Vul Vabna ভুল_ভাবনা (দ্বিতীয় পর্ব) (সত্য ঘটনা অবলম্বনে) Amar Prem Tumi | New Natok | Apurba | Tanjin Tisha | Telefilm | Eagle Premier Station

ভুল_ভাবনা (দ্বিতীয় পর্ব)

(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

আমার যখন ৫ মাসের গর্ভ, তখন হঠাৎ একদিন উনার চেহারা দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম।
কারণ, তিনি সম্পূর্ণ দাঁড়ি কেটে ফেলেছেন।কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করলাম, কেন এভাবে দাঁড়িগুলো কেটে ফেললেন?উনার জবাব ছিল, "দাঁড়ি রাখার জন্য বয়স চলে যাচ্ছে না-কি? বুড়ো হলে ওসব রাখা যাবে।এখন দাঁড়ি রেখে সৌন্দর্য নষ্ট করার কোনো মানে হয় না।"
আমি বুঝাতে পারব না,আমার মনের অবস্থা তখন কেমন ছিল।উনার পরিবর্তন আমাকে বেশ আহত করল।কিন্তু, এতে আমার শ্বাশুড়ি খুব খুশী।

তিনি এখন সুযোগ পেয়ে ইচ্ছেমত আমাকে মানসিকভাবে টর্চার করতে লাগলেন।আমাকে নামাজ পড়তে দেখলে নানান কথায় ব্যঙ্গ করতেন।পর্দা করলে জঙ্গি,ভূত,খ্যাঁত আরো অনেককিছু বলতেন।
উনার কথাগুলো আমার গায়ে কাঁটার মত বিঁধত।
অবাক হতাম তাদেরকে দেখে, এরাও কি মুসলিম?
আমি কখনোই এসবে অভ্যস্থ ছিলাম না।তাই খুব ভেঙ্গে পড়লাম।লজ্জায় আমার পরিবারকেও বলতে পারি নি।

যে মানুষ আমাকে হিজাব পরতে দেখে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল, আজ সেও আমাকে বলে আমি না-কি খ্যাঁত।কোনো স্মার্টনেস আমার মধ্যে নেই।তারপর এসব নামাজ পড়ার কী দরকার? বয়স চলে যাচ্ছে না-কি? এখন তো ফূর্তি করার সময়।বুড়ো হলে নামাজ পড়া যাবে।
আমি ভাবলাম, হয়তো সন্তানের মুখ দেখে একটু শুধরাবেন।কষ্টগুলো মনের মধ্যে রেখে আমার অনাগত সন্তানের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।

আমার পুরো প্রেগনেন্সির সময়ে সবাই মিলে আমাকে মানসিকভাবে অনেক আঘাত করেছে।সারাক্ষণ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। আমি জানতাম না, আমার অপরাধ কী?
আমার শাশুড়ী কখনোই আমাকে ভালোকিছু খেতে দেন নি।শ্বশুর লুকিয়ে আমার জন্য ফল ও পুষ্টিকর খাবার আনতেন।কিন্তু,সেসব আমি পেতাম না।
সারাদিন-রাত একা সব কাজ করেও শাশুড়ীর মন পাই নি।

একদিন রাগে-দুঃখে বলে ফেলেছিলাম, "আপনি কেন আমার সাথে এমন করেন?আমার অপরাধ কী?"
উনি বললেন, "তুই আমাদের ছেলেকে বশ করে বিয়েটা করেছিস।তুই এ বাড়ির পূত্রবধু হওয়ার যোগ্য না।"
অনেক কষ্টে হেসে বললাম, "আপনার ছেলেই তো আমাকে ভালো কথা বলে বিয়েটা করল।আমি কখনোই ভাবি নি, এমন হবে।আজ যা খুশী তা আপনারা আমার সাথে করেন।যে আমাকে পছন্দ করে বিয়ে করল,সেও আমার সাথে বাজে ব্যবহার করে।দোষ আমার নয়।আপনার ছেলেকে বলুন,কেন সে আমার সাথে এমন করল?"

"বেয়াদব মেয়ে!মুখে মুখে তর্ক?এ বলে সেদিন আমার গালে তিনি দুটি থাপ্পড় মেরেছিলেন।"
রাতে আমার স্বামী বাসায় আসার পর বিচার দিলেন, "তোর বউ আমার কথা শুনে না।সারাক্ষণ তর্ক করে।"
ঐ রাতে প্রথম তিনি আমার গায়ে হাত তুলেন।আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।
কোনো রকমে নিজেকে সামলাই।

আমার গর্ভে উনার সন্তান,এটা জেনেও কীভাবে গায়ে হাত তুলতে পারলেন?আমার কথা না-ই ভাবুন, সন্তানের কথা তো ভাবতে পারতেন?
মাথাটা ঝিম ধরে রইল।একের পর এক ভাবনা উঁকি দিতে লাগল।একটা মানুষ কীভাবে এত দ্রুত বদলে যেতে পারে?
আচ্ছা!আমার ভাবনা কি ভুল ছিল?আমার চাওয়া কি অকল্পনীয় ছিল?একটি সুন্দর মনোভাব নিয়েই তো এ জীবনে এগিয়েছিলাম।তবে কেন রঙিন জীবন আজ ধূসরে ঢেকে গেল?সবকিছু কি আগের মত হবে?আমি কি পারব এ লড়াইয়ে জিততে?

সারারাত এসব নিয়ে কান্নাকাটি করে কাটিয়ে দিলাম।
আমাকে এর শেষটা দেখতে হবে।আমার সন্তানের জন্য হলেও সুস্থ থাকতে হবে।এখানে থাকলে মরে যাব।তাই বাবার বাড়িতে চলে আসলাম।

তারপর অপেক্ষা শেষে আমি এক ফুটফুটে কন্যা সন্তানের মা হই।
আমার মেয়ের জন্মের পর কিছুটা হলেও তিনি পরিবর্তন হলেন।যখন-তখন আর অহেতুক রাগারাগি করতেন না।দীর্ঘ ৯ মাস আমার যত্ন না নিলেও এখন কীভাবে জানি আমার যত্ন নেওয়া শুরু করলেন।
আমিও তা দেখে ক্ষমা করে দিলাম।যাক!মানুষটা অন্তত এখন আমার যত্ন নিচ্ছে।
আমার মেয়ে ছিল শ্বশুর-শ্বাশুড়ী ও ননদ সবার নয়নের মণি ।তার দিকটা ভেবে সবাই আমাকে কিছুটা যন্ত্রণা দেওয়া বন্ধ করল।

শ্বাশুড়িও আমাকে মানসিকভাবে টর্চার করা বন্ধ করলেন।আমার মেয়েটাকে সারাক্ষণ উনিই দেখে রাখতেন।অনেক ভালোবাসতেন।
আমি শত লাঞ্ছণার মধ্যে একটু আশার আলো দেখলাম।এবার বুঝি সবাই বুঝবে।একটু শুধরাবে।
কিন্তু, কে জানত এখানেই সব শেষ নয়?

একদিন জানতে পারলাম, আমার স্বামীর প্রায় অনেকগুলো মেয়ের সাথে সম্পর্ক।দীর্ঘরাত ধরে চ্যাট, অফিস শেষে মেয়ে কলিগ নিয়ে ঘুরাঘুরি। দেরী করে বাসায় ফিরা।
আমার স্বামীর সাথে সম্পর্কটা আগের মত আর হয়ে উঠে নি।মেয়ের জন্য তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলেও সেই আগের মত রাত জেগে বিভিন্ন মেয়ের সাথে চ্যাট করতেন।কোনোদিন আবার বাসায় ফিরতেন না।কোথায় যেতেন,তা না জানলেও বুঝতে বাকি রইল না।স্ত্রী হিসেবে নিজেকে খুব জঘন্য মনে হতে লাগল।অনেক চেষ্টা করেও উনাকে ফিরাতে পারি নি।

নামাজ পড়ে দোয়া করে কান্নাকাটি করতাম।কত-শত দোয়া ছিল,উনি যাতে বদলে যান।কিন্তু, বদলে যাওয়ার কপাল হয়তো উনার ছিল না।

একদিন হঠাৎ উনার মোবাইলে একটা মেয়ের সাথে বেশকিছু আপত্তিকর ছবি দেখতে পাই।আমার তখন দম বন্ধ হয়ে আসছিল।এই পরিস্থিতি যে কতটা শ্বাসরুদ্ধকর তা আমার মত নারীরা বুঝতে পারবে।
এটা নিয়ে জিজ্ঞেস করায়, আমার গায়ে উনি হাত তুলেন।আর বললেন, শীঘ্রই আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবেন।

চলবে -----------------
সংগ্রহীত


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url