গল্পঃ ভুল | Story: It was Wrong

 

ভুল

বন্ধুর বাবাকে কবর দিতে একটি পুরনো কবরস্থানে গিয়েছিলাম
কবরে মাটি দেওয়ার সময় আমার একটা পা একটা গর্তে পড়ে গিয়েছিল
আর পড়ে বুঝতে পারি এটা একটা পুরনো কবর
তাই বুঝা যাচ্ছে না
পায়ে একটা হাড় ঢুকে পড়েছে
কোনরকমে হাড়টা বের করে যা দেখলাম তাতে আমি অবাক না হয়ে পারছিলাম না
কারণ সেটি কোন হাড় ছিল না
ওটা একটা হিরার আংটি
আংটিটাকে পকেটে রেখে বাড়িতে চলে আসলাম
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আংটিটাকে একবার দেখে নিলাম
কবরের ভিতর আংটি কি করে আসতে পারে
মৃতকে তো আর আংটি পড়িয়ে কবর দেবে না
এসব ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে গেলাম
 
গভীর রাত
আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি কেউ একজন আমাকে ডাকছে
কিন্তু কে ডাকছে তা আমার জানা নেই
ভয়ে চোখ খোলারও সাহস পাচ্ছি না
হঠাৎ আস্তে আস্তে চোখ খুললাম
কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলাম না
বিছানা থেকে উঠে বসলাম
দরজার দিকে চোখ যেতেই আমি শিউরে উঠলাম
একটা কালো অবয়ব আমার দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে
যেন একটা ছায়া
যার সারা শরীর থেকে ধোয়ার মতো কিছু বের হচ্ছে
আস্তে আস্তে সে আমাার সামনে থেকে পুরো উধাও হয়ে গেলো
আমি চারপাশে তাকে খুজতে শুরু করলাম
কিন্তু সে কোথাও নেই
এই মুহুর্তে আমার মনে অনেক প্রশ্ন
কে ছিল সে?
আর উধাও ই বা কিভাবে হলো
এসব ভাবতে ভাবতে শুয়ে পড়লাম
হঠাৎ আমি খেয়াল করলাম
আমার পায়ে ঠাণ্ডা কোন কিছু স্পর্শ করেছে
আমার মনে হচ্ছিল হয়তো ডিপ ফ্রিজ থেকে কোন কিছু বের করে আমার পায়ের উপর উপর রাখা হয়েছে
 
আমি এতোটাই ভয় পেয়েছিলাম যে পায়ের দিকে তাকাতেও ভয় করছিল
কিন্তু আমি অনুভব করছিলাম এটা কারো একটা হাত
কিন্তু কারো হাত এতোটা হিম শীতল হতে পারে কিভাবে
এরপর আমি কোনকিছু ভাববার সময় ও পায় নি
সেই হাতটি আমার পা ধরে টানতে শুরু করে
আমি ভয়ে চিৎকার করতে থাকি
কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল আমি চিৎকার তো করছি কিন্তু আমার মুখ থেকে কোন আওয়াজ বের হচ্ছিল নাআমি আমার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে চিৎকার করছিলাম
কিন্তু আমার গলা ধরে আসছিল তাই আমি আর চিৎকার করতে পারিনি
আমি শুধু সেই কালো অবয়বের দিকে তাকিয়ে ছিলাম
সে তখনো আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল
একসময় আমাকে এমন একটা জায়গায় নিয়ে গেল যেই জায়গাটা ছিল খুবই অন্ধকারাচ্ছন্ন
আমি কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না
আমি সেই অবয়বের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যাই
কারণ এতোক্ষন শুধু ছায়া ছিল কিন্তু এখন তার উপর একটা সাদা শাড়িও রয়েছে
রয়েছে একটা মুখ
হয়তো কোন মেয়ে
 
হঠাৎ
মেয়েটি কান্না করতে শুরু করলো
অদ্ভুদ ধরণের কান্না
মনে হচ্ছে
অনেক কষ্ট লুকানো আছে এই কান্নায়
এমন কান্না হয়তো আগে কোথাও কেউ শুনিনি
কান্নাটা এতোটাই তীব্র যে আমার মাথা ব্যাথা করছিল
আমি আমার মাথা ধরে বসে পড়ি
কিন্তু কান্নার প্রখরতায় মনে হচ্ছিল আমার কান ফেটে রক্ত বের হবে
এতোটাই জোরে কান্না করছিল সে
এভাবে কতোক্ষন ছিলাম
আমার জানা নেই
আমি অজ্ঞান হয়ে যাই
সকালে
আমার যখন জ্ঞান ফেরে তখন আমি অবাক দৃষ্টিতে চারপাশ দেখতে থাকি
এ আমি কোথায়???
ভালো করে দেখে বুঝলাম আমি কবরস্থানে আছি
আর আমার অর্ধেক শরীর একটা পুরনো কবরের ভেতর রয়েছে
আমি অনেক কষ্ট করে কবর থেকে উপরে উঠলাম
আমার পুরো শরীর ব্যাথা করছিল
ভালো করে তাকিয়ে দেখি আমি ঠিক সেই কবরস্থানে 
যেখানে কালকে আমার বন্ধুর বাবাকে কবর দিতে এসেছিলাম
কবরে মাটি দিতে গিয়ে আমি একটা পুরনো কবরে পরে গিয়েছিলাম
আর ঠিক সেই কবরেই আমি রাতে ছিলাম সবকিছু কেমন জানি ঘোলাটে লাগছে
কাল রাতে তাহলে এখানেই এসেছিলাম
সারা শরীর এতোটাই ব্যথা করছিল যে বাড়িতে যাওয়ার শক্তিও ছিল না
কবরস্থানের বাইরে লোক দেখে তাদের ডাক দিলাম
তারা আমাকে দেখতে পেয়ে এগিয়ে এলো
তারপর তাদেরই কিছু লোক আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করলো
আমার মা-বাবা ও বোন ও এলো
এসেই সবাই কান্নাকাটি শুরু করে দিলসবাই জিজ্ঞাসা করছিল
কিভাবে এমনটা হলো
কে করেছে
পায়ে পাঁচটা আঙ্গুলটা একেবারে ফুলে ফেপে উঠেছে
কারো চোখেই তা এড়ায় নি
ডাক্তারও কনফিউস হয়ে গেছে এটা দেখে
সবাই আতংকিত হয়ে গেছে
কিন্তু আমি কাউকে কিছুই বলি নি
আমি আমার মুখের ভাষায় হারিয়ে ফেলেছিলাম
কি বলব তা নিজেও বুঝে উঠতে পারছিলাম না
জানি না কি বলা উচিত
রাতে যে ঘটনাটা ঘটে গেলো তা নিয়ে ভাবছি
এমন ঘটনার পর বেঁচে থাকাটাই ভাগ্যের ব্যাপার
কোনদিন ভাবিওনি জীবনে এমন কোন রাত আসতে পারে
সেদিন কোনরকমে কেঁটে গেলো
রাতে হাসপাতালে শুয়ে আছি কিছুতেই ঘুম আসছে না
বাড়ির সবাই আমার পাশেই থাকার ব্যাবস্থা করেছে
সবাই ঘুমিয়ে গেছে
চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি তা নিজেও জানি না
একটা মেয়েলি ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেলো
তাকিয়ে দেখি সবাই ঘুমাচ্ছে
তাহলে কে ডাকলো???
আবার কি কিছু হতে চলেছে??
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url