গল্পঃ অচেনা ভালোবাসা | Story :: Ochena Valobasha (Part-04)

 

#অচেনা ভালোবাসা
[পর্ব - ৪]
লেখক -- আবির চৌধুরী
রুমে বসে বসে ভাবছি কি ভাবে পারলো তিশা আমার সাথে এমন করতে। 
খুব খারাপ লাগছে কথা গুলো ভেবে। খাওয়া দাওয়া না করেই শুয়ে আছি। 
 
পরের দিন সকালে আব্বু আমার রুমে এসে বলল তিশা কে আমার বিয়ে করতে হবে। কথাটা শুনেই বুকের ভিতর টা কেপে উঠল। আমি আর কিছু বলতে পারলাম না আর আমাদের বিয়েটা হয়ে গেলো। তারপরে টা তো আপনারা সব জানেন তাই আর বললাম না। এই বার বাস্তবে ফিরে আসি।
রাসেল আমার সব কথা শুনে চুপ হয়ে গেলো।
 
রাসেল -- আমি জানতাম তুই কখনো কোনো খারাপ কাজ করতে পারিস না। এখন কি করবি?
আমি - দোস্ত আমার আর এখানে ভালো লাগছে না সবাই আমাকে খুব অবহেলা করছে। কেউ আমার সাথে কথা বলে না ঠিক করে। খুব কষ্ট হয় আমার। সবাই আমাকে খারাপ চোখে দেখে।
রাসেল -- তো তুই কই যাবি? 
 
আমি -- জানি না। তবে আমি এখানে থাকলে মারা পড়ে যাবো। এই ভাবে জীবন চলেনা। যেখানে আমার মা-বাবা আমার সাথে কথা বলে না সেখানে থেকেই বা কি করব বল? একটা মানুষ কতো অবহেলা সহ্য করতে পারে? আমি আর পারছিনা দোস্ত।
রাসেল -- আমি আর কি বলব তোর যেটা ভালো মনে হয় সেটাই কর। এখন চল বাসাত যাবো রাত অনেক হয়েছে।
আমি -- ঠিক আছে চল। 
 
তারপর আমি আমার বাসায় আর রাসেল, রাসেলের বাসায় চলে গেলো। বাসায় গিয়ে দেখি সবাই খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে আছে। আমি খাবার টেবিলের সামনে গিয়ে দেখি আমার জন্য কোনো খাবার নাই। তাই এক গ্লাস পানি খেয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখি তিশা ঘুমিয়ে আছে। আমি একটা বেগ নিয়ে কিছু জামাকাপড় নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। আব্বু আম্মুর রুমের সামনে গিয়ে দাড়ালাম। আব্বু আর আম্মু ঘুমিয়ে আছে। আমি আর তাদের কাছে আর গেলাম না৷ নিজের চোখ মুছে বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম। এই শহর থেকে আমি অনেক দূরে চলে যাবো। আমি চলে গেলাম রেলস্টেশনে। তারপর একটা টিকিট কাটলাম চট্রগ্রামে যাওয়ার জন্য। তারপর একটা ড্যান্সের উপরে গিয়ে বসলাম। হঠাৎ করে একটা মেয়ে আমার পাশে এসে বসল। আমি মেয়েটার দিকে না তাকিয়ে বসে আছি। 
 
-- হ্যালো! শুনতে পারছেন? একটা উপকার করতে পারবেন আমাকে?
আমি চুপচাপ বসে আছি মেয়েটির কোনো কথা আমার কান অব্দি আসছে না। আমি অন্যমনস্ক হয়ে আছি। 
 
মেয়েটা আবার বলল -- এইযে মিস্টার শুনতে পাচ্ছেন না নাকি আমার কথা?
একটু জোরেই কথাটা বলল। আমি চমকে উঠলাম আর বললাম -- আমাকে বলছেন?
-- জ্বী আপনাকেই বলছি, অনেক্ষন ধরে ডাকছি কিন্তু আমার কোনো কথার উত্তর তো পাচ্ছিনা।
-- সরি আমি শুনতে পাইনি।
-- ওহ আচ্ছা আমার একটা উপকার করতে পারবেন?
-- জ্বী বলুন কি করতে পারি আপনার জন্য? 
 
--- আসলে আমার ফোন অফ হয়ে গেছে বাসায় একটা ফোন দিতে হবে। প্লিজ আপনার ফোনটা একটু দিবেন আমি বাসায় একটা কল দেবো!
তারপর আমি মেয়েটার দিকে আমার ফোন এগিয়ে দিলাম। মেয়েটা আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কাকে যেনো কল দিল। কিছুক্ষণ কথা বলে আবার আমাকে ফোন ফিরিয়ে দিল।
-- ধন্যবাদ আপনাকে।
-- ঠিক আছে ধন্যবাদ লাগবে না।
-- আচ্ছা আপনি কই যাবেন?
-- চট্রগ্রাম। 
 
-- ওহ আমিও চট্রগ্রাম যাবো ভালোই হলো এক সাথে যেতে পারবো। উফস আমি একাই বক বক করেই যাচ্ছি আপনি কিছু বলছে না কেন?
-- এমনি ভালো লাগছে না।
-- নাম কি আপনার?
-- জাহিদ হোসেন। সবাই জাহিদ বলেই ডাকে।
-- খুব সুন্দর নাম আপনার। আপনি এতো বোরিং কেন?
-- আমি আবার কি করলাম?
-- আমার নাম জিজ্ঞেস করবেন না?
-- ওহ নাম কি আপনার?
-- আমার নাম নুপুর।
-- ওহ।
-- আচ্ছা আপনি চট্রগ্রাম কই যাবেন? ওখানে কি আপনার কেউ আছে?
-- না, 
 
-- তা হলে থাকবেন কোথায়? পরিচিত কেউ না থাকলে তো সমস্যা হবে।
এমন সময় ট্রেন চলে আসলো আমি আর উত্তর না দিয়ে হাটা শুরু করে দিলাম। গিয়ে ট্রেনের উপরে উঠে বসলাম। দেখি মেয়েটা আমার পাশের সিটে এসে বসছে। 
 
নুপুর -- এই আপনি আমাকে না ডেকে একাই চলে আসলেন কেন? আপনি তো আজব মানুষ একটা।
আমি -- ডাকার কি আছে ট্রেন আসছে আপনি তো দেখতেই পাচ্ছেন।
নুপুর -- তাও আপনার তো আমাকে ডাকার দরকার ছিলো।
আমি মনে মনে ভাবছি, এই মেয়ে এতো কথা কি ভাবে বলতে পারে? 
 
আল্লাই যানে আমার কি হাল করবে। এতো কথা কি করে বলতে পারে এই মেয়ে!
আমি চুপচাপ বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ করে নুপুর বলে উঠল-
নুপুর -- আপনি এমন নিরামিষ কেন? কথা বলতে কি ভয় লাগে আপনার? 
 
আমি এবার নুপুরের দিকে ভালো ভাবে তাকালাম। মেয়েটা দেখতে অনেক সুন্দরী। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক দিয়েছে। খুব সুন্দর লাগছে। মেয়েটার দিকে একটু রাগী ভাবে তাকালাম। আমার তাকানো দেখে মনে হয় মেয়েটা একটু ভয় পেয়ে গেছে। ভয় পেলেই ভালো। ট্রেন নিজের আপন গতিতে ছুটে যাচ্ছে। হঠাৎ করে একটা রেল স্টেশনে ট্রেন থেমে গেলো। আর সবাইকে বলছে কারো কিছু খাওয়ার দরকার হলে খেয়ে নিতে। আমি বসেই আছে কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। আব্বু আম্মুর কথা খুব মনে পড়ছে।
নুপুর -- এই যে মিস্টার চলেন কিছু খেয়ে আসি। 
 
আমি -- আপনি যান আমি কিছু খাবো না ভালো লাগছেনা আমার।
নুপুর -- এই কথা বললে হবে না চলেন, নাকি টাকা নাই? সমস্যা নাই আমি টাকা দেবো।
এই মেয়েটা একটু বেশি কথাই বলছে এখন। 
আমি দাঁড়িয়ে গেলাম আর মেয়েটার সাথে বের হয়ে গেলাম। 
 
আমি -- আপনি আমার টাকা দিতে হবে না। আমার কাছে টাকা আছে ওকে। এবার চলুন।
তারপর নুপুর কে নিয়ে বের হয়ে গেলাম। একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলাম আমরা। আমরা যে যার মতো খাবার অর্ডার দিলাম। খাবার নিয়ে চলে আসলো। তারপর আমরা আমাদের মতো করে খাবার খেয়ে নিলাম। কিছুক্ষণ পরে রেস্টুরেন্টের লোক আসলো বিল নিতে আমি আমার বিল দিয়ে বসে আছি। নুপুর নিজের বেগ খুলে দেখে কোনো টাকা নেই তার বেগে।
নুপুর -- আমার টাকা কই গেলো! আমার বেগে তো অনেক টাকা ছিলো। এখন আমার টাকা কই গেলো।
আমি -- কি হইছে আপনার? 
 
নুপুর মন খারাপ করে বলল -- আমার বেগে কোনো টাকা নেই মনে হয় চুরি হয়ে গেছে।
কথাটা শুনে অজানা ভাবে আমার মুখে একটা হাসি চলে আসলো। মেয়েটা একটু আগে বলছে আমার খাওয়ার বিল দিবে এখন নিজের টা কে দিবে। এসব ভেবেই মুচকি একটা হাসি দিলাম।
নুপুর আমার দিকে তাকিয়ে রাগী ভাবে বলল -- এই ভাবে হাসির কি আছে! মানুষ বিপদে পড়লে তাকে সাহায্য করতে হয়। আপনি আমার বিল টা দিয়ে দেন আমি চট্রগ্রাম গেলেই সব বিল পরিষদ করে দেবো।
আমি -- ঠিক আছে দিয়ে দিবেন কিন্তু। 
 
নুপুর -- আরে দিয়ে দেবো তো বললাম।
তারপর আমি নুপুরের বিল মিটিয়ে দিয়ে। আমরা আবার ট্রেনে এসে বসলাম। নুপুরের দিকে তাকিয়ে দেখি মন খারাপ করে বসে আছে। তাতে আমার জন্য একটু ভালোই হলো 
অন্তত এখন চুপ করে থাকবে।
কিছুক্ষণ পরে,,,,
চলবে, -----------------

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url