গল্পঃ অচেনা ভালোবাসা | Story :: Ochena Valobasha (Part-02)
#অচেনা ভালোবাসা
[২য় পর্ব ]
#লেখক - আবির চৌধুরী
আমি আব্বুর সামনে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি।
আব্বু আমাকে কেন চড় মারল বুঝতে পারলাম না।
আব্বু -- তুই এতোটা খারাপ হয়ে জাবি কখনও ভাবি নাই।
-- আমি কি করলাম সেটা তো বলবে! কি কারণে এসব বলছ আমাকে?
-- তুই মেয়ে দের সম্মান করতে শিখলিনা এখনো? তোকে এতদিন আমি এই শিক্ষা দিয়ে আসছি?
আমার আর বুঝতে বাকি রইল না তিশা হয়তো আব্বুকে বলে দিছে সব। আমি আব্বুর পিছনে তাকিয়ে দেখি তিশা দাঁড়িয়ে আছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। আমি আর কিছু না বলে নিজের চোখ মুছে রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে ওয়াশরুমের ভিতর গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে আসলাম।
আমি বসে বসে মোবাইল টিপছি এমন সময় তিশা রুমে চলে আসলো। আমি তিশার দিকে তাকিয়ে আবার ফোনের দিকে চোখ দিলাম। তিশা এবার ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো। কিছুক্ষণ পরে আবার বের হয়ে গেলো। খাবার খাওয়ার সময় হয়ে গেছে কিন্তু আমাকে কেউ ডাকতে আসলো না তাই নিজেই চলে গেলাম খাবার খাওয়ার জন্য। গিয়ে দেখি সবাই খাবার খাচ্ছে। খুব খারাপ লাগছে দেখে। তাই খাবার না খেয়ে নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লাম।
তিশা -- তুই খাটের উপরে কি করিস? তোকে না বললাম তুই নিচে ঘুমাবি আবার খাটের উপরে আসলি কেন?
আমি -- আসলে কাল রাতে ঠিক ভাবে ঘুমাতে পারিনি। এর আগে কখনও নিচে ঘুমাইনি। আমার নিচে অনেক কষ্ট হয় ঘুমাতে।
তিশা -- তোর কষ্ট হলে আমি কি করব! যা নিচে ঘুমা।
আমি আর কিছু না বলে নিচেই শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আমার চোখে ঘুম নেমে আসলো। হঠাৎ করে ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার বন্ধু রাসেল কল দিয়েছে। তাড়াতাড়ি করে কল রিসিভ করলাম।
আমি - হ্যালো, রাসেল বল!
রাসেল -- তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে তাড়াতাড়ি করে নদীর পাড়ে আয়।
আমি -- ঠিক আছে তুই বস আমি আসছি।
এই কথা বলে কল কেটে দিলাম। তারপর রেডি হয়ে চলে গেলাম নদীর পাড়ে। ওখানে গিয়ে দেখি রাসেল আমার আগেই এসে বসে আছে। ওহ রাসেলের কথা তো বলাই হয়নি। রাসেল আমার সব থেকে কাছের বন্ধু। এক কথায় নিজের আপন ভাইয়ের মতই বললে চলে।
রাসেল -- জাহিদ তোর নামে কি সব শুনছি? এসব কি সত্যি?
আমি -- বুঝতে পারলাম না কি বলছিস তুই?
রাসেল - তুই নাকি তিশার সাথে খারাপ কাজ করতে চেয়েছিস! কথা টা কি সত্যি? আমার তো কারোর কথা বিশ্বাস হচ্ছেনা কারণ আমার থেকে ভালো কেউ তোকে চিনেনা। তুই আমাকে বল সব কি ছিল ব্যাপার টা!
আমি রাসেলের কথা শুনে মাথা নিচু করে বসে আছি।
রাসেল -- চুপ করে থাকিস না বল আমাকে সব কিছু।
আমি -- ঠিক আছে বলছি। তুই তো সব জানিস তিশা কে আমি অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি। আর ওঁকে অনেক বার প্রপোজ করেছি কিন্তু ও আমাকে সব সময় অপামান করছে।
আব্বু -- জাহিদ আমি আর তোর আম্মু দুদিনের জন্য একটা যায়গায় যাবো। তোকে বাড়িতে একাই থাকতে হবে। যদি কিছু দরকার হয় তো তিশা দের বাসায় গিয়ে বললেই হবে।
আমি -- ঠিক আছে আব্বু। কখন যাবে তোমরা?
আব্বু -- কাল সকালে। আর হে এখন খেতে আয়। তোর আম্মু অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
আমি -- তুমি যাও আমি এক্ষনি আসছি।
তারপর আব্বু চলে গেলো আমার রুম থেকে। কিছুক্ষণ পরে খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে দেখি আমার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে। আমি বসতেই আম্মু খাবার বেড়ে দিল। তারপর আমরা খাবার শেষ করে নিলাম। আর আমি আমার রুমে চলে গেলাম। সেদিন রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো।
আম্মু -- জাহিদ তুই এখনও ঘুমিয়ে আছিস! আমরা তো এখন বের হয়ে যাবো। তুই উঠে ফ্রেশ হয়ে আয় নাস্তা করব একসাথে।
তারপর আমি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে চলে গেলাম। আর নাস্তা খাওয়া শেষ করে নিলাম।
আম্মু -- আসি বাবা সাবধানে থাকিস ঠিক আছে?
আমি -- আমাকে নিয়ে তোমাদের চিন্তা করতে হবে না তোমার সাবধানে যেও আল্লাহ হাফেজ।
তারপর আম্মু আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বের হয়ে চলে গেলো। তারপর আমি আমার রুমে গিয়ে পড়তে বসলাম। হঠাৎ করে তিশা আমার রুমে আসলো। আমি তিশা কে দেখে চমকে উঠলাম আর ওর দিকে হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম। তিশা কে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে।
তিশা -- কিরে কি দেখিস এই ভাবে তুই?
আমি -- পরি দেখছি।
তিশা -- মানে!
আমি -- কিছু না, হঠাৎ তুই আমার রুমে কেন? কিছু লাগবে নাকি? আম্মু তো বাসায় নাই কাল আসবে।
তিশা -- এমনি আসলাম বাসায় একা একা ভালো লাগছে না তাই তোর সাথে গল্প করতে আসলাম।
তিশার কথা শুনে আমি রীতিমতো হতবাক হয়ে গেলাম। যে মেয়ে আমাকে সব সময় এড়িয়ে চলে আর আজ সে নিজে আমার সাথে গল্প করতে আসল।
আমি -- ঠিক আছে কিন্তু আমি তো এখন পড়ছি। পড়া শেষ করেনি কেমন?
তিশা -- সারাদিন শুধু পড়া, এই পড়া দিয়ে কি হবে এমন? বই রাখ আর গল্প করবো।
আমি -- ঠিক আছে।
তারপর আমি আর তিশা অনেক্ষন কথা বললাম দেখতে দেখতে সন্ধ্যা হয়ে আসলো। চারদিকে অন্ধকার নেমে আসলো।
তিশা -- জাহিদ চল ছাদে যাই। আকাশে খুব সুন্দর চাঁদ উঠেছে।
আমি -- চাঁদ তোর ভালো লাগে?
তিশা -- হুম খুব ভালো লাগে চল না।
তারপর তিশা আমার হাত ধরে টেনে ছাদের উপরে নিয়ে গেলো। তিশা আমার হাত ধরতেই আমার বুকের ভিতর টা কেপে উঠল। তিশা যখন আমাকে টেনে ছাদের উপরে নিয়ে যাচ্ছে আমি তিশার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলাম শুধু।
তিশা -- আজকে আকাশে চাঁদটা খুব সুন্দর তাই-না?
আমি তিশারা দিকে তাকিয়ে আর চোখ সরাতে পারছিনা। আমার সামনে দুইটা চাঁদ আমি কোনটা রেখে কোনটা দেখব! যাদের আলোতে তিশা কে সত্যি অনেক সুন্দর লাগছে। তিশা আমাকে কিছু বলছে। কিন্তু তিশার কোনো কথা আমার কান অব্দি যাচ্ছেনা। এবার তিশা আমাকে একটা হালকা ধাক্কা দিল, আর আমার হুস ফিরে আসল।
তিশা -- তোকে আমি এতক্ষণ ধরে কিছু বলছি কিন্তু তুই কোনো উত্তর দিলি না কেন?
আমি -- আসলে আমি তোর কথা শুনতে পাই নাই। আসলে আমি চাঁদ নিয়ে বিজি ছিলাম। আমার সামনে চাঁদ টা সত্যি অনেক সুন্দর।
তিশা -- তোর সামনে মানি?
আমি -- হুম আমার সামনে মানি তুই। তুই চাঁদের থেকে কম কিসে? আমার সামনে দুইটা চাঁদ আমি কোনটা রেখে কোনটা দেখব? দুইটা চাঁদ যে আমার খুব প্রিয়।
তিশা আমার কথা শুনে হালকা একটা মুচকি হাসি দিলো। এই হাসিটার মানে আমি বুঝতে পারলামনা।
অনেক্ষন ধরে দু'জনেই চুপচাপ হয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছি। হালকা হাওয়াতে শরীর শীতল হয়ে গেছে। তিশার দিকে তাকিয়ে দেখি আর চুলগুলো হাওয়াতে ভাসছে। আর তিশার মুখের সামনে সব চুল চলে আসছে। খুব ইচ্ছে করছিলো ওর মুখের সামনে আসা চুলগুলো সরিয়ে দেই। কিন্তু আমি সেই সাহস পাচ্ছিনা। আমিও তাকিয়েই রইলাম শুধু।
তিশা -- জাহিদ এখন আমাকে বাসায় যেতে হবে আম্মু খুজে না পেলে আবার পুরো বাসা মাথায় তুলবে।
আমি -- ঠিক আছে যা।
তারপর তিশা আমার পাস থেকে উঠে চলে গেলো। আমি আরো কিছুক্ষণ বসে রইলাম একাই।