We are just friend | আমরা শুধুই বন্ধু

 We are just friend | আমরা শুধুই বন্ধু

ফাহিমা আমার জাস্ট ফ্রেন্ড।নাথিং এলস।ওকে আমি আমার বোনের মতো দেখি।একসাথে চলাফেরা করে বলেই যে,তার সাথে আমি খারাপ কিছু করে ফেলব এমনটা ভাবা ঠিক নয়।এগুলোর কুরুচিপূর্ণ মানুষের কাজ।
--দেখ জাহিদ,বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রেখে এভাবে কোনো বেগানা মেয়ের সাথে চলাফেরা করা ইসলামে জায়েজ নেই।এসব থেকেই তো যিনার পথ উন্মোচিত হয়।তাছাড়া,সৃষ্টিগতভাবে বেগানা ছেলে-মেয়ে একসাথে একত্রে থাকলে তাদের মধ্যে আকর্ষণ হবেই।এটাই স্বাভাবিক।আর বিবাহ বহির্ভূত এমন অবৈধ আকর্ষণ যিনায় রূপ নেয়। ফলে একজন বেগানা নারী-পুরুষের মধ্যে জাস্ট ফ্রেন্ড বলতে কিছু থাকতে পারে না।এই শব্দদ্বয় শয়তানের একটি ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয়।
--আহহা,তোদের এই একটাই সমস্যা।ছেলে মেয়ে এক হলেই তোরা যিনার বিষয় টেনে আনিস। তোদের মাথায় কেনো যে এসব আজেবাজে চিন্তা আসে-তা আমি বুঝি না।তোকে কে বলেছে আকর্ষণ সৃষ্টি হবে?কেনো,ছেলে মেয়ে কি এক হয়ে চলতে পারে না?এক হয়ে চললেই কি খারাপ হয়ে যাবে?আকর্ষণ চলে আসবে?যিনা করে ফেলবে?এগুলো কেমন কথা?তোরা এতো খারাপ মেন্টালিটি নিয়ে চলিস কেমনে?একজন মানুষের মন যদি পরিষ্কার থাকে তাহলেই হলো।মনের পর্দা বড়ো পর্দা।বুঝলি?
--তাহলে আর কাপড় পরিধান করার দরকার কী? এতো টাকা-পয়সা খরচ করে কাপড় কিনে কষ্ট করে কাপড় পরিধান না করে বরং মনে মনে কাপড় পরিধান করে নেংটু হয়ে চললেই তো হয়। কারণ মনের কাপড় বড়ো কাপড়।একইভাবে, এতো কষ্ট করে পাক করে খাবার রান্না করে খাওয়ারও দরকার কী?মনে মনে খেয়ে নিলেই তো হয়।মনের খাবার বড়ো খাবার।এগুলো তো বরং আরও অনেক সহজ।তাই না?
--আয়মান,তুই কী এসব আজেবাজে বকছিস? এগুলো কোনো কথা হলো!
--কেনো হবে না?তোদের কাছে যদি পর্দা না করেই মনের পর্দা বড়ো পর্দা হয়ে যায় তবে কাপড় পরিধান না করে মনের কাপড় বড়ো কাপড় হবে না কেনো?তোদের যুক্তিতেই তো প্রশ্ন রাখলাম!
--ইয়ে মানে...
--ইয়ে মানে কী,বল শুনি?আসলে তোদের সমস্যা কী জানিস?তোদের সমস্যা হচ্ছে,তোরা জাতে মাতাল তালে ঠিক।কোনো বিষয় নিজের অনুকূলে গেলে ঠিকই বুঝিস আর প্রতিকূলে গেলে না বোঝার ভান করিস।হিপোক্রেসি অ্যাট ইটস বেস্ট। যাইহোক,এবার তুই আমাকে একটু বল তো,লোভনীয় মানে কী?
--হঠাৎ এমন প্রশ্নের মানে কী?
--আরে ব্যাটা,বল না।
--যে জিনিসের আকর্ষণ রয়েছে সেটাতেই মূলত লোভের সৃষ্টি হয়।লোভনীয় মানেই তো বেশি আকর্ষণীয়।তাছাড়া,আকর্ষণ নেই এমন কোনো জিনিস তো আর লোভনীয় হতে পারে না।তাই না?
--এই তো সুন্দর বলেছিস।আচ্ছা!এবার বল, মানুষকে কে সৃষ্টি করেছে?
--বুঝতেছি না,তুই এসব কী শুরু করেছিস? এভাবে একটির পর আরেকটি এলোমেলো প্রশ্ন করে যাওয়ার মানে কি?
--আহহা,উত্তেজিত হচ্ছিস কেনো?এখানে উত্তেজিত হওয়ার তো কিছু বলি নি আমি।
--তাহলে মানুষকে কে সৃষ্টি করেছে-এ তোর কেমন প্রশ্ন?মানুষকে অবশ্যই আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন।এ বিষয় তো সবারই জানা।এমন বিষয় কেউ কাউকে জিজ্ঞেস করে নাকি?
--হ্যাঁ,এটা ঠিক,মানুষ আল্লাহরই সৃষ্টি- এটা আমাদের সবারই জানা।এখন যিনি মানুষের সৃষ্টিকর্তা,মানুষের ব্যাপারে তার ইন্সট্রাকশন কি আমাদের মানা উচিত নয়?
--হ্যাঁ তা তো অবশ্যই।কিন্তু এখন কী হয়েছে?
--মানুষের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা'য়ালা নিজেই বলেছেন যে,তিনি মানুষের জন্য সাতটি জিনিসকে লোভনীয় করে রেখেছেন।মানুষের জন্য লোভনীয় করে রাখা সাতটি জিনিসের সর্বপ্রথমটিই হচ্ছে নারীর প্রতি ভালোবাসা। [১]
তুই নিজেই বলেছিস,কোনো কিছু লোভনীয় করে রাখার মানেই হচ্ছে সেই জিনিসকে বেশি আকর্ষণীয় করে রাখা।আর লোভনীয় কিছুর কাছে গেলে আকর্ষণ হবেই- এটাই স্বাভাবিক।
এখন যেখানে মানুষের সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং আল্লাহ তা'য়ালা আমাদেরকে বলেছেন যে,নারী-পুরুষ একসাথে মেলামেশা করলে তাদের মধ্যে আকর্ষণ হবেই সেখানে তুই কীভাবে সেই আকর্ষণের কথা অনায়াসে উড়িয়ে দিতে পারিস কিংবা আকর্ষণের বিষয় অস্বীকার করতে পারিস?সৃষ্টিকর্তা কি জানেন না,তার সৃষ্টির কিসে কী হয়?
যেখানে স্বয়ং আল্লাহ তা'য়ালাই বলেছেন,নারীকে লোভনীয় অর্থাৎ আকর্ষণীয় করে রাখা হয়েছে সেখানে পর নারীর সাথে একসাথে চললে আকর্ষণ হওয়ার ব্যাপারে কোনো মুসলিমের সন্দেহ থাকার কোনো অবকাশ নেই।আর সেই আকর্ষণই মূলত খারাপ কাজের দিকে নিয়ে যায়। সেজন্যই তো মহান রাব্বুল আলামিন সেই অবৈধ আকর্ষণ থেকে বাঁচতে ইন্সট্রাকশন হিসেবে পর্দার বিধান চালু করেছেন।এমন অবৈধ আকর্ষণ থেকে নারী পুরুষ একে অপরকে হেফাজত করার জন্যই তো আল্লাহ পর্দার বিধানকে ফরজ করেছেন, নিজের দৃষ্টি সংযত ও লজ্জাস্থান হেফাজত করার জোরালো নির্দেশ দিয়েছেন।
এখন ফাহিমার সাথে তুই একসাথে ওঠাবসা করবি অথচ তোদের মধ্যে কোনো আকর্ষণ হবে না এবং যার ফলশ্রুতিতে কোনো খারাপ কিছু সংঘটিত হবে না তা তুই কিসের ভিত্তিতে বলতে পারলি?আরে মিয়া!শয়তান যে তোর মাথায় বসে ঢোল বাজাচ্ছে তা কি তুই বুঝতে পারছিস?
ফাহিমার মতো পরনারীর সাথে চললে তোর কিছু হবে না এমনটা বলার মানে কি এই নয় যে,তুই বলতে চাচ্ছিস,ওর সাথে চললে তোর কোনো আকর্ষণই হবে না যা আল্লাহর ঐ আয়াত অস্বীকারের নামান্তর।তুই কি বুঝতে পারছিস, ব্যাপারটি কত্তো সাংঘাতিক?
এছাড়া,তার প্রতি তোর কোনো আকর্ষণ হবে না বলাটা কি এমনটার ইঙ্গিত দেয় না যে,তুই সৃষ্টিকর্তার চেয়েও বেশি বুঝদার হয়ে গেছিস।নাউজুবিল্লাহ!আকর্ষণ অনাকর্ষণের বিষয় যেনো তোর নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
একজন পরনারীর সাথে উঠাবসা করার পর যদি তুই বলিস যে,তোর কোনো আকর্ষণ হয় না তাহলে এর পেছনে মূলত দুইটি কারণ থাকতে পারে।হয় তোর কোনো যৌন সমস্যা আছে বিধায় তুই যৌন আকর্ষণ অনুভব করিস না,না হয় তুই তোর যৌন আকর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করতে চাচ্ছিস না।আর যারা এমনটা করে তাদেরকে আমি একটু কঠিন ভাষায় বলি বদমাশ।কারণ তারা প্রকৃত বিষয়টি স্বীকার করতে চায় না অথচ তলে তলে ঠিকই খারাপ কাজে লিপ্ত হয়।মাঝে মাঝে এই কুলাঙ্গারদেরকেই তো বিভিন্ন কুকর্মে ধরা পড়ে পত্রিকার শিরোনাম হতে দেখা যায়।
--আসলে বন্ধু আয়মান,তোর কথাগুলোর সত্যতা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।আমি শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ফ্রি মিক্সিং এ জড়িয়ে পড়েছিলাম। আমরা স্বীকার করি আর না করি,আর যতোই ইনিয়েবিনিয়ে বলি না কেনো নারী আসলেই লোভনীয় জিনিস।লোভনীয় জিনিস বলেই তো আমরা তাদের কাছে ঘিরে বসি, তাদের সাথে মেলামেশা করতে পছন্দ করি।
--এই তো লাইনে এসেছিস,ব্যাটা।নিজের ইগোকে দমিয়ে রেখে সত্য স্বীকার করার জন্য তোকে অনেক ধন্যবাদ।আসলে,আমাদের সমাজে এমন অনেক কপালপোড়া রয়েছে যারা এসব বুঝতেই চায় না।নিজের মনকে সৎ দাবি করে ইনিয়ে বিনিয়ে ফ্রি মিক্সিং এর পক্ষে কথা বলতে চায়। এগুলো যে যিনার পথ উন্মোচিত করে তা তারা স্বীকার করতেই চায় না।শিয়াল যেমন মুরগীকে ভোগ করার উদ্দেশ্য মুরগীর স্বাধীনতা চায় ঠিক তেমনি আমাদের সমাজে কিছু নরপশু আছে যারা নারীকে ভোগ করার উদ্দেশ্যই নারীর ঘর থেকে বের হয়ে আসার স্বাধীনতা চায়।
--কথাটি একদমই ভুল বলিস নি,বন্ধু।
---দেখ জাহিদ,বেগানা নারীর সাথে উঠাবসা করা কিংবা তাকে স্পর্শ করা কতোটা ভয়াবহ তা বোঝার জন্য একটি হাদীসই যথেষ্ট।রাসূল (সাঃ) কঠিন থেকে কঠিনতর হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন,কোনো ব্যক্তির জন্য যে নারী অবৈধ তাকে স্পর্শ করার চেয়ে মাথায় লোহার পেরেক গেঁথে দেওয়া অনেক ভালো। [২]
এই কথাটির মানে কী তা কি তুই বুঝতে পেরেছিস, জাহিদ?এর মানে হচ্ছে,প্রথমত নিজের শরীরে আঘাত করা সম্পূর্ণত নিষেধ তথা হারাম।কিন্তু পরনারী স্পর্শের ব্যাপার যদি সামনে আসে তাহলে সেক্ষেত্রে তোর জন্য বরং নিজের মাথায় লোহার পেরেক গেঁথে দেওয়ার মতো কঠিন আঘাত করাটাই বহুগুণে উত্তম।আর এ থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে,পরনারীর স্পর্শ সাধারণ কোনো বিষয় নয়।এটি খুবই জঘন্য একটি গোনাহ।যদি এটি মারাত্মক পর্যায়ের গোনাহ নাই-বা হতো তবে রাসূল (সাঃ) সাধারণভাবে নিজেকে আঘাত করা নিষেধ করা সত্ত্বেও এমন বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেকে আঘাত করার উৎসাহ দিতেন না।অতএব, বুঝতেই তো পারছিস বিষয়টির চূড়ান্ত ভয়াবহতা!
--হ্যাঁ,বুঝতে পেরেছি।আমি আসলে এমন বিষয় আগে কখনো জানতাম না,বন্ধু।আজ যেহেতু বিষয়টি জেনেছি তাই আর এমন হবে না।
--জেনে খুবই খুশি হলাম।সকল প্রশংসা সেই রবের যে রব আমাদেরকে বিষয়টি বোঝার তাওফিক দিয়েছেন।আলহামদুলিল্লাহ!এভাবে যদি সবাই বুঝতে পারতো তাহলে কতোই-না ভালো হতো রে।যাইহোক,আল্লাহ তা'য়ালা তোর মতো আমাদের সবাইকে সঠিক সময়ে সঠিক বিষয় উপলব্ধি করার তাওফিক দান করুন।আমিন!
রেফারেন্সঃ
[১] সূরা আলে ইমরান,আয়াত নং : ১৪
[২] হাদীস সম্ভার,হাদীস নং : ২৬৬২; ত্ববারণী : ১৬৮৮০ ; হাদীসের মান : সহীহ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url