গল্পঃ নষ্ট (ফুল এন্ড ফাইনাল) | Story: Nosto (Full and Final)
#নষ্ট
পাহাড় রক্তাক্ত অবস্থায় পরে আছে। মাথা দিয়ে অনেক রক্ত বের হয়েছে। নকিব ছুটে গিয়ে পাহাড়কে তুলে নিলো। নকিবের চোখ যেন কোনো অজানা দৃশ্য দেখছে। পাহাড়ের এমন হলো কি করে।
পাহাড়কে বার বার নকিব জিজ্ঞেস করে। এমনটা হলো কি করে। কিন্তু পাহাড়ের কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে।
তবুও পাহাড় অনেক কষ্ট করে একটা জবাব দিতে সক্ষম হলো,নকিব; শিলাকে সর্দার তুলে নিয়ে গেছে। তুমি যাও, তাকে বাচাও।
নকিব যেন আকাশ থেকে পরলো। এমন কথা শোনার জন্য নকিব কখনও প্রস্তুত ছিলো না। নকিব এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না।
মাথায় প্রচন্ড রাগ চাপছে। সাথে চোখের পানিও পরছে।
সব কথা বলার কিছুক্ষন পর নকিবের কোলে পাহাড় নিজেকে ছেরে দিলো । পাহাড় আর নরছে না । নকিবও বুঝে নেই যে,শুধু এই তথ্যটা দেওয়ার জন্যই পাহাড় বেচে ছিলো হয়ত।
পাহারকে শুইয়ে দাওয়ার পর নকিব অঝরে কাঁদতে থাকে।
আর ওদিকে নদী হয়ে থাকে নিশ্চুপ দর্শক। তার কিছুই বলার নেই।
নকিবের মথায় এখন একটাই কথা নাড়া দিচ্ছে। এসব কিছু পাপের ফসল।শুধু মাত্র দেহের পাপের জন্যই তার সব কিছু হারিয়ে গেলো।
এখন প্রচন্ড রাগ উঠছে নদীর ওপর। সে যদি তাকে এভাবে না নিয়ে যেতো সেই পাপের কাজে। তাহলে এমনটা হতো না ।
কিন্তু কোনো লাভ নেই। কারন এমনটা হতো না। যদি নকিবও তার প্রতি আকৃষ্ট না থাকতো,যদি লুকিয়ে লুকিয়ে তার দেহ গোপনে উপভোগ না করতো। এমনকি এটা যদি নদী নাও জানতো,তাহলেও এমনটা হতো না।
এসব ভেবে সে নিজের ওপরেই সব দোষ নিয়ে নিলো। কিন্তু এখানে বসে থেকে কোনো লাভ হবে না।শিলাকে বাচাতে হবে।
নকিব একাই যেতে চাইলো। কারন ,নদীকে নিয়ে গেলে তারও বিপদ হতে পারে। তার চেয়ে একা যাওয়াই ভাল।
নকিব ভাবতে ভাবতে যাচ্ছে,শিলাকে তারা কিভাবে রেখেছে।তাকে মেরে ফেলবে নাতো।নাহ,এ অসম্ভব।
লোকালয়ে প্রবেশ করার পর নকিব অবাক হয়ে গেলো। শিলাাকে একটা গাছের গুড়ির সাথে বেঁধে রেখেছে। আর চেহারায় প্রচুর দাগ।তার মানে তারা শিলার গায়ে হাত তুলেছে।
নকিব ঠিক থাকতে পারলো না।কাছে গিয়ে আকাশকে কষে চর মারলো।
চরের বেগে আকাশ নিজেকে সামলিয়ে নিতে পারলো না।
এমন সময় বেশ কয়েকজন লোক নকিবকে ধরে ফেললো,আর শিলার গাছের সাথে বেধে ফেললো।
নকিব কিছু করার আগেই কাহিনী উল্টিয়ে গেলো।এখন সে নিজেও বন্দি। খারাপ লাগতো না,যদি দেখতো শিলা ঠিক আছে।কিন্তু শিলারতো জ্ঞান নেই।
কিছুক্ষন পর নকিবের সামনে এক বিশাল দানব এসে দাড়ালো। নকিব ভয় পেয়ে গেলো।ওপাশ থেকে আকাশ বলে উঠলো,সর্দার; এদেরকে বাচিয়ে রাখা যাবে না।এরা আমাদের সবাইকে নষ্ট করতে এসেছে।আমাদের বন নষ্ট করে ফেলছে ,আরো নানা ধরনের অভিযোগ করতে থাকলো।
নকিব বুঝতে পারলো ,তাহলে এটাই সেই দানব। এরা সবাই একে সর্দার হিসেবে চেনে?
নকিবের গলা শুকিয়ে যায়। কিছু যে বলবে ,সেই সাহসটা পায়না।
সর্দার আদেশ করলো রামদা নিয়ে আসতে।
এই আদেশের কথা শুনে আকাশ যেন মহা খুশি।কিন্তু নকিবের মথায় বাজ পরলো।
তবুও সাহস করে একটি কথা বললো,তবুও বলার আগে কয়েকবার ভেবে।
সর্দার,তুমি যদি আমাদেরকে মেরেই ফেলবা,তার আগে আমার একটা শেষ ইচ্ছা আছে।সর্দার ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,বল তোর শেষ কি ইচ্ছা।
নকিব বললো,যদি না মানো,তাহলে তুমি সহ তোমার বন ধ্বংস হয়ে যাবে। সর্দার হা সুচক মাথা নারলো।
আগে শিলাকে মেরে ফেলো ,তারপর আমাকে।
এ কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেলো,বলে কি এই পাগল । এটা কোনো ইচ্ছা হলো।তবুও নকিব বার বার জোর করলো।
কিন্তু সর্দার কেন যেন এই ইচ্ছটা পুরন করতে চাইলো না। সে শিলাকে নিয়ে পরে ভাববে।
এ কথা শোনার পর নকিবের সামনে অন্ধকার হয়ে আসলো। কারন শিলা বেচে থাকলে সর্দার তাকে অন্য ভাবে ব্যবহার করতে পারে। সেটা হতে দেওয়া যাবে না। মরলে এক সাথেই মরবো।
সর্দার দেরি করতে চাচ্ছে না। শিকার যখন হাতের মুঠোয়। আরতো অপেক্ষা করা যায় না।
সর্দার তার লোকবল দিয়ে নকিবের মাথা নিচু করে ধরলো। নকিব শেষ বারের মত চিৎকার করলো শিলার জন্য। কিন্তু কেও তার কথা শুনলো না। শিলার কানেও কোনো শব্দ গেলো না।
সর্দার দা উঠিয়ে নামতে যাবে ,এমন সময় নকিবের মথায় বিশাল এক আঘাত লাগে। আর মুখে ছিটিয়ে আসলো পানি।
নকিবের হুশ ফিরে আসে। আর পাশে থেকে একজন বলে উঠে,হারামজাদার জ্ঞান ফিরসে এতকনে।
নকিব বুঝতে পারে । শিলার বাবার গুন্ডারা তাদের ধরে ফেলেছে। মাথায় আবার বিশাল আঘাত লাগে।।
সামনে থেকে একটি মেয়ে চিতকার দিয়ে বলে,আমার ভাইটারে আর মাইরেন না। হে মইরা যাইবো।
তার কথা শুনে পাশের লোকটা বেশ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। হাতের হকিস্টিক দিয়ে তার মথায় পেরে তাকে পুরো নিস্তব্দ করে দেই। তার মুখ দিয়ে আর কথা বাহির হয়না ।
মনে হয় চিরতরে নিস্তব্দ করে ফেলেছে।
কিন্তু চেহারটা খুউব চেনা চেনা লাগছে। আরেহ এটাতো নদী।
নকিবের জ্ঞান ফিরে আসার কিছুক্ষন পরেই বুঝতে পারে যে ,সে একটা ঘোরের মধ্যে ছিলো। সেটা একটা সপ্ন ছিলো। আর সেই সপ্নে যাদেরকে দেখেছে ,তারা কাছের বন্ধুবান্ধব। নকিবের বাস্তব জীবনে একটা আসল বন্ধু ছিলো,সে হলো এহসান। আর সে হলো সপ্নের ভেতরে পাহাড় ছিলো।
নকিবের সব মনে পরতে থাকে।
তাহলে এতক্ষন সে সপ্নে ছিলো।
কিন্তু এতো দুর পালিয়ে আসার পরেও তারা কি করে ধরলো।
মনে পরলো শিলার কথা। মাথা উচিয়ে শিলাকে খুঁজছে। শিলাকে বেধে রাখা হয়েছে একটা গাছের সাথে। দেখে মনে হচ্ছে শিলার জ্ঞান নেই। নকিব জোরে করে শরির নাড়াতে চাইলো। কিন্তু এটা বুঝতে পারলো যে,তার শরির আর স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। গুন্ডারা তার সব ভেঙ্গে দিয়েছে মেরে। একটু জোরে যে কথা বলবে ,চিৎকার দিবে,সেই শক্তিটাও নেই।
শিলাকে তবুও বার বার ডাকছে নকিব।তবে সে শুনতে পাচ্ছে না।
নকি গলা দিয়ে আওয়াজ বাহির হচ্ছে না।
শিলার বাবা নকিবের সামনে এলো,চোখে এক রহস্যময় হাসি। এই হাসির সংবাদ কোনো ভাল খবর অবশ্যই দেইনা।
মুখে এক রেখা হাসি টেনে বললো,নকিব; তুই আমার ভবিষ্যতের দিকে হাত দিয়ে বিশাল ভুল করেছিস। বেকার নষ্ট করেছিস নিজের জীবনটা।তোর জানা উচিত ছিলো ,শিংহ কে হামলা করতে হলে কমপক্ষে বাঘের পরিমান শক্তি থাকা দরকার। তোরতো কিছুই নাই।
নকিব শুধু শুনেই যাচ্ছে। কিন্তু কোনো উত্তর দিতে পারছে না।
নকিবের এখন কথা বলতেই হবে,তা না হলে শিলা বাচবে না। কিন্তু শেষের একটা আঘাত ছিলো নকিবের গলার ওপরে। শরিরের কোনো অংশ বাকি রাখেনি।
শিলার পায়ের কাছে একটা বিষধর সাঁপ পেচিয়ে আছে। এটা কেও খেয়াল করেনি।
সেই সাঁপটা সম্ভবত শিলাকে শেষ করে দিবে। ঠিক তাই,নকিবের ধারনা ভুল নই। সাঁপটা সত্যি সত্যি শিলাকে দংষন করে বসলো। শিলা তখনও অচেতন অবস্থায় ছিলো। তাই হয়ত সে বিষের জ্বলনটা বুঝতে পারছিলো না। কিন্তু বিষটা পুরো শরিরটা গ্রাস করে নিচ্ছে।সাদা চেহারাটা নীল রঙ ধারন করছে।
আর তা ছারা এটা জঙলি সাঁপ।
নকিবের এখন ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করা ছারা আর কোনো কাজ নেই। কারন সে বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। নকিব একটু আসতে শ্বাস নিলো,কারন সে একটু শান্তি অনুভব করছে। শিলার জ্ঞান থাকা অবস্থায় যদি সে এমন ভাবে মারা যেতো,তাহলে অনেক কষ্টের মৃত্যু হতো। কিন্তু সে কোনো কষ্ট ছারায় দুরে গিয়ে তাকে ডাকছে।
নকিব ভাবছে,তাকেও যদি এখন মেরে ফেলা হয় ,তাহলে তার কোনো কষ্টই হবে নাহ।
কিন্তু তার বাবা তাকে এভাবেই ফেলে রেখে চলে গেলো। বান্ধনটাও খুললো না। শুধু সেই মেয়েটার বাঁধনটা খুললো। শিলার বাবা হয়ত একটা ভুল করে ফেললো,এটা কি সে সেচ্ছায় করলো নাকি খোদা নিজে করিয়ে দিয়েছে কে জানে। সবাই ভেবেছে মেয়েটা হয়ত মরে গেছে। কিন্তু না,সে মরেনি।সে আঘাতের কারনে জ্ঞান হারিয়েছে।
তার একটু পরেই নকিবও জ্ঞান হারাই।
তবে শেষ একটি দৃশ্য দেখা থেকে নকিব ছুটে গেলো। শিলার মরদেহ দেখে শিলার বাবার কেমন অনুভতি হয়েছিলো,এটা দেখার দরকার ছিলো খুউব। কিন্তু নকিব তা মিস করলো।
ঔষধের ক্রিয়া শেষ হবার পর নকিবের হুষ ফেরে,হুষ ফেরার পরে নকিব দেখে যে তার সারা শরিরে এলোপাতারি ভাবে সবুজ ধরনের কি যেন মাখিয়ে রাখা আছে। আর পাশে বসে আছে সেই মেয়েটি। কি আশ্চর্য!
এ যে ,সপ্নের সেই নদী। নকিব অবাক স্বরে তাকে জিজ্ঞেস করে,নদী; তুমি এখানে?
হুম ভাইজান,কিন্তু আপনে আমার নাম জানলেন কেমনে।
নকিব আরো অবাক হয়ে যায়। তাহলে সত্যি তোমার নদী।
হ ভাইজান,আমার নদী। ভাইজান আপনি সুস্ত হই গেসেন। কতা কইতে পারাতাসেন কি সুন্দর।
নকিব তাকে জিজ্ঞেস করলো,শিলা কোথায়।
নদী কিছুক্ষন চুপ থাকার পরে বললো। আমার জ্ঞান ফেরনের পরে তাকে দেখিনাই।শুধু দেখলাম,আপনি পইরা রইসেন। তাই আপনেরে আমার ঘরে লইলাম।আপনারে অনেক মারসে ,অচেতন কইরা। আমি সব দেখসি।
আমি কইবরাজি ভালা পারি। যখন আমারো এমন গা বেথা হইত,আমি এই গাছের পাতা বাইটটা লাগাইতাম। ভাল হইয়া যাইতো। আপনেরো ভালা হইয়া যাইবো।
নকিব নিশ্চুপ হয়ে থাকে। কারন ,সে জীবন থেকে শিলা কে হারিয়ে ফেলেছে। ভেবেছিলো সেও হয়ত শিলার কাছে চলে যাবে। কিন্তু শিলা তার চোখের সামনে চলে গেলো। তবুও নকিবকে নিয়ে গেলো না।
নদীকে নকিব পরে জিজ্ঞেস,করে। তাদেরকে কিভাবে ধরলো।
তারপর নদী শোনালো সেই কাহিনী।
নদী আনমনা নৌকা চালাচ্ছিলো,এমন সময় পেছনে পানি থেকে কে যেন লাফ দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে। তারপর সে কিছুই বলতে পারে না। কিছুক্ষন পর দেখে তারা সবাই গাছের সাথে বাধা ।
দিন যাচ্ছে ,কিন্তু নকিবের শরিরের কোনো উন্নতি হচ্ছে না। বরং আগের চেয়ে আরো খারাপ হচ্ছে।নদীও খুউব চিন্তিত,কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।
ইদানিং নকিবের সপ্নে শিলা আসে,এসে তার গা হাত পা টিপে দেই। নকিব বার বার আবদার করে তাকে নিয়ে যেতে। কিন্তু শিলা বলে,আর একটু ধৈর্র ধরো।
কিন্তু নকিবের ধৈর্য ধরা অনেক কঠিন হয়ে গেছে।
নদীও খুউব ভেঙ্গে পরেছে,তার মাথার সামনে এসে কান্নাকাটি করে। নদী চাইনা,নকিব এভাবে চলে যাক,কারন ; নকিবকে অনেক ভাল লেগেছে। নদী তার জীবনে এমন নরম মনের মনুষের দেখা কখনও পায়নি।
কিন্তু নকিবকে সেবা করার মত দিন হয়ত তার বেশি ছিলো না।
হঠাৎ একদিন সকালে নকিবের নিশ্বাসের চাপ বারতে শুরু করলো।ভেতরটা অস্থিরতাই ভরে যাচ্ছে। এমন সময় শিলা নকিবের মাথার সামনে দাড়িয়ে ছিলো,নকিবকে বললো,চলো নকিব আজ তোমায় নিতে এসেছি।
নকিবের হাত ধরে শিলা চলতে শুরু করলো, নকিবের শরির থেকে উঠে পরলো অশরিরি। শুধু পরে রইলো নকিবের নিথর দেহটা।
যাওয়ার আগে নদীটার সাথে দেখা করা হলো না। মেয়েটা পানি আনতে গেছিলো নকিবের জন্য। সে হয়ত এসে দেখবে নকিবের অশরিরিটা নেই,শুধু স্বশরিরটা নিথর ভাবে পরে রয়েছে।
সমাপ্ত,,,,,,,,
(গল্পটি কোনো বাস্তব চরিত্রের সাথে মিল নাই, এটা সম্পুর্ন কাল্পনিক চরিত্র)