গল্পঃ প্রতিশোধ | Story: Revenge (Protishod) (Part-01)
ছোট ভাইয়ের জন্য পাত্রি দেখতে গিয়ে পাত্রিকে আমার নিজেরি পছন্দ হয়ে গেল। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে সবার সামনে নিজের বিয়ের প্রস্থাব দিয়ে ফেললাম। পাত্রীপক্ষ মহা খুশি তারা বিয়েতে রাজি হবেই না কেনো ছেলে আমেরিকার থাকে তাও আবার সিটিজেনসি পাওয়া আর আমার ছোট ভাই মাস্টার্স পাশ করে এখনো বেকার। তাই দেরি না করে আজকেই বিয়ের কাজটা সেরে ফেলতে বল্লাম। ছোট ভাই শামিম বার বার আমার হাত ধরে অনুরোধ করতেছে বিয়েটা না করার জন্য।
আমি বুঝতে পারছি ভাইটার খুব কষ্ট হচ্ছে তার ভালোবাসার মানুষের সাথে বড় ভাইয়ের বিয়ে এটা মেনে নেওয়া অসম্ভব! কী করব সিনথিয়া কে দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেছে..?
শামিমের সাথে সিনথিয়া চার বছরের রিলেশন ছিল।ওরা একি সাথে ইউনির্ভাসিটিতে পড়ত। সিনথিকে বাসা থেকে বিয়ের জন্য অনেক চাপ দিচ্ছিল। এদিকে
সিনথিয়াও শামিমকে প্রেশার দিচ্ছিল ওদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে।
আমি ছয় বছর পরে দেশে এসেছি এক মাস হল। বড় আপা শামিমের বিষয়ে আমাকে সব কিছু খুলে বলল। শামিম আমার থেকে তিন বছর দুই মাস এগারো দিনের ছোট হলেও আমাকে খুব ভয় পায়। আমি বাবাকে বললাম সিনথিয়াদের বাড়ি বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে।
প্রথমে সিনথিয়ার ফ্যামিলি বিয়েতে রাজি ছিল না। বেকার ছেলের কাছে সহজে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে চায় না। তাদের কে এই শর্তে রাজি করালাম এক বছর পরে শামিমকে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়া হবে।
যাই হোক কাজী সাহেব চলে এসেছে এখনি বিয়ের কাজ শুরু হবে। শামিম খুব কান্নাকাটি করছে।
তিন কবুল বলে প্রবীত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলাম।
আপা, বাবা, শামিম ওরা সবাই চলে গেছে শুধু বড় দুলাভাই আমার সাথে থেকে গেছে।
শালা, শালীরা আমাদের বাসর রাতের জন্য রুম সাজাচ্ছে। মনে মনে খুব আনন্দ লাগছে জিতে যাবার অনন্দ। আল্লাহ কার কপালে কী লেখে কেউ জানে না। আজ আমার বিয়ে হবে তা কী আমি জানতাম তাও আবার সিনথিয়ার সাথে কল্পনাও করতে পারিনি।
এই সেই সুমাইয়া কবির যে সাত বছর আগে কলেজের সবার সামনে আমাকে জুতা মেরেছিলো ভালোবাসার অপরাধে। আমি খুব সাধারণ একটা ছেলে ছিলাম।
আমি তখন বি এ তে পড়তাম আর সুমাইয়া কবির ( সিনথিয়া) ইন্টারে। আমরা দু'জন একি কলেজে পড়তাম। আমি নাকি সিনথিয়ার পায়ের জুতার যোগ্য না তাই আমাকে ওর জুতার বারি খেতে হয়েছিলো।
সিনথিয়া ছিল কলেজের সেরা ছাত্রীর মধ্যে একজন। এস এস সি তে গোল্ডেন পাওয়া আর আমি কি না সামান্য ডিগ্রিতে পড়ি। ওই দিন সিনথিয়া সবার সামনে বলেছিলো ইউনিভার্সিসিটিতে পড়া শেষ করে যেখানে চাকরি পায় না সেখানে আমি তো ডিগ্রী পড়ি।
বাল ছেঁড়ার যোগ্যতা আমার নাই, সেলুন খুলে বসতে বলছিলো। ঐ দিন সারা রাস্তায় অনেক কেঁদে ছিলাম। বাসায় এসে ওজু করে নামাজ পড়ে দু'হাত পেতে আল্লাহ কাছে একটাই কথা বলেছিলা হে আল্লাহ উত্তম আমাকে কিছু দান করেন না হলে এই পৃথিবীর থেকে নিয়ে যান। আমার ফরিয়াদ আল্লাহ শুনে ছিল।
আল্লাহ চাইলে সবকিছুই সম্ভব, তার কিছুদিন পর আমি আমেরিকার ডিভি লটারি পেয়ে গেলাম। এর আগেও আমি দুইবার লটারি জন্য চেষ্ঠা করেছিলাম কিন্তু হয়নি। ডিগ্রী পরীক্ষা না দিয়েই আমি আমেরিকায় চলে গিয়েছিলাম। ওখানে যাবার পরে এক সপ্তাহ পর কাজ পাই রাস্তা ঝাড়ু দেওয়া, ড্রেন পরিস্কার করা ছিল আমার কাজ। প্রথম দু'বছর এই কাজ করতে হয়েছিল। এর পরে একটা হোটেলে পরিছন্ন কর্মী হিসাবে ঢুকি। এখন অবশ্য প্রোমোশন পেয়ে বয়ের কাজ করি। আমি ঝাড়ুদার বা মেথরের কাজ করি ওইটা কোন বিষয় না আমি আমেরিকাতে থাকি এটাই হল বড় কথা।
সারাজীবন শুনেই এসেছি শ্বশুর বাড়ি মধুর হাড়ি।
রাতে ডিনারের আয়োজন করা হয়েছে। খেতে বসেছি আমার চারিপাশে শালীকারা ঘিরে ধরে আছে কেউ বাতাস করতেছে, কেউ পানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কারও হাতে মিষ্টির প্লেট। খাবারের মেনু দেখে পরাণ ভরে গেছে বিরিয়ানি, মুরগির রোস্ট, খাসির রেজালা, বড় ডিমআলা ইলিস ফ্রাই, রুই মাছ ভুনা।
প্লেট ভরা খাবার বিসমিল্লাহ বলে শুরু করলাম। আমার আর দুলাভায়ের খাওয়া দেখে সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। ইলিস, রুই পুরোটাই খেয়ে ফেলেছি সাথে পাঁচ পিজ রোস্ট। শালা, দুলাভাই মিলে পুরো টেবিল ফাঁকা করে ফেললাম।
শালীকারা সবাই মিলে বাসর ঘরে নিয়ে গেল। গিয়ে দেখি বৌ লাল কাতান পড়ে খাটের মাঝখানে বসে আছে। ভেবেছিলাম অনেক কান্নাকাটি করে চোখমুখ ফুলিয়ে রেখেছে হয়তো আমার সাথে কথাই বলবে না। আমিও প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছিলাম দুই চারটা কথা হজম করার। কিন্তু এখন দেখি উল্টো সিনথিয়া স্বাভাবিক কাঁদা তো দুরে থাক সে সবার সাথে হাসাহাসি করছে।
সিনথিয়া এখন আমার সাথে ছবি তোলায় ব্যস্ত ওর বড় ভাবি এসে আমাদের বেশ কিছু কাপল পিক তুলে দিয়ে গেল। ওরা সবাই চলে গেছে রুমে আমি আর সিনথিয়া আছি। কী কথা দিয়ে শুরু করা যায় তাই ভাবছি।
খাটের থেকে নেমে সিনথিয়া এসে আমার পা ধরে সালাম করল।
-- সুমাইয়া আমি স্যরি।
-- স্যারি কেন
-- না মানে আজকে তো এখানে শামিম এর থাকার কথা ছিল। কী থেকে কী হয়ে গেল..?
-- শামিম এখানে থাকবে কীভাবে ওর সাথে বিধাতা আমার বিয়ে লেখেনি। জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে আল্লাহর ইচ্ছা হয় এখানে আমাদের কোন হাত নেই। আপনার সাথে আমার জোড়া লেখা ছিল।
-- শামিমের জন্য তোমার কষ্ট হচ্ছে..??
-- কষ্ট পেয়ে কী হবে আমি বাস্তববাদী মেয়ে বাস্তবতাকে মেনে নিয়েছি।
আমি কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। আমার ভাইটার জন্য বিন্দুমাত্র ভালোবাসা ওর চোখে দেখালাম না।
আচ্ছা সুমাইয়া তুমি কি আমাকে চিনতে পেরেছ..??
-- হ্যাঁ। আমি রিয়েলি স্যারি ওই ঘটনার জন্য। আসলে ওভাবে তোমাকে অপমাণ করা উচিত হয়নি। তাছাড়া তখন আমার বয়স কম ছিল তাই অত মাথায় বুদ্ধি ছিল না। ᴘᴀsᴛ ɪs ᴘᴀsᴛ পুরানো কথা ঘেটে কোন লাভ আছে বল? এখন তো আমরা স্বামী- স্ত্রী কথাগুলো বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমিও নিজেকে সামলে রাখতে পারলাম না শাড়ি খোলায় ব্যস্ত হয়ে পরলাম।
গল্পঃ প্রতিশোধ
পর্বঃ ০১
নুসরাত_মাহিন
চলবে...