সব মেয়ের রান্নার হাত ভালো না, কিন্তু সবাই রান্না ভালো করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে।
তাই রান্না নিয়ে বউকে কখনো খোঁটা দিবি না।
৬. বউয়ের মা-বাবাকে কখনো 'আমার শ্বশুর, আমার শাশুড়ি' এগুলো ডাকবি না।
মা-বাবা ডাকবি।
আগের ডাকগুলো কোনো মেয়ে পছন্দ করে না, তুই ওগুলো ডাকলে বউও আমাদের ওই ডাকেই ডাকবে।
তুই ওনাদের সম্মান না করলে সে আমাদের সম্মান করবে না।
এটাই নিয়ম।