Golpo Lash | Part- 1 | Gayer Meye Shohorer Chele 8 | গাঁয়ের মেয়ে শহরের ছেলে ৮ | New Natok | Azmayeen | Rabina | Natok 2022
Jannat
9 Sep, 2022
রফিক সাহেবের স্ত্রী সামিয়া যখন সকাল বেলা ময়লার ঝুড়িতে ময়লা ফেলতে গেলেন বাল্টি থেকে ময়লা ঢেলে দেওয়ার সময় ই আঁতকে উঠলেন তিনি।তার হাত থেকে ময়লার ঝুড়ি টা পড়ে একটি শব্দ হলো।”ওরে আল্লাহ্ রেএএএ” বলে বুকে হাত দিয়ে চেপে ধরে সামিয়া বাসার দিকে দৌড় দিলেন।বাসার দরজা খুলে ভেতরে ঢুকেই ডাইনিং টেবিলের উপর রাখা জগ থেকে গ্লাসে পানি না ঢেলেই খেতে শুরু করলেন।অতিরিক্ত তাড়াহুড়োয় পানি খাওয়ার চেষ্টায় কিছু পানি সামিয়ার শরীরে ও পড়লো।
পানি খাওয়া শেষে শব্দ করে জগ টা টেবিলের উপর রেখেই রুমে গিয়ে শুয়ে থাকা রফিক সাহেবকে জড়িয়ে ধরলেন।মৃদু ঘুমের ঘোরে আচ্ছাদিত থাকা রফিক সাহেব হঠ্যাৎ করে সামিয়া এসে বুকে পড়ে জড়িয়ে ধরায় কিছুটা ভয় পেয়ে কেঁপে উঠলেন।সামিয়া মাঝেমধ্যেই এভাবে অল্প কিছুতে ভয় পেয়ে যান।আজ ও সেরকম কিছু হয়েছে ভেবে রফিক সাহেব সামিয়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে উঠে বসেন।শান্ত ভাবে সামিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে তিনি জিজ্ঞেস করেন,’কী বেপার, আজ আবার কি দেখে তুমি ভয় পেলে!রান্না ঘরে তেলাপোকার উপদ্রব বেড়ে গিয়েছে নাকি?’সামিয়া ভয়ার্ত চোখে রফিক সাহেবের দিকে তাকান।রফিক সাহেব বুঝতে পারেন আজ বিষয়টি মুটেও স্বাভাবিক না,এমন সময় রসিকতা করে কাটিয়ে দেওয়া টা তার ঠিক হয় নি।
সামিয়া আজ সাধারণ কিছুতে প্রতিদিনের মতো ভয় পায় নি।তার চোখ দুটো কেমন লাল হয়ে গিয়েছে।সামিয়া যখন খুব বেশি ভয় পান তখন এরকমটা হয়।রফিক সাহেব সামিয়াকে কোন ভাবে শান্ত করার চেষ্টা করেন।নিজের বাহুতে পুরে নিয়ে বাচ্চাদের মতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সামিয়ার শরীরের কাঁপুনি বন্ধ করার চেষ্টা করেন।তারপর স্থির কন্ঠে বলেন,’কি হয়েছে বলো?তুমি যদি কিছু না বলো তাহলে আমি কিভাবে বুঝবো!’সামিয়া এবার মুখ খুলেন।দ্রুততার সাথে তিনি বলেন,’রফিক, রফিক সেখানে একটি মানুষের মাথা,রফিক মানুষের গলা কাটা মাথা রাখা’ বলেই সে এক মর্মস্পর্শী কান্নায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন রফিক সাহেবকে।
সামিয়ার সেরকম কান্নায় যে কেউ ভয় পেয়ে যেতে পারে।সামিয়া ভয়ে রফিক সাহেবের পিঠে এমন ভাবে খামচে ধরেন যে কিছু জায়গায় নখের দাগ বসে যায়।সামিয়া যখন খুব বেশি রেগে যান কিংবা ভয় পান তখন রফিক সাহেব কে নাম ধরেই ঢাকেন আজ ও তিনি ভয়ে ডেকে ফেলেছেন।রফিক সাহেবের সামিয়াকে আবার জিজ্ঞেস করেন,’কোথায়!কোন জায়গায় আমাকে বলো আমি গিয়ে দেখছি?’সামিয়া জানালার দিকে আঙ্গুল তাক করে বলে,’নিচে ওই খানে ময়লার ঝুড়িতে,মাথা টার চোখে মুখে এখনো রক্তের দাগ রয়েছে, কিছু জায়গায় খাঁজ কাটা’রফিক সাহেব প্রথমত ধরে নিলেন সামিয়া ভুল কিছু দেখে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছেন তাই তিনি বিষয় টাকে তেমন আমলে নেন না।
কিন্তু সামিয়ার চরম জোরাজোরিতে রফিক সাহেব নিচে গিয়ে দেখে আসতে বাধ্য হন।ধীরে পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে ময়লার ঝুড়ির কাছে যেতেই দেখেন তাদের বাসার ময়লার বালতি টা পড়ে আছে।একটু এদিক ওদিক তাকাতেই রফিক সাহেবের ও চোখে পড়ে যায় সামিয়ার তথাকথিত সেই মানুষের মাথা টা।সেখান থেকেই জানালা দেখা যায়। রফিক সাহেব সেখান থেকেই জানালার দিকে একবার তাকান।তিনি দেখতে পান সামিয়া সেখানে পর্দার আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকে দেখছে।রফিক সাহেব টান পাড়া দিয়ে বাসায় ফিরে আসেন।বাসায় এসেই মিরপুর থাকার ওসি আব্দুল কবির কে ফোন করেন।–হ্যালো, কবির সাহেব।–জ্বী,কবির বলছি,বলুন।–আমি রফিক।-
-হ্যা,রফিক সাহেব বলুন।কবিরের সাথে অফিসের কিছু কাজে একবার বেশ ভালো পরিচয় হয়ে গিয়েছিলো রফিক সাহেবের। তাই তাকেই ফোন দিলেন তিনি আগে।–স্যার আজ সকালে আমাদের বাসায় ময়লার ঝুড়িতে একটি মানুষের মাথা পাওয়া গিয়েছে।আপনি আসুন কিংবা আপনার টিম কে পাঠান।–আচ্ছা, ঠিকাছে। আপনি ঠিকানা টা বলুন এবং কেউ কিছুতে হাত দিবেন না।–ঠিক আছে।আধ ঘন্টার ভেতরেই একটি পুলিশের জিপ এসে থামলো রফিক সাহেবের বাড়ির সামনে।
কলিং বেল বাজতেই রফিক সাহবে দরজা খুলে দিলেন।তারপর আব্দুল কবির কে ময়লার ঝুড়ি দেখিয়ে এবং সকালে তার স্ত্রীর দেখার পুরো ঘটনাটি বলে রফিক সাহেব বাসায় ফিরে আসেন।ফরেনসিক টিম কে সাথেই নিয়ে এসেছিলেন আব্দুল কবির। আশে পাশের এলাকা এবং পুরো ময়লার ঝুড়ি সবাইকে তল্লাশি চালাতে বলে পকেট থেকে একটি সিগারেট বের করে জ্বালিয়ে দেন।আব্দুল কবিরের সিগারেট এর শেষ প্রান্ত আগুন আসার আগেই তাকে ফেলে দিতে হয় সিগারেট। ফরেনসিক টিম একে একে বের করে আনে তিনটি মাথা।এবং একটি বড় ব্যাগ।ওসিকে ডেকে ব্যাগ খুলতেই সবাই চমকে যায়।
ভয়ে সবার হৃদয় কেঁদে উঠে।ব্যাগের ভেতর টুকরো টুকরো মাংস।মানুষের শরীরের মাংস। এগুলো হয়তো ঐ তিনটা মাথার ই নিচের অংশ।একটা মানুষ এতো টা হিংস্র কিভাবে হতে পারে, গলা কাটার পর মানুষ গুলোর দেহকে ও রেহাই দেয় নি।কেটে কেটে বস্তায় পুরে রেখেছে।সব কিছু ল্যাবে পাঠিয়ে আব্দুল কবির আসে পাশে নিজে কিছু খোঁজ খবর নেন।তবে কেউ ই এই বিষয়ে জানে না।জীপে চড়ে বসেন আব্দুল কবির।শান্ত হাসি খুশি চেহারার আব্দুল কবিরের মুখ টা এখন কেমন গম্ভীর হয়ে গিয়েছে।কেমন একটা গভীর ভাবনায় ডুবে গিয়েছেন তিনি।কনস্টেবল লতিফ কে জিজ্ঞেস করেন,–আচ্ছা লতিফ এই গলিতে কয়টা বাড়ি আছে?–স্যার মোটে ৪৬টা।-
-এদের মধ্যে কতো গুলো বন্ধ?–তিন টা স্যার।–তাহলে বাকি থাকলো ৪৩টা।এই ৪৩টা বাড়ির সবাই কেই তো জিজ্ঞেস করেছিলে?–হ্যা,স্যার কিন্তু তারা কেউ ই কিছু জানে না।স্যার,আমি একটা জিনিস ধরতে পারলাম না যে খুনি খুন করে কেনো রফিক সাহেবের বাড়ির সামনের ময়লার ঝুড়িতে কেনো রাখলো,খুনি কি রফিক সাহেব কে ফাঁসাতে চায়?–নাহ্ ফাঁসাতে চাইলে এমন ভাবে রাখতো না।খুনি বোধহয় এটা চায় যে লাশ গুলো কে এবং তার খুনকে সবাই দেখুক। তবে এগুলো সে অন্য জায়গায় ও রাখতে পারতো।রফিক সাহেবের বাড়িতেই কেনো রাখলো সেটা ধরতে পারছি না।নিশ্চয়ই এর সাথে রফিক সাহেবের কিছু না কিছু জড়িত আছে।-
-খুনি বোধহয় কোন সিরিয়াল কিলার স্যার?–হ্যা, হতেও পারে।আমাদের ধীরে ধীরে সব পর্দা সরিয়ে রহস্য উন্মোচন করতে হবে।থানায় পৌঁছে এক ঘন্টা পর আব্দুল কবিরের হাতে লাশ গুলোর চেহারার ঝাপসা কিছু ছবি এলো।লাশ গুলোর মুখ এমন ভাবেই বিকৃত করা হয়েছে যে কোন ভাবেই চেহারার স্পষ্ট ছবি বের করা যাচ্ছিলো না।তবুও বহু কষ্টে এই ছবি গুলো বের করা হয়েছে।শরীরের অন্যান্য অংশের সাথে মাথার ডিএনএ মিলেছে,অর্থাৎ তিনটি লাশ।এবং লাশ গুলোর মৃত্যু প্রায় চব্বিশ ঘন্টা আগে হয়েছিলো। খুনি প্রথমে প্রত্যেকটা লাশের মাথায় ভারি কিছু দিয়ে আঘাত করে।তিনজন ই তখন ঘুমিয়ে ছিলো ধারণা করছে ফরেনসিক ডিপার্টমেন্ট। তারপর ছুরি বা এরকম কিছু দিয়ে তাদের গলা টা কেটে দেয়।এবং তারপর তাদের শরীর কে টুকরো টুকরো করে।
আব্দুল কবির সাহেব রিপোর্ট টা পড়তে পড়তে সাতটি সিগারেট খেয়ে ফেললেন।তার জীবনের সব চেয়ে ভয়ংকর কেইস এটা। তিনি আগে কখনোই এতো অমানবিক ভাবে হত্যা কান্ডের কেইস হাতে পান নি।লাশ গুলোর শরীরের বিভিন্ন অংশ এখনো তার চোখে ভাসছে।একটা মানুষ কিভাবে আরেক টা মানু্ষের পুরো দেহ টুকরো টুকরো করে কাটতে পারে। ভাবতেই কেমন জানি গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছিলো রফিক সাহেবের।তার একার ধারা বোধহয় এই কেইস এর গোড়া পর্যন্ত পৌছানো সম্ভব হবে না।ফোন হাতে নিয়ে তিনি রাজ কে ফোন দিলেন।অনেক কেইসেই রাজ তাকে নানা ভাবে সাহায্য করেছে। আব্দুল কবিরের ধারণা এই কেইস টা রাজ ছাড়া আর কারো সাহায্য নিয়ে তার সমাধান করা সম্ভব না।
একবার ফোন দিতেই কল রিসিভ করলো রাজ,–হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম স্যার।–ওয়ালাইকুম সালাম।রাজ কোথায় তুমি?–একটু বাহিরে স্যার।–এক্ষুনি তুমি থানায় চলে এসো।ইতির দিকে মন খারাপ করা দৃষ্টি ফেলে তাকালো রাজ।রাজ কিছু বলার আগেই ইতি বলে উঠলো,–কে ফোন দিয়েছিলো, আমি পাঁচ বার ফোন দেওয়ার আগে ফোন রিসিভ করো না আর এখন একবার ফোন দিতেই রিসিভ করে ফেললা?
গার্লফ্রেন্ড এর ক্ষোভ বুঝতে পেরেও রাজ কিছু বললো না।রাজের চুপ করে থাকা দেখে ইতি আবার বলে উঠলো,–কে ফোন দিয়েছিলো বলো!আজ এতো দিন পর তোমার সাথে ঘুরতে বেরিয়েছি আর এখন কে ফোন দিলো বলো?আমার পেছন পেছন আরো কারো সাথেও কি তুমি?ইতিকে থামিয়ে রাজ বললো,–আরেহ্ নাহ্ নাহ্।আব্দুল কবির স্যার ফোন দিয়েছিলেন।থানায় যেতে হবে। আমি উঠি।বলেই বলেই রাজ বসা থেকে উঠে গেলো এবং যেতে যেতে ইতির দিকে তাকিয়ে বললো,”তোমায় অনেক ভালোবাসি”।
চলবে.......
গল্পঃ লাশ
পর্ব-১
"❝সংগ্রহীত❞"