মুখমন্ডল ঢাকা কি ফরজ? | Is it obligatory to cover the face?
পর্দা : মুখমন্ডল ঢাকা কি ফরজ?
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া’তা’আলা বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ
“হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের, আপনার কন্যাদের ও মুমিনদের নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের একাংশ নিজেদের (মুখের) উপর নামিয়ে দেয়।”[1]
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ
“এবং যখনই রাসূলের স্ত্রীদের কাছে কোনো কিছু চাইলে পর্দার অন্তরালে থেকে চাইবে। এটা তোমাদের এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিক পবিত্রতার কারণ।”[2]
পর্দার ব্যাপারে যদি চেহারা দেখানো যায়েজই হতো তবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা এ বিধান কেন দিয়েছেন?
এবার আমরা যাব তাফসীরে।এ আয়াতের ব্যাপারে সাহাবাদের আমল কেমন ছিল?এবং মুফাসসিরগন কি বলেছে তা জানব ইন শা আল্লাহ।কেননা আয়াত নাজিল হওয়ার পর এসব আয়াতের উপর সর্বপ্রথম আমল করেছেন সাহাবাগন ,অতঃপর আমল করেছেন তাবেয়ীগন।তারাই উম্মাহর সর্বোচ্চ বিশ্বস্ত।তাদের মতই অধিক
১. ( جَلَابِيبِهِنَّ) জিলবাব’ অর্থ বড় চাদর, যা দ্বারা মুখমন্ডল ও পূর্ণ দেহ আবৃত করা যায়।[3]
২. এ আয়াতের ব্যাপারে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, “ আল্লাহ তাআলা মুমিনদের নারীদের আদেশ করেছেন তারা যেন কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় মাথা থেকে চাদর টেনে সম্পূর্ণ মুখমন্ডল আবৃত করে, শুধু (চলার জন্য) এক চোখ খোলা রাখে। ”[4]
৩। ইসমাঈল ইবনে উলাইয়্যা রাহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একটি চাদর নিলেন এবং ঘোমটার মতো পরে মাথা-মুখ ঢেকে ফেললেন। কপাল, নাক ও বাম চোখও ঢাকলেন, ডান চোখ খোলা রাখলেন। এরপর বললেন, ‘এভাবে আমাদেরকে চাদর পরে দেখিয়েছেন আবদুল্লাহ ইবনে আওন, তাঁকে দেখিয়েছেন (বিখ্যাত তাবেয়ী) মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন, আর তাঁকে দেখিয়েছেন আবীদা ইবনে আমর সালমানী রাহ. (যিনি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-এর শাগরিদ ও শীর্ষস্থানীয় তাবেয়ী)’।[5]
৪। ইমাম আবু বকর রাযী আলজাসসাস রাহ. লিখেছেন-‘এই আয়াত থেকে প্রমাণ হয়, বাইরে বের হওয়ার সময় পরপুরুষের দৃষ্টি থেকে নারীর মুখমন্ডল আবৃত রাখা এবং পর্দানশীন পবিত্র নারীর বেশ গ্রহণ করা অপরিহার্য, যাতে মন্দ চরিত্রের লোকেরা তাদের প্রতি উৎসাহী না হয়।’[6]
৫। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নেকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে।’[7]
এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় হজ্জ্বের সময় ব্যাতীত অন্য সময়ে মুখমন্ডল এবং হাত মোজা পরিধান করা ফরজ।কেনন এখানে হাদীসে নাহি(না) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।এর বীপরিত হলো আমর (আদেশ)।যার মাধ্যমে সুস্পষ্ট হয় যে মুখ ঢাকা এবং হাত মোজা পরিধান করা ফরজ।
অপর বর্ণনায় এসেছে , উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে তাঁর হজ্বের বিবরণে বলেছেন, ‘ইহরামের কারণে তারা নেকাব খোলা রাখতেন, কিন্তু যখন পুরুষেরা নিকট দিয়ে অতিক্রম করত তখন তারা মুখমন্ডল আবৃত করে ফেলতেন। তারা চলে যাওয়ার পর নেকাব তুলে ফেলতেন।’[8]
এ হাদীস থেকেও মুখমণ্ডল ঢাকা যে ফরজ তার বিধান পাওয়া যায়।কারণ ইহরাম বীহিন অবস্থায় তারা নেকাব পড়তেন।
৬। আসমা বিনতে আবু বকর রা. বলেন, ‘আমরা পুরুষদের সামনে মুখমন্ডল আবৃত রাখতাম।[9]
৭। উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন “ এ আয়াত নাজিল হওয়ার পর আনসারি সাহাবীরা কালো চাদর পরিধান করে বের হতো।”[10]
৮। হযরত মুগিরা বিন শু’বা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণন করেন, আমি এক নারীকে বিবাহের পয়গম পাঠালাম এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সে সম্পর্কে বললাম।তিনি জিজ্ঞেস করলেন-
তুমি তাকে দেখেছ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন তাকে দেখে আসো,তোমাদের পারষ্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় হবে।আমি দেখতে গেলাম।তার বাবা-মা দুজনেই ছিল।আর মেয়েটি ছিল পর্দার অন্তরালে। আমি বললাম রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখার আদেশ দিয়েছেন।তারা দুজন নিশ্চুপ রইলেন। পর্দার আড়াল থেকে মেয়েটি বললো-আমি আপনাকে কসম দিচ্ছি।যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে দেখার আদেশ দিয়ে থাকেন,তাহলে অবশ্যই দেখবেন।আর যদি না দিয়ে থাকেন তাহলে দেখবেন না। অতঃপর আমি তাকে দেখলাম।তাকে বিবাহ করলাম। আমার মনে এই মেয়েটির জন্য যতটা শ্রদ্ধাবোধ ছিল,অন্য কোন নারীর প্রতি তা ছিল না।[11]
সেকালের নারীরা যদি মুখ খোলা রেখে চলাফেরা করত,তাহলে এক নারীকে বিবাহের উদ্দেশ্যে দেখার ব্যাপারে হযরত মুগিরা বিন শু’বা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এর এতটা দ্বিধাগ্রস্ত হওয়ার প্রয়োজন পড়তেন না এবং অনুমতিও নিতে হতো না।
৯। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক মৃত ব্যক্তির দাফন কার্য শেষ করে ফিরছিলাম।মৃত ব্যক্তির পরিবারবর্গের পাশ দিয়ে যাবার সময় এক নারীকে দেখতে পেলাম।আমরা ভাবতে পারিনি যে,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চিনে ফেলবেন।কিন্তু তিনি তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “ফাতেমা!কোথা থেকে এসেছ?হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, আমি মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে এসেছি।আমি মৃতের জন্য দোয়া ও শোক প্রকাশ করেছি।[12]
এ হাদীস থেকে বুঝা যায় ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু পর্দাবৃত ছিলেন।নয়তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চিনার ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরাম দ্বিধাগ্রস্ত হতেন না।
১০. উম্মে খাল্লাদ নামের এক মহিলা সাহাবী তার সদ্য শাহাদাতবরণকারী সন্তান সম্পর্কে জানার জন্য রসূলের দরবারে এলেন। তার চেহারা নেকাবে ঢাকা ছিল। এক সাহাবী তাকে বললেন, তুমি তোমার শাহাদাতবরণকারী সন্তান সম্পর্কে জানতে এসেছ, (আর এমন শোকের মূহূর্তেও) তোমার চেহারা নেকাবে ঢাকা! তখন সাহাবিয়্যা উত্তরে বললেন, ‘‘সন্তান হারিয়েছি, লজ্জা হারাইনি’’।[13]
১১। ফাতিমা বিনতুল মুনযির রাহ. বলেন, ‘আমরা আসমা বিনতে আবু বকর রা.-এর সাথে ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে আমাদের মুখমন্ডল ঢেকে রাখতাম।’[14]
১২. হযরত আয়েশা রা. ইফ্কের দীর্ঘ হাদীসে বলেছেন-‘আমি আমার স্থানে বসে ছিলাম। একসময় আমি ঘুমিয়ে পড়ি। সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল আসসুলামী ছিল বাহিনীর পিছনে। সে যখন এখানে পৌঁছল তখন একজন ঘুমন্ত মানুষের আকৃতি দেখতে পেল। এরপর সে আমার নিকট এলে আমাকে চিনে ফেলল। কারণ পর্দা বিধান অবতীর্ণ হওয়ার আগে সে আমাকে দেখেছিল। তখন সে ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বলে ওঠে, যার দরুণ আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি এবং ওড়না দিয়ে নিজেকে আবৃত করে ফেলি।
অন্য রেওয়ায়েতে আছে, ‘আমি ওড়না দিয়ে আমার চেহারা ঢেকে ফেলি।’[15]
১৩. হযরত সাফিয়্যা বিনতে শাইবা বলেন, ‘‘আমরা আয়েশা রা.-এর কাছে বসা ছিলাম। কুরাইশ গোত্রের নারী এবং তাদের গুণাবলির প্রসঙ্গ আলোচনায় এল। তখন হযরত আয়েশা রা. বললেন, কুরাইশ বংশের নারীদের বিশেষত্ব অবশ্যই আছে, তবে আমি আনসারী নারীদের চেয়ে কিতাবুল্লাহ্র প্রতি অধিক বিশ্বাসী ও আস্থাশীল আর কাউকে দেখিনি। যখন সূরা নূরের এই আয়াত অবতীর্ণ হল-
وليضربن بخمرهن على جيوبهن
‘এবং তারা যেন তাদের বক্ষদেশে ওড়না জড়িয়ে রাখে’
তখন তাঁদের পুরুষগণ নিজ-নিজ ঘর বাড়িতে তাদের স্ত্রী, কন্যা ও বোনদের গিয়ে এই আয়াত শোনালেন আর অমনি তারা বড় বড় চাদর দিয়ে নিজেদেরকে সম্পূর্ণরূপে আবৃত করে ফেলল। এটা ছিল আল্লাহ্র কিতাবের প্রতি তাদের নিষ্কম্প বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ।
কিতাবুল্লাহর প্রতি আনসারী সাহাবিয়াগণের এই একনিষ্ঠ আনুগত্যের বর্ণনা দেওয়ার পর ড. মুহাম্মাদ আলী আলহাশেমী বলেন, এবার আমি দামেস্ক ইউনিভার্সিটির একজন মুসলিম পর্দানশীন তরুণীর কথা বলব, যার অন্তরের অবিচল আনুগত্যও সেই মহান আনসারী সাহাবিয়াগণের সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ। তাকে একজন অতিথি সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিল, ‘‘এই প্রচন্ড গ্রীষ্মের গরমে আপনি কীভাবে বোরকাবৃত থাকেন? আপনার কি গরম লাগে না? তরুণীটি এর উত্তরে কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করলেন-
قل نار جهنم أشد حرا
‘বলে দিন, জাহান্নামের আগুন এরচেয়ে অনেক বেশি উত্তপ্ত।’
নিঃসন্দেহে এমন পবিত্রাত্মা মুসলিম নারীর মাধ্যমেই মুসলিম ঘরসমূহ আবাদ হয়, নতুন প্রজন্ম গড়ে ওঠে পবিত্র বৈশিষ্ট্যাদি নিয়ে এবং এদের মাধ্যমেই মুসলিমসমাজে জন্ম নেয় সমাজসংস্কারক কর্মবীর সন্তানেরা।”[16]
১৪। আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রাহ. বলেন-‘সঠিকতর সিদ্ধান্ত এই যে, নারীর জন্য পরপুরুষের সামনে দুই হাত, দুই পা ও মুখমন্ডল খোলা রাখার অবকাশ নেই।’[17]
ইবনু তাইমিয়াকে সবাই এক নামে শাইখুল ইসলাম বলে।শাইখুল ইসলাম হলো ইসলামের শাইখ ।মানে যিনি দ্বীনের সকল বিষয়ে জ্ঞান রাখেন।
১৫। ইবনুল কাইয়িম রাহ. বলেন, ‘নারী নামায আদায়ের সময় দুই হাত ও মুখমন্ডল খোলা রাখতে পারেন, কিন্তু এভাবে বাজারে ও লোকের সমাগমস্থলে যাওয়ার অবকাশ নেই।’[18]
ইবনুল কাইয়্যিম হল ইবনে তাইমিয়্যার ছাত্র।ইবনু তাইমিয়া এবং ইবনুল কাইয়্যিম উভয়ের ফাতওয়াই সালাফী ভাইরা গ্রহণ করেন।
১৬। শাইখুল ইসলাম হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী রহিমাহুল্লাহ বলেন, “ প্রাচীন ও বর্তমান কালের নারীরা সর্বদাই পরপুরুষের সামনে চেহারা ঢেকে আসছে। ”[19]
১৭। ইমাম গাজালী রহিমাহুল্লাহ বলেন, “ যুগ যুগ ধরেই পুরুষেরা তাদের চেহারা খোলা রাখতো আর নারীরা মুখে নেকাব পরে বাইরে বের হতো। ”[20]
১৮। যারা ফিকহের কিতাবের দলীল দিয়ে প্রমাণ করতে চায় মুখমন্ডল পর্দার অন্তর্ভুক্ত না,তাদের বিপক্ষে ফিকহ থেকেই ফাতওয়া।
❒ হানাফী ফিকহের অভিমত হলো,নারীদের জন্য পরপুরুষের সামনে মুখমন্ডল খোলা রাখা যায়েজ নেই।ফুকাহায়ে আহনাফের কয়েকটি অভিমত নিম্নরুপ।
শামছুল আয়িম্মাহ সারখাসী রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “বেগানা নারীদের দেখা হারাম হওয়ার কারণ হলো,তাদের দেখলে পুরুষের মনে ফেতনার উদ্রেক হয়।চেহারা ও তার রুপ-লাবন্য দেখা দেহের অপরাপর অঙ্গ দেখা থেকে অধিকতর ফেতনার কারণ হয়ে থাকে।”[21]
ইমাম আলাউদ্দিন রহিমাহুল্লাহর অভিমত হলো , “যুবতী নারীদের মুখাবয়ব অনাবৃত রেখে পরপুরুষের সামনে যেতে নিষেধ করা হবে। ”
ইবনে আবিদিন রহিমাহুল্লাহ বলেন, “ নারীদের জন্য খোলা মুখে পরপুরুষের সামনে যেতে বারণ করার কারণ হলো,পুরুষেরা তাদের দিকে কামনার চোখে তাকাতে পারে,পরিণামে যা মহা ফেতনার ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়াবে।”[22]
ওলামায়ে আহনাফ থেকে এ ফাতওয়া পাওয়া যায় , “ইহরাম অবস্থায় কোন নারী গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে এসে গেলে নারীদের জন্য চেহারার পর্দা করা ফরজ। ”[23]
এ ফাতওয়া থেকে সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে ইহরামবিহীন অবস্থায় মুখ ঢাকা ফরজ।
ঈমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন, “যুবতী নারীরা পরপুরুষের সামনে খোলা মুখে যেতে পারবে না। ”
মুফতি শফি রহিমাহুল্লাহ বলেন , “ সব মাযহাবের ফকীহগণ এবং অধিকাংশ উম্মাতে মুহাম্মদী এ কথার উপর একমত যে, যুবতী নারীরা পরপুরুষের সামনে চেহারা ও হস্তদ্বয় অবমুক্ত রেখে গমন করা যায়েজ নেই।”[24]
❒ মালেকী উলামায়ে কিরামের অভিমত। মালেকী মাযহাবের ফকিহদের মতে নারীদের জন্য পরপুরুষের সামনে চেহারা খোলা রাখা যায়েজ নেই। কারণ খোলা চেহারাই হলো ফিতনা-ফাসাদের সুতিকাগার।
মালেকী মাযহাবের অন্যতম দুজন ফকীহ-কাযি আবু বকর ইবনুল আরাবী এবং ঈমাম কুরতুবী রহিমাহুল্লাহ বলেন, “ কেবল অতিশয় প্রয়োজনের সময়ই নারীদের জন্য চেহারা খোলা রাখা যায়েজ আছে।আর সেই অতিশয় প্রয়োজনটি এরুপ হতে পারে যে, তার বিরুদ্ধে কোন মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাকে চেহারা খুলে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে হবে।কিংবা অসুস্থতার জন্য ডাক্তারের সামনে মুখাবয়ব খুলতে হবে। ”[25]
ইবনে আব্দুল বার রহিমাহুল্লাহ বলেন, “ ফিতনা ফাসাদের যুগে নারীদের চেহারা ঢেকে রাখা ফরজ। ”
❒ শাফেয়ী উলামায়ে কিরামের অভিমত।শাফেয়ী উলামায়ে কিরামের অভিমত হলো ফিতনার আশংকা থাকুক বা না থাকুক নারীদের জন্য পরপুরুষের সামনে চেহারা খোলা রাখা যায়েজ নেই।
শাফেঈ মাযহাবের ফকীহদের মধ্যে অন্যতম ইমাম হারামাইন জুওয়াইনি বলেন, “নারীদের জন্য চেহারা খোলা রেখে ঘরের বাইরে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞার ব্যপারে সমস্ত মুসলমানের মতৈক্য আছে।কারণ দৃষ্টিই ফিতনার প্রধান উৎস।[26]
ইবনে রাসলান আশ-শাফেয়ী রহিমাহুল্লাহ বলেন, “মুসলিম নারীদেরকে মুখ খোলা রেখে বাইরে বেরুতে নিষেধ করা হবে,বিশেষ করে যখন সমাজে অসৎ লোকের আধিক্য থাকে। [27]
ইমাম হযরত মাওয়াযেঈ বলেন, “আবহমান ধরে মুসলিম সমাজের চলে আসা রীতি হলো , তারা বৃদ্ধা নারীদেরকে চেহারা খোলা রাখার অনুমতি দিয়ে থাকেন।কিন্তু যুবতী নারীদেরকে এরুপ করতে দেয় না।তারা এটাকে ভালো মনে করে না।সম্ভবত নারীর জন্যই অপ্রয়োজনে চেহারা খোলা রাখার বৈধতা নেই।এবং কোন যুবকের জন্যও তার দিকে তাকানো দুরস্ত রাখা হয়নি।[28]
ইমাম নববী রহিমাহুল্লাও একই বক্তব্য দিয়েছেন।
❒ হাম্বলী উলামায়ে কিরামের অভিমত।হাম্বলী উলামায়ে কিরামের অভিমত এই যে, নারীদের জন্য পরপুরুষের সামনে চেহারা খোলা রাখা যায়েজ নয়।
এ ব্যাপারে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, “ নারীরা ঘর থেকে বের হওয়ার সময় তাদের শরীরের কোন অংশই যেন পরিদৃষ্ট না হয়।[29]
১৯. মুখমন্ডল ঢাকার ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের আলিমদের অভিমত
☐ ইয়েমেনের আলেম আল্লামা আমীর সানআনী তার রচিত কিতাবে নারীর চেহারা খোলা রাখার পক্ষে মত দানকারী আলেমদের প্র্যাখ্যান করেছেন।
☐ পাকিস্থানের আলেম আল্লামা মওদূদী পর্দা নামক বইতে যে আলোচন এনেছেন,তার সারাংশ হলো এই যে মুখমন্ডল ঢেকে রাখতে হবে।
☐ সিরিয়ার আলেম শাইখ মুহাম্মস আলী সাবুনীও মুখমন্ডল ঢাকার পক্ষে ফাতওয়া দিয়েছেন।
☐ আলজেরিয়ার আলেম শাইখ আবু বকর আল জাজায়েরী তার রচিত এক কিতাবে চেহারার পর্দার আবশ্যিকতার ব্যাপারে প্রমাণাদি পেশ করার পর বিরোধী পক্ষের আপত্তিসমূহের জবাব দিয়েছেন।
☐ মুরতানিয়াহর আলেম আল্লামা মুহাম্মদ আমীন শানকিতি তার রচিত তাফসীর গ্রন্থে সুদৃঢ় দলীলের ভিত্তিতে প্রমাণ করেছেন যে,নারীদের জন্য মুখমন্ডল ঢাকা ফরজ।
☐ তিউনিসিয়ার আলেম শাইখ মুহাম্মদ ইউসুফ কাফিও মুখমন্ডল ঢাকার ব্যাপারে একমত ছিলেন।
☐ সিন্দের আলেম মাওলানা আব্দুল কাদের হাবীবুল্লাহ সিন্দী পর্দা বিষয়ে দুটি কিতাব লিখেছেন।উভয়টিতেই তিনি চেহারার পর্দার আবশ্যিকতার বিষয়টি সপ্রমাণ উল্লেখ করেছেন।
☐ শাইখ মুস্তফা সবরী তার রচিত এক কিতাবে নারীদের চেহারা উন্মুক্ত রাখার পক্ষে মত দানকারীদের বক্তব্যের অসারতা প্রমাণ করেছেন।ইনি তুরষ্কের প্রধান মুফতি ছিলেন।
☐ নাইজেরিয়ার আলেম শাইখ আব্দুর রশীদ বিন মুহম্মদ সখি চেহারা খোলার ব্যাপারে যে অল্পসংখ্যক মত দেয় তাদের মত প্রত্যাখান করেছেন।এবং ঢেকে রাখার ব্যাপারে আবশ্যিকতার বিধান বর্ণনা করেছেন।
☐ মিসরের আলিমা ইয়াসরিয়া মুহাম্মদ আনওয়ার তার রচিত এক কিতাবে বলেন , “ ইসলাম যেহেতু নারীদের চরণ ঢেকে রাখার আদেশ দিয়েছে এবং জমিনে সজোরে পা ফেলে চলতে নিষেধ করেছেন যেন পায়েলের ঝনঝনানি না শোনা যায়।তাহলে চেহারা ঢেকে রাখার হুকুম তো আরও অগ্রগামী।কারণ, চেহারাই তো রুপ-সৌন্দর্য প্রকাশের কেন্দ্রবিন্দু।
☐ মরোক্কোর বিখ্যাত আলেম শাইখ মুহাম্মদ যমযমী বিন সিদ্দীকও মুখ ঢাকাকে ফরজ বলেছেন।
☐ সিরিয়ার আলেম ডক্টর সাঈদ রমযান বূতী বলেন, “ এ ব্যাপারে সব মাযহাবের ইমামগন ঐক্যমতে পৌঁছেছেন যে,যদি ফেতনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়ার ভয় হয় এবং পুরুষেরা কামুক দৃষ্টিতে নারীদের দিকে তাকায়,তাহলে নারীদের জন্য চেহারার পর্দা করা ফরজ।বর্তমানে কে বলতে পারবে যে, নারীদের পক্ষ থেকে ফিতনা-ফাসাদ ছড়াচ্ছে না এবং পুরুষরা কু-বাসনা নিয়ে তাকাচ্ছে না।
☐ ভারতের একজন বিখ্যাত আলেম মাওলানা সফিউর রহমান মোবারকপুরী ।যেসকল আলেম নারীদের চেহারা খোলা রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন তাদের জবাবে মাওলানা সফিউর রহমান মোবারকপুরী একটি কিতাব লিখেছেন।যার ১০ নং পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেনঃপর্দার বিধান অবতীর্ণের মূল হেকমতের দাবি সর্বাঙ্গ ঢেকে রাখা।বিশেষ করে চেহারা।কেননা চেহারাই নারীর মুগ্ধ করার রুপ-সৌন্দর্য প্রকাশের কেন্দ্রস্থল।
এছাড়াও বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত আলেমগণ মুখ আবশ্যকভাবে ঢাকার ব্যাপারে ফাতোয়া দিয়েছেন,সমর্থন করেছেন।যারা চেহারা খোলার পক্ষে বলে তাদের বিরুদ্ধে সমুচিত জবাব দিয়ে তা অসার প্রমাণ করেছেন।
২০. শায়খ ইবনে বায রাহ.(মৃত্যুঃ১৯৯৯), শায়খ ইবনে উছাইমীন(মৃত্যুঃ২০০১) ও শায়খ ইবনে জিবরীনও একই ফতোয়া দিয়েছেন। এবং সালেহ আল মুনাজ্জিদ হাফিজাহুল্লাহও একই ফতোয়া দিয়েছেন(জীবিত)।এবং শাইখ আব্দুল আজিজ আত তারিফিও(জীবিত) একই ফতোয়া দিয়েছেন।[30]
ইনারা হলেন আরবের সমসাময়িক আরবের বিখ্যাত আলেমগন।যাদের ফাতওয়া আজও সকল স্থানে চলছে।জাকির নায়েককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আরবের সমসাময়িক আলেমদের মধ্যে আপনি কাদেরকে প্রেফার করেন?উনি ৪/৫ জন আলিমের নাম বলেছিলেন তাদের মধ্যে শাইখ সালেহ আল মুনাজ্জিদ ও আব্দুল আজিজ আত তারিফি হাফিজাহুমুল্লাহও রয়েছেন।
২১ । চৌদ্দশত হিজরী থেকে খিলাফাত ব্যবস্থা থাকা পর্যন্ত নারীরা পর্দা করে বের হতো,এমনকি খেলাফতের পরও এ আমল জারি ছিল।কিন্তু কিছুকাল পরই তুর্কিস্থান,সিরিয়া,ইরাক হয়ে অন্যান ইসলামী দেশে মুখ খোলার ফিতনা শুরু হয়। প্রথমদিকে ছিল কেবল চেহারা খোলা,এরপর আকর্ষনীয় পোষাক,অতঃপর পুরো শরীরেরই কাপড় হ্রাস পেতে লাগলো।
২২ । বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ শাইখদের মধ্যে শাইখ আহমাদুল্লাহ হাফিজাহুল্লাহ বলেন, “ পর্দার ক্ষেত্রে মুতাকাদ্দিমিনরা মুখমন্ডলকে পর্দার অন্তর্ভুক্ত মনে করতেন না।(যদিও তার এ বক্তব্য ভূল,মুতাকাদ্দিমিনদের সর্বোচ্চ সারি অর্থাৎ সাহাবারাই মুখমণ্ডলকে পর্দার অন্তর্ভুক্ত মনে করতেন,তাবেয়ীরাও তাই মনে করতেন।)এর মানে হল চেহারায় নিকাব না পড়ে জিলবাব উপর থেকে নিচের দিকে টেনে দিতে হবে।এটি কুরআনের আদেশ এবং ফরজ বিধান।কেউ যদি জিলবাব টেনে নেইয় তাহলে আর তার চেহারা দেখা যাবে না।আজকাল চেহারা না ঢেকে যা করা হয় সেটা আসলে প্রদর্শন ,যা কুরআনে সুস্পষ্টভাবে হারাম বলা হয়েছে।আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, “وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। ”
২৩ . শাইখ আহমাদুল্লাহর উস্তায শাইখ ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর স্যার বলেছেন, “ মুখ ঢাকার ব্যাপারে হাদীসে সামান্য কিছু মতভেদ রয়েছে।কিন্তু কুরআনের আয়াত থেকে সুস্পষ্ট বুঝা যায় মুখ ঢাকা ফরজ।আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা’আলা বলেন, “
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ
“হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীদের, আপনার কন্যাদের ও মুমিনদের নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের জিলবাবের একাংশ নিজেদের (মুখের) উপর নামিয়ে দেয়।”[31]
আয়াত থেকে সুস্পষ্ট বুঝা যায় আল্লাহ বলেছেন মুখের উপর জিলবাব টেনে নিতে।জিলবাব টেনে নেওয়ার অর্থই হলো মুখ ঢেকে নেওয়া।কিন্তু কেউ যদি মুখ খোলা রাখে তবে তাকে আমরা তার সাথে তুলনা করবো না,যে ন্যাংটা চলাচল করে।কিন্তু আপনারা দ্বীন পালন করতে চান তারা অবশ্যই মুখ ঢেকে রাখবেন।এবং যারা মুখ খোলা রেখে চলাচল করে তাদের বুঝাবেন।
২৪. দেলওয়ার হোসেন সাঈদি বলেন, “ ইচ্ছা করে মুখ খোলা রাখা যায়েজ নেই,যদি অনিচ্ছায় প্রদর্শন হয়ে যায় তাহলে ভিন্ন কথা। উদাহরণঃ বাতাসে যদি মুখ থেকে নেকাব সরে যাইয় তাহলে গুনাহ হবে না,কিন্তু ইচ্ছাকৃত খোলা রাখলে অবশ্যই গুনাহ হবে।চেহারাই হলো মানবদেহের সবচেয়ে আকর্ষনীয় অঙ্গ।যদি সেই চেহারাই খোলা থাকে তবে ফিতনা,বিপর্যয়,বিপদ ইত্যাদি হবে।তাই চেহারা ঢেকে রাখতে হবে। ”
২৫। আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যাকে তুমি বিবাহের প্রস্তাব দিবে তাকে তুমি দেখতে পার।তো কি দেখার কথা বলেছেন রাসূল?শুধুই মুখ আর হাত।তার মানে বিবাহের বাহিরে যে আছে তার আপনি কি দেখতে পাবেন না?উত্তর হলো কিছুই না। তাহলে অবশ্যই চেহারা পর্দার অন্তর্ভুক্ত ।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন একজন বৃদ্ধ মহিলার পর্দার প্রয়োজন নেই।এর মানে তিনি সম্পূর্ণ উলঙ্গ থাকবেন?না বরং তার চেহারা হাত,মুখ এগুলো খোলা রাখতে পারবে।
২৬। দেওবন্দের উলামায়ে কিরামও এ ব্যপারে একমত যে চেহারা ঢেকে রাখা ফরজ।
২৭। জাকির নায়েক ব্যক্তিগত ভাবে তার মতে সে বলেছে চেহারা ঢাকা ফরজ নয়।তিনি যার মত অনুসারে এ কথা বলেছেন তিনি হলেন শাইখ আলবানী।অথচ শাইখ আলবানির সমসাময়িক আরবের আলেমরাই তার এই ফাতওয়ার বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছিলেন।শাইখ আলবানি ফকিহ নন এবং জাকির নায়েকও ফকিহ নন । জাকির নায়েক নিজ মুখে স্বীকার করেছেন তিনি আরবি জানেন না এবং তিনি মুফতিও নন।যিনি মুফতি নন তাকে ফতোয়া দেয়ার বিধান শরীয়ত দেয়নি।তার জন্য ফাতওয়া দেয়া নাজায়িজ।আর যিনি আরবি জানেন না তিনি কি করে ফিকহ বুঝবেন?ফিকহ বুঝার জন্য আরবি জানা আবশ্যক।জাকির নায়েক তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের উপর একজন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি।তার এই ফাতওয়ার বিপক্ষে বহু উলামায়ে কিরাম বলেছেন যে এটা সুস্পষ্ট ভূল।তবে ইসলামের জন্য তার যে বিশাল খেদমত রয়েছে এই সামান্য ভুলত্রুটি দিয়ে তা ঢেকে দেয়া যায় না।
২৮। উপরের আলোচনা থেকে এ বিষয় সুস্পষ্ট যে মুখমন্ডল পর্দার অন্তর্ভূক্ত। তর্কের খাতিরে মেনে নেয়া যায় ইখতেলাফ ছিল ।কিন্তু ইখতেলাফি মাস’আলা গ্রহণের ক্ষেত্রেও তো কিছু নীতিমালা রয়েছে।যে বিষয়ে দলীল শক্তিশালী তাই মেনে নিতে হবে। এ ব্যপারে সবাই একমত যে মুখ ঢেকে রাখার দলীলই অধিক শক্তিশালী।তাই এটিই গ্রহণ করতে হবে।শরীয়তে নিজের মন মতো মানলে তা আর শরীয়ত থাকে না বরং হয় নফসের খাহেশাত।ইখতেলাফি মাস’আলাগুলোর যেকোন একটি গ্রহণ আবশ্যক।একেকবার একেকটা গ্রহণ করা আবার বদলানো এমনটা যায়েজ নেই।
২৯। মুতাকাদ্দিমিনের যুগে এ ইখতেলাফ ছিল।তবে মু’আখখিরিন যারা আছেন তারা প্রায় সবাই এ ব্যপারে একমত যে পর্দার ক্ষেত্রে মুখমন্ডল ঢাকা ফরজ।ফতোয়া দেয়া হবে যুগের বিবেচনায়।মুতাকাদ্দিমিনের যুগে এ পরিমান ফিতনা দেখা দেয়নি যার কারণে মুখ ঢেকে রাখা আবশ্যক হয়।মুতাকাদ্দিমিনের যুগে খিলাফাহ ছিল।একজন নারীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হতো। তবে ফিতনা দেখা না দিলেও অধিকাংশ মুতাকাদ্দিমিনই মুখ ঢেকে রাখার পক্ষেই ফতোয়া দিয়েছেন,এবং অধিকাংশ নারীরাই এ কথার উপরেই আমল করেছেন।কিন্তু মু’আখখিরিন এ ব্যপারে একমত যে বর্তমান যুগের বিবেচনায় প্রত্যেক নারীর জন্য মুখ ঢাকা আবশ্যক।কেননা এখন খিলাফাহ ব্যবস্থা নেই,কোন নারীর নিরাপত্তার কোন নিশ্চয়তা নেই,রয়েছে ফিতনার প্রবল আশংকা।তাই এখন আর এ নিয়ে ইখতেলাফের কোন সুযোগ নেই।জুমহুর এর মত হলো মুখ ঢাকা ফরজ।
৩০। সালাফদের যুগে মুখ খোলা রেখে বাইরে বের হওয়া নারী সংখ্যা ছিল খুবই নগন্য তাই এ ব্যাপারে ফতোয়া দেয়ারও প্রয়োজন পড়েনি।অপরদিকে এ যুগে ব্যাপক তাই মুআ’খখিরিনরা বিশেষভাবে হারাম ফতোয়া দিয়েছেন।
উপরের আলোচনা থেকে এ বিষয় স্পষ্ট হয় সারা শরীরের মতো মুখমন্ডলও পর্দার অন্তর্ভুক্ত। তাই তা ঢেকে রাখতে হবে এবং এই ফিতনার যুগে এটিকে দৃড়ভাবে আঁকড়ে ধরতে হবে।
.
[1] সূরা আহযাব : ৫৯
[2] সূরা আহযাব আয়াত নং ৫৩
[3] আলজামি লিআহকামিল কুরআন, কুরতুবী ১৪/২৪৩
[4] তাফসীরে ইবনে কাসীর,সূরা আহযাবের ৫৯ নং আয়াতের তাফসীর
[5] জামিউল বায়ান, তাবারী ১০/৩৩২; তাফসীরুল কুরআনিল আযীম, ইবনে কাছীর ৩/৮২৫
[6] আহকামুল কুরআন, জাসসাস ৩/৩৭২; আরো দেখুন : আলকাশশাফ, যামাখশারী ৩/৩৭৪; তাফসীরে বায়যাবী ২/২৮০; তাফসীরে জালালাইন ৫৬০; তাফসীরে গারাইবুল কুরআন ওয়া রাগাইবুল ফুরকান ৫/৪৭৬; আযওয়াউল বয়ান, মুহাম্মাদ আলআমীন আশশানকীতী ৬/৫৮৬
[7] সহীহ বুখারী ৪/৬৩, হাদীস : ১৮৩৮
[8] মুসনাদে আহমদ ৬/৩০; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১৮৩৩; সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস : ১৭৫৭
[9] আলমুসতাদরাক, হাকিম ১/৪৫৪
[10] সুনানে আবু দাউদ,হাদীস নং ৪১০১
[11] কানযুল উম্মাল,হাদীস নং ৪৫৬১৯
[12] আল মুসতাদরাকে হাকেম, ১/৩৭৪
[13] সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৪৮৮
[14] আলমুয়াত্তা, ইমাম মালেক ১/৩২৮; আলমুসতাদরাক, হাকিম ১/৪৫৪
[15] সহীহ বুখারী ৫/৩২০; সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৭৭০; জামে তিরমিযী, হাদীস : ৩১৭৯
[16] শাখসিয়্যাতুল মারআতিল মুসলিমা ৫১-৫২
[17] মাজমুউল ফাতাওয়া ২২/১১৪
[18] ই’লামুল মুয়াক্কিয়ীন ২/৪৭
[19] ফাতহুল বারীঃ ৯/৩৩৭
[20] ফাতহুল বারীঃ ৯/৩৩৭
[21] আল মাসবূত,১০/১৫২
[22] হাশিয়ায়ে ইবনে আবিদিন, ২/৪৮৮
[23] হাশিয়ায়ে ইবনে আবিদিন, ২/৫২৫
[24] আল মারআতুল মুসলিমাহ,পৃষ্ঠা নং ২০২
[25] আহকামুল কুরআন, ৩/১৫৭৮
[26] রওজাতুত তালিবিন,৭/২৪
[27] আউনুল মাবুদঃ ১১/১৬২
[28] তাইসিরুল কুরআন লি আহকামিল কুরআনঃ ২/১০০১
[29] আল ফুরুঃ ১/৬০১
[30] রিসালাতুন ফিলহিজাবি ওয়াসসুফূর, পৃ.১৯; ফাতাওয়া উলামাইল বালাদিল হারাম পৃ. ১১৬৯