Story: Opare Ondhokar | ওপারে অন্ধকার | Part -01 | BEAINSHAB I Eid Natok I Mushfiq R Farhan I Payel I Juel Hasan I Bangla Natok

ওপারে_অন্ধকার

#পর্ব_১
লেখক_মোহাম্মদ_ওমর_ফারুক

আমাদের এলাকায় যে রাতে ডাকাতি হলো, সে রাতে বাড়ির বাইরে রাস্তার পাশে বসে আমি পারুলের সাথে জোরে জোরে কথা বলছিলাম। পারুলকে এতো বুঝানোর পরও তাঁর আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেনি। এদিকে পাহারাদার আমার চোখে লাইট মেরে প্রশ্ন করছে, কে এখানে?
আমি রাগের মাথায় উত্তর দিলাম, আগে চোখ থেকে লাইটের আলো নিচে মারো। তারপর কাছে এসে দেখে যাও আমি কে?
-আমার ডিউটি তো আমাকে পালন করতেই হবে। এলাকায় চুরি ডাকাতি হলে তো আবার আমাদেরই দোষ হবে। 
 
-আমার বাড়ির সামনে আমি বসে আছি। তারপরও লাইট মেরেছেন ভালো কথা, চোখে মারলেন কেন?
-লাইট মারার আগে তো বুঝা যায় না চোখ কোথায় আর ঠ্যাং কোথায়?
এমন টুকটাক তর্ক দিয়ে পাহারাদারের সাথে আমার কথা শেষ হয়। কিন্তু সে রাতেই এলাকায় ডাকাতি হয়েছে। এলাকার নতুন দুইতলা বাড়ির লোহার গেইট গ্যাসের আগুনে কেটে ভিতরে ঢুকে যায় ডাকাত দল। পিস্তলের ভয় দেখিয়ে স্বর্ণালংকার আর টাকা পয়সা নিয়ে যায়। অথচ যখন ডাকাতি শুরু হয়, ততক্ষণে আমি রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। 
 
না ঘুমিয়ে উপায় ছিল না। পারুলকে এত বুঝানোর পরও বলছে সে শামীমকে ছাড়া বাঁচবে না। আত্মহত্যাই তার একমাত্র পথ। শেষ অবধি পারুলকে বললাম, ঠিক আছে তুই আত্মহত্যা করিস। তবে কাল সকালে আমার সাথে আগে দেখা কর। কী থেকে কী হয়েছে সবকিছু শুনি, তারপর না হয় একটা সিদ্ধান্ত নিস। আমি আসব তোর সাথে দেখা করতে। 
 
পারুল আমার কথায় রাজী হলো। শেষ রাত্রে ঘুমানোর কারণে ঘুম পরিপূর্ণ হয়নি। ভোর সকালেই ঘুম ভাঙ্গল মায়ের ডাকে। দরজা খুলে শুনি সবার মুখে একই কথা, এলাকার নতুন বাড়িতে গতরাতে ডাকাতি হয়েছে। আমার ঘুম পরিপূর্ণ না হলে চোখ জ্বলতে থাকে। মনে হয় চোখে কেউ মরিচ ফাঁকি ছুঁড়ে দিয়েছে। 
 
এদিকে মোবাইলে একের পর এক রিংটোন বেজেই যাচ্ছে। ফোন রিসিভ করতেই পারুল আমাকে হুমকি দিয়ে বলল, "এখনো তোর সকাল হয়নি? শুধু মাত্র তোর সাথে দেখা করার জন্য এখনো কিছু করিনি। তাড়াতাড়ি আসবি না কিছু একটা করে ফেলব?"
 
মোড়ের কাছে রিকসার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। পেটে এখনো দানা পানি কিছু পড়েনি। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে ঠোঁটে নিলাম। আগুন দিয়ে টান দিয়ে বুঝতে পারলাম, গতরাতে কথা বলার সময় বাইরে বেশ কুয়াশা ছিল। সিগারেট কেমন যেন হয়ে গেছে। মাথা চক্কর দিয়ে উঠে।
রিকসায় উঠে সিগারেট ফেলে দিলাম। রিকসার ড্রাইভার নিজ থেকেই বলছে, "ভাই বিয়া করছেন?"
আচমকা এমন প্রশ্ন করবে আমি ভাবিনি। তবুও উত্তর দিলাম, "না ভাই আরো দেরি হবে।"
তখন ড্রাইভার বলল, "ভাইরে বিয়া কইরা লাভ নাই। যতদিন বউরে দিতারবেন, ততোদিন আম্নে ভালা। না দিতারলে বউ মুখ ঘুরাইয়া শুইয়া থাকব। ডাকলেও ফিরব না। "
 
আমি চিন্তা করছি পারুলকে নিয়ে। রাগের মাথায় কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে। মেয়েটা বড্ড বেশি জেদি। 
 
"ঘরের বউ হইলো গিয়া ধান থুইবার জাবাড়। দুই চার বস্তা ধানে ভরব না। যতই দেন, ততোই লাগবো। বউয়ের যে কত চাহিদা থাহে। ছুনো, কিরিম, আলতা আরো কত কী?"
 
আমি ড্রাইভারের কথার জবাব দেই না। জবাব না পেলে এমনিতেই কথা বলা বন্ধ করে দিবে।
বীরপুরের মসজিদের সামনের মোড়ের মাথায় পারুলদের তিনতলা বাড়ি। এর আগেও এই বাড়িতে অনেকবার এসেছি আমি। পারুলের পরিবারের সবাই আমাকে চিনে। পারুল আমার হাই স্কুলের বন্ধু। তারপর নরসিংদী সরকারী কলেজে একই সাথে ভর্তি হলাম। বর্তমানে দু'জনেই অনার্স তৃতীয় বর্ষে। হুমায়ূন স্যার বলেছিলেন, "ছেলে আর মেয়েতে কখনো বন্ধুত্ব হয় না। তারা একে অন্যের প্রেমে পড়বেই, একবার হলেও পড়বে।" আমি কখনো পারুলের প্রেমে পড়িনি এটা নিশ্চিত। আর পারুল তো শামীমকে ভালোবাসে। শামীমের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। তাহলে বলাই যায়, আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছাড়া অন্য কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। রিক্সা থামার আগে দূর থেকেই দেখা যাচ্ছে, পারুলদের বাড়িতে লোকজন আসা যাওয়া করছে। মহিলা আর বাচ্চার সংখ্যা বেশি। অজানা ভয় আমার ভিতরে প্রবেশ করলো। পনেরো মিনিট আগে মাত্র পারুল আমাকে বলেছিল, আমি তাড়াতাড়ি না আসলে কিছু একটা করে ফেলবে। জেদি মেয়ে পারুল, কিছু করে বসেনি তো? 
 
ভয় যা পেয়েছি, তাই ঘটেছে। পারুলের মা কান্না করতে করতে দুইবার অজ্ঞান হয়েছে। পারুল হাতের রগ কেটে ফেলেছে। ঘরের মেঝেতে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করেছে। হাসপাতালে নিয়ে গেছে পারুলকে। ঘরের মেঝেতে যে পরিমাণ রক্ত দেখা যায় তাতে মনে হয় পারুলকে হাসপাতালে নিতে দেরি করে ফেলেছে। দরজার একপাশ ভাঙ্গা। পাশেই একটা শাবল রাখা। হাসপাতালে কে নিয়ে গেছে তা জানি না। হতে পারে পারুলের ভাই অথবা বাবা। অন্য কেউও হতে পারে। 
 
আমি আর দেরি না করে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলাম। যে রিকসা দিয়ে এসেছিলাম সেটা আর পাইনি। বাধ্য হয়েই বড় মসজিদের মোড়ে গিয়ে রিকসায় উঠলাম। গন্তব্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল। মনটা অস্থির হয়ে আছে। কী করলো এইটা পারুল? মাত্র পনেরো মিনিট সময়ের জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলল। পনেরো মিনিটের মধ্যে কী এমন ঘটলো যে পারুল আত্মহত্যার চেষ্টা করলো।
শামীমের সাথে প্রেমের সম্পর্কের কথা পারুলের বাড়ির কেউ জানে না। জানলেও তারা কখনোই মেনে নিবে না। মেনে না নেবার কারণ হলো শামীম পারুলের আপন খালাতো ভাই। আর তাদের দুই পরিবারের দা কুমড়া সম্পর্ক। তবুও তারা প্রেমে জড়িয়েছে। ভালোবেসেছে একে অপরকে। প্রেম কি সত্যিই কোনো বাঁধা মানে না? 
 
তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে রিকসা ভাড়া না দিয়েই হাসপাতালে ঢুকে যাচ্ছিলাম। ড্রাইভার ডেকে বলল, "মামা ভাড়াটা।" একটু লজ্জাও পেলাম বটে। ভাড়া চুকিয়ে হাসপাতালে ঢুকলাম। জরুরী বিভাগের বাইরে দাঁড়ানো দুই চারজন কথা বলছে। কিন্তু পারুলের বাবা কিংবা ভাই কাউকে দেখতে পেলাম না। ভিতরে প্রবেশ করতে চাইলাম, পারলাম না। নার্সকে বললাম, "একটু আগে একটি মেয়েকে আনা হয়েছিল। সম্ভবত হাতের রগ কেটে ফেলেছে। মেয়েটি এখন কোথায়?"
 
নার্স জবাবে বলল, "আপনার কে হয় তা তো জানি না। তবে মেয়েটি মারা গেছে। মেয়েটির বাবার ধারণা, মারা যায়নি। তারা অযথাই মেয়েটিকে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছে।"
 
হাসপাতাল থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। মাথাটা কেমন যেন করছে। হৃদপিন্ডটা দ্রুত লাফানো শুরু করেছে। পারুল মারা গেছে এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে। আমি আর পনেরো মিনিট আগে গেলে কি পারুলকে বাঁচাতে পারতাম? শামীম জানে পারুলের এই খবর? একটা ফোন দিয়ে দেখি। পকেট থেকে মোবাইল বের করে দেখি বাবা কখন যেন দু'বার ফোন দিয়েছিল। মিস কল লেখা উঠে আছে। হাসপাতাল অথবা পারুলদের বাড়িতে থাকা মানুষের শব্দে হয়তো মোবাইলের রিংটোন শুনতে পাইনি। প্রথম ফোনটা বাবাকেই দিলাম। দ্বিতীয়বার রিসিভ হলো। বাবা জানতে চাইলো, " শাহীন কোথায় তুই?"
 
-সদর হাসপাতালের সামনে।
-হাসপাতাল কেন? কার কী হয়েছে?
-তেমন কিছু না বাবা, একজনের সাথে দেখা করতে এসেছি। আপনি মনে হয় ফোন দিয়েছিলেন।
-ও হ্যাঁ। গত রাতের ডাকাতির ঘটনায় পুলিশিং কমিটিতে এলাকার মানুষজনদের বিকালে থাকতে বলেছে। তোকেও থাকতে বলেছে, তোকে নাকি রাতে পাহাড়াদার ফোনে কথা বলতে দেখেছে।
-আশ্চর্য, আমি ফোনে কথা বলেছি মানে কি ডাকাতদের ফোন করে নিয়ে এসেছি?
-আমরাও তো থাকবো সেখানে। একটা কিছু বললেই মেনে নেব নাকি আমরা? কিন্তু তুই উপস্থিত না থাকলে মিথ্যেটাকেই সত্য বলা শুরু করবে।
-আচ্ছা আমি কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসব। 
 
সিগারেট ধরিয়ে এলোপাথারি টানছি। একদিকে পারুলের মৃত্যু সংবাদ। অন্যদিকে আবার এই ঝামেলার সৃষ্টি হলো। মাথা কাজ করছে না। মনে হচ্ছে দুপুরের এই কড়া রোদে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবো না। তার চেয়ে ভালো, একটা রিক্সা নিয়ে বাড়ি চলে যাই। শামীমকে আর এখন ফোন দেব না। আগে নিজের ঝামেলা শেষ করি। 
 
সমাজ থেকে অপরাধ কমাতে প্রতি মহল্লায় নরসিংদী মডেল থানার পুলিশের তত্বাবধানে গড়ে উঠেছে পুলিশিং কমিটি। আগে যারা গ্রাম্য শালিস করতেন, পঞ্চায়েত, তারাই কমিটিতে। রাস্তার দুই প্রবেশ পথে পাহারাদার থাকতে ডাকাতরা কীভাবে ঢুকে আমার ধারণার বাইরে। অথচ রাতে আমার বাড়ির সামনে বসে ফোনে কথা বলেছি, সেজন্য আমিও উপস্থিত এখানে। ঐদিকে পারুলকে ঢাকা থেকে আনা হয়েছে কি-না জানা হলো না। 
 
-তুমি না-কি রাত দুইটার সময় রাস্তায় বসে কথা বলছ ফোনে?
মুরব্বি গোছের একজন প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন আমার দিকে। এখানে উপস্থিতর এলাকার মোটামোটি সবাই। সাথে উপস্থিত পাহারাদার ও যার বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে তিনি। আমি ঠান্ডা মাথায় উত্তর দিলাম, "হ্যাঁ আমি কথা বলেছিলাম। "
 
-এতো রাতে কার সাথে কথা বলেছো বাবা?
-এতো রাতে একটা যুবক ছেলে কার সাথে কথা বলকে পারে আংকেল?
-তুমি দেখি আবার উল্টা আমাকেই প্রশ্ন করো। পাহারাদারদের অভিযোগ তোমাকে রাতে ফোনে কথা বলতে দেখেছে। এর একটু পরই ঐ বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে।
-তো আপনারা কেন বুঝতে পারছেন না, পাহাড়াদার কেন অভিযোগ তুলছে? রাস্তার দুই প্রবেশ পথে পাহারাদার থাকতে ডাকাত ঢুকে কীভাবে মহল্লার ভিতরে?
 
এবার সবাই চুপ। মনে মনে নিজেকে নিজে ধন্যবাদ দিচ্ছি এই ভেবে যে, ভালো একটি পয়েন্ট ধরে কথা বলেছি। পাহারাদারদের একজন হঠাৎ বলে উঠলো, "আমরা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকি না। পুরো এলাকা ঘুরে ঘুরে পাহাড়া দেই। হতে পারে এলাকার ভিতরকার মানুষই নয়তো চুরি করতে পারে।"
সে যাই হোক, প্রাথমিকভাবে এই ঝামেলা থেকে মোটামোটি একটু মুক্তি পেলাম। এবার পারুলের খোঁজ নেয়া যেতে পারে। আমি কি তাদের বাড়ি যাব?
 
শামীমের মোবাইল বন্ধ। বন্ধ মানে, একদমই বন্ধ। বিশ মিনিটের মধ্যে আমি মনে হয় চল্লিশবার ফোন করেছি। মোবাইলের ভেতর থেকে রেকর্ডকৃত একই শব্দ বারবার শুনিয়ে যাচ্ছে। শামীমের মোবাইল বন্ধের কোনো কারণ দেখি না। সে ফোনে চার্জ থাকতে চার্জ দিয়ে রাখে। আমাকে একদিন বলেই দিলো, "শাহীন ভাই তুমি যতো রাতেই ফোন দেও, একবারের বেশি রিংটোন বাজবে না। তাঁর আগেই আমি রিসিভ করে ফেলব।"
 
সেই শামীমের ফোন বন্ধ বিষয়টা আমাকে ভাবিয়ে তুলছে। আর ভাবতে বাধ্য করছে পারুলের মৃত্যুটা। আমি ফোন দিলাম আমাদের কলেজের রবিকে। তাকে ফোন দিলে মোটামোটি বিবিসির খবরের মতো সব খবরই পাওয়া যায়। 
 
ফোন রিসিভ করে রবি ফিসফিস করে বলছে, "খবর কিছু পেয়েছিস? পারুল তো আত্মহত্যা করেছে।"
-খবর পেয়েছি। শামীম জানে বিষয়টা? তাঁর মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি।
-শামীমের মোবাইলের চিন্তা বাদ দিয়ে তোর মোবাইলটাও বন্ধ কর। পুলিশ যেকোনো সময় তোকে ফোন দিতে পারে।
 
-কী বলছিস এসব? আমাকে ফোন দিবে কেন?
-আমি এখন পারুলদের বাড়িতে। পুলিশ এসেছে তাদের বাড়ি। পারুলের মোবাইলে সর্বশেষ তোর ফোন কল ছিল। পারুলের মা'কে জিজ্ঞেস করার পর তিনি বলেছেন পারুলের ঘনিষ্ট একজন তুই। তাদের বাড়িতেও তোর যাতায়াত রয়েছে। সুতরাং তোকে ফোন করতে পারে যেকোনো সময়। 
 
-পাগলামি করিস না শাহীন। গরম গরম তোকে দেখতে পেলে পুলিশ সোজা তোকে ধরে নিয়ে যাবে। কিছু করিস আর না করিস, রিমান্ডে নিয়ে হাত পা ভাঙ্গা শুরু করবে। এটা খুনের তদন্ত, গ্রামের শালিস না।
আমি ফোন রেখে দিলাম। সমস্ত ঝামেলা কেন আমার উপরই চলে আসে বুঝতে পারলাম না। ফোন বন্ধ করার আগে আবারো শামীমকে ফোন দিলাম। তাঁর মোবাইল বন্ধ। সে কি জানতো সব কিছু নাকি জেনে গেছে? শামীমের সাথে আমার দেখা করাটা জরুরী ছিল। তাঁর বাড়ি চিনি না। শুনেছি খালপাড়ের দিকে বাড়ি। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। আমি একরাশ চিন্তা নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি। 
 
আমার হাতে কোনো হাত ঘড়ি নেই। রুমের দেয়ালেও কোনো ঘড়ি নেই। সবসময় মোবাইল থেকেই সময় দেখে অভ্যস্ত। এখন মোবাইলটিও বন্ধ। সিম খুলে ফেলে যদি মোবাইল চালু করি তাহলে হয়তো সময় দেখা সম্ভব। কিন্তু ইচ্ছে করছে না। হতে পারে রাত আনুমানিক একটা। আমার চোখে কোনো ঘুম নেই। হাসিখুশি থাকা মেয়েটা কীভাবে করলো এমনটা? একটা মাকরসার বাচ্চা দেখে যে পারুল ভয় পেতো। সে কী করে এক হাত দিয়ে আরেক হাতের রগগুলো কেটে ফেলল? 
 
তাঁর হাতে অনেক সময় ছিল। ইচ্ছে করলে নিজেকে বাঁচাতে পারতো। কিন্তু যে মরবার জন্য হাত কেটেছে সে নিজেকে আর বাঁচাবে কেন? হাতের রগ দিয়ে রক্ত বের হয়ে দরজার নিচ দিয়ে যখন বাইরে যাচ্ছিলো তখনই হয়তো তাঁর বাড়ির লোকজন টের পায়। কিন্তু ততক্ষণে রক্ত সব বেরিয়ে যাচ্ছিলো। 
 
কেন করলো পারুল? শামীমের সাথে রাগারাগি, ঝগড়া এর আগেও বহুবার হয়েছে। আমি বা রবি তাদের ঝগড়া মিটিয়ে দিয়েছি। এবারও নাহয় মিটিয়ে দিতাম। শুধু ঝগড়ার জন্য পারুল আত্মহত্যা করবে? দুই পরিবার মেনে না নিলেও তাদের মিলিয়ে দিতেও আমরা বন্দুরা মিলে পরিকল্পনা করে রেখেছি। তবে কেন আত্মহত্যার মতো কাজ করতে গেল পারুল? 
 
বাড়ির গেইটে জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছে কেউ। আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। দরজা খুলে বের হয়ে গেইটের কাছে যাবার আগে হঠাৎ মনে হলো, এত রাতে পুলিশ এলো নাকি? পুলিশই তো হবে। এর মধ্যে দেখি বাবা দরজা খুলে বের হয়েছে। আমাকে দেখে কিছু বলতে যাবে, আমি আমার ঠোঁটে আঙ্গুল ঠেকিয়ে কথা না বলার ইশারা করলাম। এরই মধ্যে গেইটে আরো জোরে ধাক্কা দিয়ে কেউ জোর গলায় বলছে, "বাড়িতে কে আছে গেইট খুলুন। আমরা আইনের লোক।"
 
চলবে....... ----------------------
ওপারে_অন্ধকার
#পর্ব_১
লেখক_মোহাম্মদ_ওমর_ফারুক

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url