একজন মনের মত মানুষ চাই। মোবাইল নাম্বার ভিডিওতে দেওয়া আছে। Moner Moto Akjon Manush Cai | Episode#08
একজন মনের মত মানুষ চাই। মোবাইল নাম্বার ভিডিওতে দেওয়া আছে। Moner Moto Akjon Manush Cai | Episode#08
একজন মনের মত মানুষ চাই। মোবাইল নাম্বার ভিডিওতে দেওয়া আছে। Moner Moto Akjon Manush Cai | Episode#08
'শামসু ভাই, আমারে একটা রুটি দেও না খাই। খুব খিদা লাগছে আমার। ও শামসু ভাই, দেও না।'
কথাগুলো বলেই হলুদ রঙ ধারণ করা দাঁতগুলো বের করে অসহায়ের মতো চেয়ে রইলো সেলিম পাগল। শামসু মিয়ার মেয়ে প্রেগন্যান্ট। আজ হসপিটালে তার ডেলিভারির ডেট, কিন্তু হোটেলে অনেক ব্যস্ততার কারণে সে যেতে পারেনি হসপিটালে। অবশ্য এটা কোনো কারণ না। মূলত সে এসবে খুব ভয় পায় তাই হসপিটালে যায়নি। যদি তার রাজকন্যার মতো আদরের মেয়েটার কিছু হয়ে যায়! এসব বিষয়ে সে খুব দুর্বল। তাই সে হসপিটালে যায়নি, কিন্তু সবাইকে বলেছে তার হোটেলে খুব ব্যস্ততা। এজন্য এমনিতেই তার মেজাজ চড়া হয়ে আছে, তারউপর আবার সেলিম পাগলকে দেখে তার মেজাজে যেন হাই ভোল্টেজ হয়ে গেল। রাগে গজগজ করতে করতে গিয়ে কোমড়ে একটা লাথি মেরে ব্যস্ত রাস্তায় ফেলে দিলো সেলিম পাগলকে। আর বিচ্ছিরি ভাষায় বললো,
'শালা হু'মু'ন্দি'র পোলা, জন্মের ঠিক নাই। যা তোর বাপরে গিয়া ক রুটি দিতে। এহানে রুটি কি তোর বাপ বানাইয়া রাইখা গেছে হু'মু'ন্দি'র পোলা?'
কথাগুলো বলার সাথে সাথেই হোটেলের বাকি ছেলেপেলেগুলো হো-হো করে হেসে উঠলো। একজন তো বলেই ফেললো,
'উস্তাদ, এডি হইলো কুত্তার জাত। এডিরে আইজকা রুটি দিয়া খাতির করবেন, কাইলকা আবারো আইসা হাজির হইবো রুটি খাইতে।'
এমন বিচ্ছিরি ভাষায় গালাগালি শুনার পরেও সেলিম পাগলের মাথায় কিছু ঢুকলো না। সে হোটেলের সামনে থেকে গেল না। সামনের রাস্তাতেই একটা কোণায় দাঁড়িয়ে রইলো চুপ করে। যদি একটা রুটি দেয় সেই আশায়। বাহিরে রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। গত দুইদিন ধরে সে কিছুই খায়নি, তারউপর তাকে লাথি মেরে ফেলে দেয়াতে তার ডান হাতের কনুই ফেটে র'ক্ত বের হচ্ছে। তবু সে দাঁড়িয়ে আছে একটা রুটির আশায়।
দোকানের উপরেই বড় বড় অক্ষরে লেখা, 'শামসু হোটেল এন্ড মিষ্টান্ন ভাণ্ডার।' সেলিম পাগল সেই লেখার দিকে আনমনে তাকিয়ে কী যেন ভাবছিলো তখন হুট করে শামসু মিয়ার ফোন বেজে উঠলো। তাড়াহুড়ো করে ফোনকল রিসিভ করলো সে। অপর প্রান্ত থেকে মহিলা কন্ঠে কে যেন বললো,
'হুনছো পরীর বাপ, আমাগো পরীর একটা মাইয়া অইছে। দেখতে একবারে পরীর মতোই। মা আর মাইয়া দুইজনই ভালা আছে। তুমি মিষ্টি লইয়া এহনই আহো।'
শামসু মিয়া চিৎকার দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো। আনন্দে তার চোখ ভিজে গেল। তার একমাত্র মেয়ের আজ একটা মেয়ে হয়েছে। সে নানা হয়েছে। আজকে তো তার অনেক খুশির দিন। সে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
'এই দোকানের সব মিষ্টি প্যাকেট কর। আমি নানা হইছি। আমার সুন্দর একটা নাতনী হইছে। আমি এহনই যামু হাসপাতালে, এহনই।'
শামসু মিয়ার কথামতো দোকানের ছেলেপুলেদের মধ্যে ব্যস্ততা বেড়ে গেল। সবাই মিষ্টি প্যাকেটের মধ্যে ভরতে ব্যস্ত হয়ে গেল।
শামসু মিয়ার খুশী যেন আর ধরে না। সে খুশিতে হোটেলের কাষ্টমারদেরকেও গিয়ে জড়িয়ে ধরছে। তার যেন আজ ঈদ লেগে গেছে। সবাইকে আজ বিনামূল্যে খাবার খাওয়ানোর হুকুম দিয়ে দিলো সে। কারো কাছ থেকে যেন একটা পয়সাও না রাখা হয় সেই হুকুম দিয়ে দিলো কড়া গলায়।
সেলিম পাগলের মুখেও হাসির আভা ফুটে উঠলো। এই সুযোগে সে দৌড়ে ঢুকে গেল শামসু মিয়ার হোটেলে। গিয়েই বলা শুরু করলো,
'আমারেও দেও, আমারেও দেও শামসু ভাই। খিদা লাগছে আমার।'
শামসু মিয়া এবার আর তাকে কিছু বললো না। উল্টো খুশিতে তাকেও জড়িয়ে ধরে বললো,
'সেলিম, আমি আইজকা অনেক খুশি রে, আমি আইজকা অনেক খুশি। তুই কী খাবি? যা ইচ্ছা খা। পুরা দুকান খাইয়া ফালা সেলিম। এই ওকে রুটি আর মিষ্টি দে খাইতে।'
শামসু মিয়া জোর গলায় বলার পরেও হোটেলের একটা কারিগর এসে মাত্র একটা রুটি যেটা কি-না ঠান্ডা হয়ে গেছে এবং মিষ্টি দিলো সেলিম পাগলকে। এতেই মহাখুশি হয়ে সেলিম পাগল বললো,।
'ম্যালা খুশি হইছি শামসু ভাই, আমি ম্যালা খুশি হইছি।
শামসু মিয়া মিষ্টির অনেকগুলো প্যাকেট একসাথে হাতে নিয়ে বের হলো হোটেলের সামনে রাস্তায়। দুইহাতে উঁচু করতে তার কষ্ট হচ্ছে মিষ্টিগুলো। তার দোকানে যতো মিষ্টি ছিলো সব ভরে নিয়েছে হসপিটালে নিয়ে যাবে বলে।
সেলিমের হাতের একটা রুটি এখনো শেষ হয়নি, কিন্তু মিষ্টি শেষ হয়ে গেছে। রুটি খেতে খেতেই সে শামসু মিয়ার পাশে এসে বললো,
'তুমার মাইয়ডারে আমিও দেখমু, শামসু ভাই। আমারে নিয়া যাবা?'
শামসু মিয়া ধমক দিয়ে বললো,
'আরে হালা পাগলের বাচ্চা, চল আমার লগে। হাসপাতালে যাইয়া তরে আরো মিষ্টি খাওয়ামু। আয় আমার লগে।'
কথাগুলো বলেই হোটেলের সামনের রাস্তা থেকে অটোতে উঠতে যাবে ঠিক তখনই ব্যস্ততায় ভরা রাস্তার একটা বাস খুব গতিতে এসে সজোরে ধাক্কা মারলো তাদেরকে। ভাগ্যের খেলায় সেলিম পাগল আগেই শামসু মিয়া এবং অটোওয়ালা দুইজনকেই দুইহাত দিয়ে টান মেরে রাস্তার একপাশে ফেলে দিলো। শুধু নিজেই সরে যেতে পারলো না। তারপর যা হবার তা-ই হলো। বাসটার ধাক্কা খেয়ে পিচ ঢালা রাস্তায় পড়ে যাওয়ার পর অটো'টা একদম তার শরীরের উপর এসে আছড়ে পড়লো। মুহূর্তের মধ্যেই র'ক্তে রঞ্জিত হয়ে গেল জায়গাটা। শামসু মিয়া দৌড়ে এসে সেলিম পাগলের মাথাটা ধরে তার কোলে রাখলো। অটোর লোহার এবং বাসের ধাক্কার তীব্র আঘাতে তার মাথার স্কেলফ ফেটে গেছে। সেখান থেকে স্রোতের মতো র'ক্ত বের হয়ে শামসু মিয়া কোল ভিজে উঠছে। কোলের মধ্যে মাথা রেখেই কোনমতে সেলিম পাগল তাকে বললো,
'তুমি আমারে রুটি আর মিষ্টি খাইতে দিছো সেলিম ভাই, আমি ম্যালা খুশি হইছি, ম্যালা খুশি হইছি।'
এতটুকুর বেশি আর বলতে পারলো না সে। চোখদুটো চিরজীবনের জন্য পুরপুরি বন্ধ হয়ে গেল, নিশ্বাসটাও তার সাথে বেঈমানী করে চলে গেল অনেক দূরে। হায়রে জীবন! কোনো মূল্যই পেল না এই জীবনের। অন্যের তএ একমুহূর্তে জীবনটা বিলিয়ে দিয়ে চলে গেল সেলিম পাগল নামক মানুষটা।
সমাপ্ত।
গল্পঃ সেলিম_পাগল
#আসাদ